জজিয়া, রাশিয়া: যুদ্ধের ভার্চুয়াল দিক

সমসাময়িক অন্যান্য বিরোধের মতো, জর্জিয়া আর দক্ষিন ওসেটিয়ার যুদ্ধেরও প্রথম থেকে একটি ভার্চুয়াল দিক আছে। নীচে আসল যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে যে যুদ্ধ হচ্ছে তা নিয়ে দুইজন ব্লগারের মতামত দেয়া হলো:

লাইভ জার্নাল (এলজে) ব্যবহারকারী বাসিয়া – কেসেনিয়া বাসিলাশভিলি, মস্কোর রেডিও ইকোর সাংবাদিক আর রাশিয়ান অভিনেতা ওলেগ বাসিলাশভিলির সন্তান তার পরিবারের সূচনা আর রাশিয়া আর পশ্চিমি টেলিভিশন চ্যানেলে উপস্থাপিত যুদ্ধের খবর নিয়ে লিখেছেন:

…যখন আমি শুনি [‘তস্খিনভাল‘ শব্দটি], আমি সব সময় আমার পরিবারের উৎপত্তির কথা চিন্তা করি, অনেক দূরের দেশের কথা – কি বলে তাকে আমি ডাকব? আর আমি কল্পনা করি যে সূর্যের আলোয় মাটি গরম হয়ে উঠছে, একটা গরম [লাভাশ চ্যাপ্টা রুটি] চুলো থেকে বের করা হয়েছে, লাল, উগ্র বাড়িতে তৈরি মদ… আমি চিন্তা করি কি করে আমার বিনম্র পিতামহ জিনিষ গুছিয়ে মস্কোতে চলে এসেছিল, আর কি করে সেখানে সে শিক্ষা গ্রহন করেছিল আর শেষে [যোগাযোগ কলেজের] প্রধান হয়েছিল।

আমি দেখছি [রাশিয়া সরকার নিয়ন্ত্রিত আরটিআর এর ভেস্তি খবর আর চ্যানেল ১ এ প্রচারিত খবর]। মৃত, আহত, শরণার্থী, ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি, মাটির নীচের বেসমেন্টে ফ্যাকাশে বাচ্চা আর বৃদ্ধ লোক।

আমি বিবিসি আর সিএনএন এ দেখছি- মৃত, আহত, শরণার্থী, ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি, মাটির নীচের বেসমেন্টে ফ্যাকাশে বাচ্চা আর বৃদ্ধ লোক।

মৃত্যু আর কষ্ট।

ছবিগুলোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। শুধু [আগেরটা] তস্খিনভাল দেখাচ্ছে, আর [পরেরটা] দেখাচ্ছে গরি, [প্রথমটি] জনসাধারণের হত্যা দেখাচ্ছে ‘দক্ষিণ ওসেটিয়ার উপর জর্জিয়ার আক্রমন’ এর ফল হিসাবে [পরেরটায় দেখা যাচ্ছে] ‘জর্জিয়ার উপর রাশিয়ার আক্রমন'। মনে হচ্ছে যেন টেলিভিশনের চ্যানেলগুলো পরিখায় অবস্থান নিয়েছে আর নিশ্চিতভাবে জানে যে কি ঘটছে। তারা যেন জানে যে কে শত্রু। আমাদের জন্য সেটা জর্জিয়া, তাদের জন্য রাশিয়া। আর সত্যটা কাছাকাছি কোথাও কাছে…

ভালো হতো সিএনএন আর ভেস্তিকে একটা গ্লাসে মিশিয়ে নিলে, এটা দারুন একটা খবরের চ্যানেল হতো, যেখানে যুদ্ধের দুই, তিন চারদিকের মতামত থাকতো।

আমি এখানে আলোচনা করতে চাইনা যে তারা কেন এক পর্যায়ে দিচ্ছিল [দক্ষিন ওসেটিয়ানদের রাশিয়ার পাসপোর্ট], কারা এটা প্রথমে শুরু করেছে, কারা নির্দেশ দিয়েছে, কে দোষী। কে ভালো আর কে খারাপ।

