তাইওয়ান: একটি শ্লেষপূর্ণ মানবাধিকার দিবস

তাইওয়ানের মানবাধিকার সংক্রান্ত আমার পূর্বের লেখা যেখানে শেষ করেছিলাম তার পর থেকেই শুরু করছি এই লেখা।

মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রধান দশ (টপ টেন) সংবাদ:

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের কিছু আগেই দ্যা তাইওয়ান এসোসিয়েশন ফর হিউমান রাইটস (টি এ এইচ আর) ‘মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রধান দশ (টপ টেন) সংবাদ‘ সংকলিত করেছে। বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারটি যেহেতু নীতি নির্ধারক ও সরকারী আমলাদের এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকার উপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই ‘টি এ এইচ আর’ “২০০৮ সালের কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীদের উপর মানবাধিকার সংক্রান্ত একটি জরিপ” এর ফলাফল প্রকাশ করেছে। আমরা শুধু এটিই আশা করতে পারি যে ভোটাররা মানবাধিকার সংক্রান্ত মুল্যবোধ দেখেই পদপার্থীদের নির্বাচিত করবেন।

সরকারী আমলারা লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্য করেছেন:

শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তা একজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে তাকে “মেয়েলী” এবং “সমকামী” বলে আখ্যা দিয়েছেন। এটি সমকামী আন্দোলনে অংশরতদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে যারা একটি সম্মিলিত সংবাদ সম্মেলন করেছে এর প্রতিবাদ করার জন্যে। ঐ কর্মকর্তা অবশ্য তাদের এই শোরগোলকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছেন এই বলে যে “উক্ত শব্দদুটো শুধুমাত্র বিশেষন হিসেবেই ব্যক্ত করা হয়েছিল”। বি তার ব্লগে এই ব্যবহারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন:

তিনি কিভাবে এটি এভাবে উড়িয়ে দিতে পারেন? তিনি কি জানেন যে অনেক ছাত্র তাদের সহপাঠীদের কাছ থেকে উৎপীড়ক হিসেবে “মেয়েলী” শব্দটি সহ্য করে এবং কেউ হয়ত এজন্য টয়লেটে যেতে ভয় পায় যে তাদের হয়ত বস্ত্র উন্মোচন করে পুরুষত্বের পরীক্ষা দিতে হয়। তিনি কি জানেন যে ‘সমকামী’ শব্দটি গালি হিসেবে ব্যবহার করায় সমকামীরা তাদের বয়:সন্ধিতে নিজেদের আবিস্কার করতে ভয় পায়। এবং পরবর্তীতে যখন নিজেকে আবিস্কার করে তখন তাদের সমাজচ্যুত হওয়ার ভয় তাড়া করে ফেরে। ‘সমকামী’ শব্দটির এরুপ বিশ্লেষাত্বক ব্যবহার সমকামীদের অনেক সমস্যায় ফেলে কাজেই এটি ‘শুধু একটি বিশেষন’ এই কথা বলে একে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

তাইওয়ানের ফেমিনিস্ট স্কলারস এসোসিয়েশনও বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতাদের করা শব্দ সন্ত্রাসের নিন্দা করেছে। অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীদের সাথে একাত্ম হয়ে তারা দাবী করছে যে শিক্ষা মন্ত্রনালয় শিক্ষা আইন (নারী বৈষম্য সংক্রান্ত) অনুযায়ী তাদের এই মন্তব্যের পূর্ন দায়িত্ব স্বীকার করে। মানবাধিকার কর্মীরা দাবী করছে যে লিঙ্গবৈষম্যপূর্ণ এইসব কথাবার্তা নারীবৈষম্য দুরীকরন আন্দোলন এবং গণতন্ত্রের পরিপন্থী।

একটি শ্লেষাত্বক মানবাধিকার দিবস

গত ১০ই ডিসেম্বর ছিল মানবাধিকার দিবস এবং তাইওয়ানের মানবাধিকার পার্কে ছিল এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই পার্কটি রাজনৈতিক বন্দীদের জন্যে একটি ভূতপূর্ব কারাগারের স্থানে নির্মিত হয়েছে। বন্দীদের এবং তাদের পরিবারদের এতে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে লেশেঙ্গ আন্দোলনকারীরা যারা সেখানে প্রতিবাদ কারার জন্যে উপস্থিত হয়েছিল তাদের নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে।


