ভারত: টাটা ন্যানোর পরিচিতি

সম্প্রতি নতুন দিল্লির অটো শোতে অতি ছোট গাড়ী টাটা ন্যানোর উন্মোচন বিভিন্ন ব্লগোস্ফিয়ারে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই গাড়ির সাধারন সংস্করনের দাম হচ্ছে ১ লাখ রুপী (প্রায় আড়াই হাজার আমেরিকান ডলার) যা একে ভারতের (এমনকি পৃথিবীর) সবচেয়ে কমদামী গাড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

এই নতুন গাড়িকে অভ্যর্থনা জানাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে বলছে যে এরকম সস্তা গাড়ি ভারতীয় শহরগুলিতে যে ট্রাফিক সমস্যাসহ অন্যান্য অবকাঠামো সংক্রান্ত সমস্যাগুলো রয়েছে তা আরও বাড়াবে। এছাড়াও বেশী পরিমানে গাড়ি রাস্তায় চলার কারনে পরিবেশ দুষণের ব্যাপার তো রয়েছেই। তবে বেশ অনেকেই এই গাড়িটি সম্পর্কে খুবই আশাবাদী।

ইন্ডিয়ান মুসলিমস ব্লগ লিখছে যে এই গাড়িটি ভারতের গ্রামান্চলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে:

সমালোচকদের সাথে আমিও একমত যে এটি ট্রাফিক সমস্যা আরও বাড়াবে। আমাদের শহরগুলো ট্রাফিক জ্যাম এবং জনসংখ্যাবহুল রাস্তা দ্বারা জর্জরিত। কিন্তু রতন টাটা একজন ব্যবসায়ী। তার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের উপযোগী এমন পণ্য বের করা যেটি সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যাবে। তবে এই অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর সমাধানের দায়িত্ব সরকার এবং নীতি নির্ধারকদের। তাদের কাছে এটি হয়ত বেশীই চাওয়া হয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিতে না পেরে ‘ব্যাঙ্গালোর’ এবং ‘পুনে’ শহরকে শোচনীয় অবস্থায় যেতে। আমি নিশ্চিত যে এই গাড়িটি জনপ্রিয় হলেও এটি ট্রাফিক দুর্বিপাকের সৃষ্টি করবে। তবে আমরা যদি শহরান্চলের বাইরে চিন্তা করি তবে ভারতের গ্রামান্চলে, যেখানে ৭০% ভারতীয় থাকে এটি একটি জীবন পরিবর্তনের কারন হতে পারে।

ইন্ডিকুইল  বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার উপর তার মন্তব্য করছে এবং এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করছে যে গাড়ি কেন শুধু বিলাস পণ্য হবে?

একদিকে আমরা কি পাব এটি প্রমান করে যে গাড়ি শুধু বিলাসবহুল ভোগ্যপণ্য থাকবে? রতন টাটা হয়ত একটি প্রচার অভিযান চালাচ্ছে তার জন্যে কিন্তু তিনি ঠিকই বলছেন যে এদেশে লাখো পরিবার রয়েছে যারা নিরাপদ নয় এমন যানবাহন ব্যবহার করছে কারন তাদের নিরাপদ যানবাহন সুবিধা ভোগ করার মত অর্থনৈতিক অবস্থা নেই। যে এই চিত্র দেখেছেন যে মটর বাইকের উপর একজন মহিলা তার ছোট বাচ্চাকে কোলে নিতে হিম সিম খাচ্ছেন আর তার স্বামী মন্থর ট্রাফিকের মধ্য দিয়ে তার বাইকটি নিরাপদ ভাবে চালানোর চেষ্টা করছে নিশ্চয়ই তর্ক করার চেষ্টা করবেন না যে সারা জীবন ঐ পরিবারকে এই অনিরাপদ যানবাহনেই চলতে হবে এবং তার ফলে আমরা যাদের ব্যন্কে অনেক টাকা আছে তারা এসি গাড়িতে রাজহাঁসের মত রাস্তায় চলতে পারি।

