বাংলা ব্লগসমুহঃ গাজায় শান্তির কামনায়

“যা হচ্ছে গাজায় তাকে সহ্য করা খুব কঠিন।” লিখছেন ব্লগার অপ্রিয়। এই অল্প কয়েকটি কথায় তিনি ব্যক্ত করেছেন গোটা বাংলা ব্লগদুনিয়া গাজা-ঘটনাবলি সম্পর্কে কি ভাবছেন। রাকিব লিখছেন যে গাজায় যা ঘটছে তা “এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়”।

আহমেদ মুনির লিখছেন:

ফিলিস্তিন জাতিকে ধ্বংস করতে বদ্ধ পরিকর ইসরায়েল এবার আঘাত হেনেছে গাজা উপত্যকায়। স্ব-দেশে পরবাসীতে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনী জনগণ অসহায়ের মত গত সাতদিনের টানা ইসরায়েলি হামলায় তাদের শত শত স্বদেশীর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করছে…তথাকথিত হামাস দমনের নামে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বিশ্বের সবচেয়ে অসম ও সবচেয়ে নৃশংস এই যুদ্ধ।

ফারুক ওয়াসিফের মতে এটি ইজরায়েলের একটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত চক্রান্ত, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে তাদের দেশত্যাগ করতে বাধ্য করার। তিনি লিখছেন:

এবারের হামলার উদ্দেশ্য শুধু হামাস বা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ-আন্দোলন নয়, বরং গোটা ফিলিস্তিনিদের মনোবল এমনভাবে ভেঙে ফেলা যাতে তারা হাঁটু গেড়ে বসে প্রাণভিক্ষা চায়। তাদের সম্পদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ ধ্বংস ঘটিয়ে, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলে তাদের গণহারে দেশত্যাগে বাধ্য করাই আসল লক্ষ্য। তার জন্যই ফিলিস্তিনীদের শহর-গ্রাম অবরুদ্ধ করে তাদের বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও কর্মস্থল অকেজো করা হয়।

এই সংঘর্ষে হামাসের ভুমিকা নিয়েও কথা উঠছে। তাদেরও কি কিছু দোষের ভাগিদার হিসেবে দেখা যেতে পারে? কিছু ব্লগার, প্রত্যক্ষভাবে হামাস এর নীতি, দর্শনের সমর্থন না করলেও তাদের এই ‘ইজরায়েলি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর প্রতি সহানুভুতি রেখেছেন। অপ্রিয় লিখছেন:

আমি হামাসের সমর্থক নই কিন্ত আমি মনে করি ‘রোগ’ টি হামাস নয়, হামাস তার সিম্পটম মাত্র… যে কোন জাতিকে দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ করে রাখলে, সামরিক নিয়ন্ত্রণ এবং মৃত্যুভয়ে সন্ত্রস্ত রাখলে সেখানে কোন না কোন ‘হামাসের’ জন্ম হবেই।

আহমেদ মুনির এই ঘটনাবলির মধ্যে এক করুন পরিহাসের ছবি দেখতে পাওয়ার কথা লিখছেন:

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে ইসরাইল ইতিহাস ভুলে গেছে। নিজেদের উপর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসি হলোকাস্টের স্মৃতি তো তাদের ভুলবার কথা নয়। গণহত্যার মাধ্যমে যে কোনও জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা যায় না, আজকের শক্তিশালী ইসরাইল রাষ্ট্রই তো তার প্রমাণ। সুতরাং ইতিহাস বলে ফিলিস্তিনিরা এমন মৃত্যুর প্রত্যাঘাত দেবেই। এ মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শোনা যাবে গোটা মধ্যপ্রাচ্য এমন কী পৃথিবীব্যাপী। এখন যেটা প্রথমত প্রয়োজন তা হলো শান্তি, কেবলমাত্র শান্তি।

কিছু ব্লগারদের মধ্যে জর্জ বুশ ও তার ‘ইজরায়েল-তোষন’ নীতি নিয়ে একটা চাঁপা অসন্তোষ ও প্রকাশ পায়। তাঁদের মতে, এই নীতিই গাজার এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।সৈকত আলী লিখছেন:

স্বয়ং ইসরাইলে এ হামলা বন্ধ করার জন্য রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছে। তারপরও আমেরিকা এ হামলাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছে। ওসামা-বুশ সব একই পথের পথিক।

গাজা ইস্যুতে আমেরিকার ভুমিকা নিয়ে বিরক্ত সত্যান্বেষী লিখছেন:

‘বিশ্ব বিবেকের কন্ঠস্বর’ বিশ্বঈশ্বর আমেরিকা বলছে এ গণহত্যা জায়েজ। অথচ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ধূয়া তুলে এই ঈশ্বরই সাদ্দামের ইরাক দখল করে নিয়েছে।

আহমেদ মুনিরও মনে করছেন যে আমেরিকাই এই সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। তিনি মনে করেন পরবর্তি মার্কিন সরকার এই গাজা নিয়ে কি নীতি অনুসরন করে সেটাই বলে বাকি দুনিয়াকে বলে দেবে এই মধ্য প্রাচ্য দ্বন্দ সমাধানের প্রতি ওবামা সরকারের কতটা আন্তরিক প্রচেষ্টা আছে। মুনির লিখছেন:

নতুন মার্কিন প্রশাসন যুদ্ধবাজ বুশ প্রশাসনের চেয়ে কতটা ভিন্ন সময়ই সেটা বলে দেবে। ইরাক কিংবা ফিলিস্তিনের দিকে নতুন দৃষ্টিতে তাকাতে না পারলে ওবামার পরিবর্তনের বুলি কথার কথাই থেকে যাবে।

বাংলা ব্লগাররা, গাজায় পীড়িতদের পাশে দাড়াবার জন্য সকলকে উজ্জীবিত হবার জন্য ডাক দিয়েছেন। ব্লগার ত্রিভুজ ফেসবুকে একটি প্রতিবাদ জানানোর গ্রুপ খুলেছেন। ত্রিভুজ তার লেখার মাধ্যমে মানুষের কাছে এই আর্জিও জানাচ্ছেন যে তারা যেন গাজাবাসীদের সমর্থনে সকল ইজরায়েলী দ্রব্য বয়কট করেন।

Exit mobile version