ছবি: পিঙ্গলহাউ

কুল লাউড ডট কম এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন আর সিভিল মিডিয়া ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছে। চেন নামের এক ছাত্র যে অনুষ্ঠানে ছিল তার প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনায় জানাচ্ছেন:

কর্মকর্তারা যখন আসা শুরু করলেন, আমরা তাদের নাম ধরে ডাকতে লাগলাম এই আশায় যে তারা এসে আমাদের অনুরোধ ও কথাগুলো শুনবেন এবং মানবাধিকার সম্পর্কে তাদের চক্ষু উন্মোচন করবেন। কিন্তু পুলিশ, জাতীয় রক্ষী বাহিনী এবং রায়ট পুলিশ এসে আমাদের ঘিরে ফেলল।

পুলিশের হুমকির মুখে (রাস্তার বাধাগুলো ততক্ষনে সরিয়ে নেয়া হয়েছে) আমাদের কোন উপায় ছিল না একটি দেয়ালে হুমড়ি খেয়ে পড়তে যেখানে শ্লেষাত্বকভাবে লেখা ছিল ‘তাইওয়ান মানবাধিকার পার্ক'।

পিতামহ-পিতামহীরা হুইলচেয়ারে এই সাইনের নীচে বসে ছিল। কেমন হতবুদ্ধিকর ব্যাপার তাই না?

ছবি: রাষ্ট্রপতি চেন শুইবিয়ান ‘তাইওয়ান মানবাধিকার পার্ক’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের অনতিদুরেই পুলিশ জোরপূর্বক জনগনের একটি সমাবেশকে ভেঙ্গে দিচ্ছিল। তারা লেশেঙ যক্ষা ইনস্টিউটের ব্যাপারটি নিয়ে প্রতিবাদ করার জন্যে জড়ো হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট চেন শুধু বলেছিলেন “দেখুন আমরা ন্যাশনালিস্ট পার্টি থেকে কত আলাদা।”

ছবি: কুল লাউড

সংখ্যালঘুরা একে অন্যকে সাহায্য করছে: নতুন অধিবাসী এবং লিঙ সংখ্যালঘুরা

এইসব বিশৃঙ্খল অবস্থা মানুষকে হতাশ করতে পারে। কিন্তু সমাজের প্রতিটি প্রান্তে সংখ্যালঘুরা একে অপরকে সাহায্য করছে। নভেম্বর থেকে তাইওয়ানের ভিয়েতনামী সংবাদপত্র বাওবনফুঙ (চার কোনা) অন্যান্য সংখ্যালঘু দলের অনলাইন বুলেটিন বোর্ড সাইটের (বিবিএস)সঙ্গে একযোগে মানবাধিকার সংক্রান্ত খবর প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। সমকামীতা সম্পর্কে আলোচনা, নব্য অভিবাসী এবং অন্যান্য সংখালঘু বিষয়ে এটি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বাওবনফুঙ তাইওয়ানের একমাত্র ভিয়েতনামী সংবাদপত্র যা নব্য অভিবাসী ও অভিবাসী শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে প্রকাশিত হয়। ওই বিবিএস সাইটগুলো গে এবং লেসবিয়ান সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম। এই সিন্ক্রনাইজড রিপোর্টিং প্রজেক্টের তথ্য বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে:

লেসেঙ যক্ষা ইনস্টিটিউট, তিনটি মৃত্যদন্ড.. এই ধরনের অনেক মানবাধিকার সমস্যা র এখনও সমাধান হয়নি। আমরা প্রায়ই শুনি গে এবং লেসবিয়ান, আদিবাসী বা নব্য অভিবাসীদের উপর পুলিশ অত্যাচার করে। এই ধরনের ব্যবহার আমাদের সমাজেও প্রচুর দেখা যায়। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা এদের কল্যানে কাজ করবে এবং মানবাধিকার আন্দোলনের শীতকালিন অবস্থায় কিছুটা গরম ছোঁয়া দেয়ার চেষ্টা করবে।

এই আর্টিকেলটি মূলত: ফুলিটজ কর্তৃক লেখা হয়েছিল এবং একে ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন। ফুলিটজ এবং ই দুজনেই গ্লোবাল ভয়েসেস চাইনীজের অনুবাদক। – পোর্টনয়

Exit mobile version