ডোন্ট ট্রাস্ট দ্যা ইন্ডিয়ান অটো এক্সপো থেকে এই গাড়িটির কিছু ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি মন্তব্য করছেন পরিবেশবাদীরা তাদের সুনাম নষ্ট করবে যদি তারা মানুষের (গাড়ি চড়ার) আকাঙ্খার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন:

সুনিতা নারাইন এবং আর কে পাচাউরির জানজট এবং পরিবেশ দুষনের উপর মন্তব্য হচ্ছে বড়লোকদের দৃষ্টি ভঙ্গী। মানুষ হয়ত এই গাড়িটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। কিন্তু তাদের অন্যান্য কারখানার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিৎ এবং ডিজেল জেনারেটর ইত্যাদির বিরুদ্ধে। ভারতীয় পরিবেশবাদীদের সমস্যা হচ্ছে ভুল ব্যাপারে প্রতিবাদ করে তারা বিশ্বাস যোগ্যতা নষ্ট করে। আমাকে গ্রীনপিসের গ্রাহকের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার কথা মনে করিয়ে দিও। মানুষের আকাঙ্খার বিরুদ্ধে যেওনা তোমরা, বিশ্বাস যোগ্যতা হারাবে। মানুষকে বল আরও বিচক্ষণ ভাবে টাকা খরচ করতে, সরকারকে বল অনুৎপাদনশীল খাতে টাকা না খরচ করতে, এবং যানবাহন ও টেলিযোগাযোগের বিরুদ্ধে না যাওয়াই ভাল।

আল্ট্রাব্রাউন এর নিরাপত্তার ব্যাপার নিয়ে কথা বলছে তবে এই গাড়িটির ব্যাপারে খুবই আশাবাদী যা বিভিন্ন ব্যাপার থেকে নিরাপত্তা দেয়:

টাটা মটরস সেই করল্লা'র আধুনিক সংস্করন বের করেছে যা মুদ্রাস্ফীতি সামলিয়েও কম দামে পাওয়া যেত। টাটা ন্যনো দেখতে খুব সুন্দর নয় অথবা গতানুগতিক চাকাও তার নেই। এর বাকানো বাম্পার নতুন মডেলের ফোর্ড টরাসের কথা মনে করায় যাতে ভ্রু উচাবে অনেকেই। তবে মাত্র এক লাখ রুপীতে (আড়াই হাজার ডলার) এটি বিশ্বজুড়ে মধ্য এবং নিন্মবিত্ত পরিবারদের হাতে একটি অধিকতর নিরাপদ যানবাহন দেবে।

মার্কেটিং প্র্যাকটিস সেই সময়ের কথা চিন্তা করছে যখন এই গাড়িটির ঘোষণা প্রথম করা হয়েছিল এবং লোকে এর বাস্তবতা নিয়ে বিদ্রুপ করেছিল। এখন এই গাড়িটির হয়ত কোন মার্কেটিং উদ্যোগ লাগবে না:

মার্কেটিং বিভাগে টাটা ন্যানোর স্বপ্নের অভিষেক হয়েছে। আসলে এই গাড়ির কোন বিজ্ঞাপন দরকার নেই শুধু কিছু ধণাত্মক জনসংযোগ কর্মসূচী হলেই চলবে। এই ব্রান্ডকে হয়ত কার্যকারিতা সংক্রান্ত কিছু অবিশ্বাসকে জয় করতে হবে। আরেকটি কঠিন কাজ হবে প্রথমদিকে ক্রেতাদের অতিরিক্ত ভীড়কে সামলানো। যেহেতু এই গাড়ী সাধারন মানুষের জন্যে তাদের হয়ত ডিলারদের কাউন্টারগুলোতে কিছু দুর্ব্যবহার সইতে হবে। ভারতীয় গাড়ী বাজারের এখনও ভাল ক্রেতা সেবা নেই। টাটা এবং তার ডিলাররা ক্রেতাদের চাপ কিভাবে সামলায় এটি দেখার বিষয় হবে।

Exit mobile version