“তালাক কি এত সহজ একটা কথা হয়ে গেছে?” প্রশ্ন করেছেন সৌদি আরবের ব্লগার ৩আবিরা সাবিল। তার এই লেখায় আলোচনা করা হয়েছে যে আজকালের মেয়েরা তাদের দাদী-নানীদের থেকে কত আলাদা আর কেন তরুন তরুণীদের কাছে সম্পর্কচ্ছেদ এত সহজ একটি বিষয়।
তিনি তার লেখা শুরু করেছেন তার সমাজের অশিক্ষিত দাদীরা কিভাবে সংসার চালাত সেই চিত্র দিয়ে:
আগে একটা মেয়ে তার বাবার বাড়ী ছেড়ে তার স্বামীর বাড়ি যেত আর সেখান থেকে সরাসরি কবরে যেত (যেমন আগে বলা হতো)। মহিলারাও কোন অভিযোগ ছাড়া সংসার চালানোর আর সবার খেয়াল রাখার দায়িত্ব নিত, তা তাদের বাবার বা স্বামীর বাড়িতে হোক না কেন। তার স্বামী বাইরে কাজ করতে গেলে তার বিরহ সহ্য করত, সে তার বাচ্চাদের বাবা মা হিসাবে থাকত, আর যে সব পুরুষ তার উপর নির্ভর করতো তাদের জন্য সে শক্তিশালী মা, বোন বা স্ত্রী হিসাবে থাকতো। সে তার স্বামীর সাথে তার বাড়ী তৈরি করতো, আর প্রতিদিনের জীবনযাপনে সাহায্য করতো, সে অশিক্ষিত থাকা সত্বেও।
উপরের উদাহরণ এখনকার মেয়েদের থেকে অনেক আলাদা, ৩আবিরা মনে করে যে এরা নিজেদের নামের আগে তালাকপ্রাপ্তা যোগ করতে চিন্তিত না, বিদেশীদের হস্তক্ষেপের ফলে:
আগের মহিলাদের জন্য তালাকপ্রাপ্তা একটা বড় অপমান ছিল। তারা মৃত্যু পছন্দ করত তালাকপ্রাপ্তা হওয়ার থেকে। সেটা আধুনিক যুগের আগে যখন একদল বিদেশী আমাদের আরবদের জীবনযাত্রায় হস্তক্ষেপ করে, আর আমাদের মধ্যে নারী আধিকারবোধ জাগিয়ে তোলে, আর আমার কোন ধারণা নেই কেন এটা হলো??! নাকি ইসলাম মেয়েদের অপমানিত করেছিল পোপ আর ক্যাথোলিকরা মেয়েদের মর্যাদা বাড়ানোর ফলে? আমরা কি করে তাদেরকে আমাদের জীবনে হস্তক্ষেপ করে সমতার কথা বলতে দিলাম, যখন তাদের দেশের মেয়েরা অভিযোগ করছে আর নিজেদের ছুরিতে মারা যাচ্ছে?
ফল হল:
আমরা এমন একটা যুগে আছি যখন মহিলারা তালাকপ্রাপ্ত হওয়া নিয়ে মোটেও চিন্তিত না, কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে যে তারা খুব অদ্ভুত কারনে তালাক চাচ্ছে! কিছু লোকের জন্য তালাক পাওয়া কি সহজ ব্যাপার হয়ে গেছে আর তাও খুব অদ্ভুত কারনে।
৩আবিরা এর পর তালাকের কিছু কারন জানিয়েছেন, মহিলাদের বলা, যা তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছে:
১) তার স্বামী পুনর্বিবাহ করে আর সে তালাক চায়, যদিও আমাদের ধর্মে বহুবিবাহ আছে। আমি জানি আপনাদের মধ্যে অনেকে আমাকে বহুবিবাহ সমর্থনের কারনে ধিক্কার দেবেন, আর আমি আগে বলেছি আমি আপনাদের মতো একজন মেয়ে, অনুভুতিসহ যা এই ধরণের কিছু হলে আহত হবে। কিন্তু আমি ইশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে ক্ষমতা দিয়েছেন তার স্বীকৃত বিধানের বিরুদ্ধে না যেতে।
২) সে তার স্বামীর প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে পারেনা, তাই তালাক চেয়েছে তার সাথে বসে এটা আলোচনা না করে। তার যুক্তি হলো যে তার স্বামীর উচিত ছিল আরো খেয়াল করে তাকে বিরক্ত করে এমন আচরণ না করা।
৩) বিয়ে রোম্যান্টিক না!? সে ভালোবাসার কোন কথা জানে না বা অন্য কিছু এইধরনের কারন যা আমাকে রাগিয়ে দেয়। অদ্ভুত হলো যে মেয়েরা তালাকের দিকেই ঝুঁকে থাকে পরামর্শক আর হিতাকাঙ্খীরা যাই চেষ্টা করুক না কেন।
এই ব্লগার স্বীকার করেছেন যে ক্রমবর্ধমান তালাকে পুরুষদেরও দোষ আছে। তিনি লিখেছেন:
আমি শুধু মেয়েদের দোষ দিতে চাইনা। এই যুগে পুরুষেরা মহিলাদের সমান আর তাদেরও উচিত তাদের জীবনযাপনে কিছু বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করা। আমি অনেক তালাক দেখেছি খুব নগণ্য কারনে ঘটে থাকে।
তালাকের ব্যাপারে পুরুষদের কারন হল:
১) সে জানেনা আমাকে কি করে সম্মান করতে হবে – কোন চেষ্টা না করে তার সাথে কথা বলে পরিস্থিতি ঠিক করতে।
২) আমার বিয়ে গতানুগতিক, আর আমি এটা সফল হতে দেখিনা!
৩) আমি রেগে গিয়ে এটা করেছি- কেন? প্রমান করতে যে সে পুরুষ।
পরিশেষে ৩আবিরা তার পাঠকদের অনুরোধ করেছেন আগের মূল্যবোধকে ধরে রাখতে আর আধুনিকতা এবং নতুন ধারাকে অনুসরন করে পারিবারিক জীবন ধ্বংস না করতে দিতে। তিনি লিখেছেন:
আমরা যদি আমাদের সংস্কৃতি আর মূল্যবোধের উপর জোর দিতাম, তাহলে আজকের পরিস্থিতি হত না। এর কারন হলো আমরা আজকে উন্নয়নের কথা বলছি যখন আমরা জানি না উন্নয়ন কি।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী সাউদি আরবের ৬২% বিয়ে তালাকে শেষ হয়। অন্য একটি সুত্র এই হার ৩৮% বলছে।