এখন এটার আর কোন মানে নেই। কারন যখন রাজনৈতিক আর তথ্যগত যুদ্ধ চলছে, দক্ষিন ওসেটিয়া আর জর্জিয়াতে মানুষ মারা যাচ্ছে আর ভুগছে।

এই লেখার একটা মন্তব্য এখানে:

হোমো_ লোকুয়েন্স:

কেসেনিয়া, আমাকে দয়া করে বলেন, আপনি কি পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ব্যায় করেছেন সিএনএন আর বিবিসি দেখে? আপনি কি বিবিসির একটা স্বাক্ষাৎকার দেখেননি [রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী] সেরগেই লাভ্রোভের আর সিএনএন একটি স্বাক্ষাৎকার [জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত] ভিতালি চুরকিনের আর এই দুই চ্যানেলে মস্কো থেকে লাইভ রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন আর প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এর অবস্থান নিয়ে? কারন আপনি প্রথম না যাকে আমার স্বাভাবিক আর উৎফুল্য মনে হয়েছে, যে এটা লিখছে, আর আমি ভাবছি যে আমিই কি কল্পনা করছি- নাকি আমার কাছে অন্য কোন বিবিসি আর সিএনএন আছে যা আমি বাড়িতে দেখছি?

এলজে ব্যবহারকারী পেপসিকোল্কা – সামিরা কুজনেটসোভা- যে [পতি] তে থাকে (যার অন্যান্য লেখা গ্লোবাল ভয়েসেসে আছে এখানে আর এখানে) রাশিয়ান ভাষা সোশাল নেটোয়াকিং পোর্টাল ওডনোক্লাস্নিকি.রু ( ক্লাসমেট) নিয়ে কাজ করার সময় তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে এটা লিখেছেন:

ওডনোক্লাস্নিকি.রু সাইটে একটা ভালো, শান্তিপূর্ণ, দয়াবান দল ছিল [পতি শহরের প্রতি নিবেদিত]। তেঙ্গো আর আমি এখানে অনেক ছবি দিতাম, আর অন্যরাও অলস ছিলনা। আমরা পরষ্পর যোগাযোগ করতাম, ঠাট্টা করতাম আর অতীতের স্মৃতি ভাগ করতাম। একদিনও এমন ছিলনা যখন আমি এখানে কিছু লিখিনি।

আমরা আমদের শহরের মাধ্যমে একত্রিত ছিলাম। এখনো কিছু লোক এখানে আছে, অন্যদের জন্য এটা তাদের ছোটবেলার শহর, যেখানে তারা তাদের জীবনের সব থেকে সুখের দিন কাটিয়েছে।

আমার ‘জিনস হাউজের’ তৃতীয় তলার একটা জানালার ছবি তুলতে বেশি ভালো লাগছিল, তথাকথিত পেন্টাগন এলাকা, রাওনি নদীর উপর একটা উইলো গাছ আর আমাদের স্কুলের চত্ত্বরে পুরোনো সুইমিং পুল।

বড়রা ছোটবেলায় সুখী ছিল।

* এখানে এখানে আমি আমার মেয়ে বন্ধুর সাথে হাটতাম।
* আর এখানে আমরা মাছ ধরতে যেতাম।
* আর এই বেঞ্চীতে আমরা লটো খেলতাম।
* ওই যে আমার জানালা, এর সামনে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতাম, মার কাজ থেকে ফেরার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতাম।
* সামিরা, এটার আর ওটার ছবি তোল।
* ওই যে পাইওনিয়ার হাউস আর ২০ বছর আগের সমান ডোবা।

এখন এই ফোরামে যুদ্ধ চলছে। ভুল বোঝাবুঝি, নিন্দা, দোষারোপ, গালাগালির দেয়াল আর লোকে শরণার্থীর মতো এটাকে ত্যাগ করছে। আজকে আমার পরিচিত একজন আমাকে লিখে জানিয়েছে যে সে এই দল ছেড়ে দিচ্ছে। যেন গতকাল এখানে কোন ভালোবাসা আর আকুলতা ছিলনা। আজকে এটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র।

আমার আগের পড়শী চিৎকার করছে যে আমরা ন্যাটোর চাকর। আর এই কারনে সে আমাদের ঘৃণা করে।

আগে সে আমাকে পিয়ানো বাজানো শেখাতো।

Exit mobile version