‘নিউ ব্লুম': তাইওয়ানের একটি বিরল বামপন্থী গণমাধ্যম কণ্ঠ

তাইওয়ানের গভীর মেরুকৃত সমাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপতিআইনসভা নির্বাচন করবে যেখানে কুওমিনতাং ও ডিপিপি (গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল পার্টি) এই দুটি প্রভাবশালী দলের একটির সাথে বেশিরভাগ গণমাধ্যম ঘনিষ্ঠভাবে সারিবদ্ধ হবে। এই দ্বিধাবিভক্ততার বাইরে ক্রিয়াশীল গুটি কয়েক গণমাধ্যমের একটি নিউ ব্লুম ম্যাগাজিন। গ্লোবাল ভয়েসেস তাইপেতে অসংখ্য কথোপকথনের পর ইমেলের মাধ্যমে ম্যাগাজিনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান হিওর সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

ইংরেজি-চীনা দ্বিভাষিক অনলাইন প্রকাশনা নিউ ব্লুম ম্যাগাজিন তাইওয়ানের বাইরেও সম্প্রদায়ের একটি প্লাটফর্ম পরিচালনা করে। চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিরোধিতাকারী শিক্ষার্থী বিক্ষোভের সূর্যমুখী আন্দোলনের পরে ২০১৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি তাইওয়ানের বর্তমান, সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াবলী কভার করে। হিও সূর্যমুখী আন্দোলনের পর থেকে তাইওয়ানের রাজনীতি ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে লেখালেখিতে জড়িত।

ব্রায়ান হিওর প্রতিকৃতি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত ছবি।

ফিলিপ নুবেল (এফএন): আপনি তাইওয়ানের “কট্টর” বা “বামপন্থী” দৃষ্টিভঙ্গির একটি দ্বিভাষিক পত্রিকা চালাচ্ছেন। কোন দিক থেকে এই কেন্দ্রটি কট্টর?

ব্রায়ান হিও (বিএইচ): মার্কসবাদ, নৈরাজ্যবাদ, নারীবাদ এবং বিচিত্র যৌনাভিমুখতা তত্ত্ব বিবেচনায় নিউ ব্লুমের সদস্যরা নিজেদেরকে রাজনৈতিক বামপন্থীদের অংশ হিসেবে দেখে। প্রকাশনার কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লাইন না থাকলেও কট্টর রাজনীতির বোধের প্রতি একটি সাধারণ অঙ্গিকার রয়েছে যা সমাজের মৌলিক কাঠামোগত বৈষম্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং সমাজের শিকড় অবধি সামাজিক রূপান্তরের একটি দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানায়।

এফএন: তাইওয়ানের প্রেক্ষাপটে বামপন্থী মানে কি? গণমাধ্যম, সংস্কৃতি ও সুশীল সমাজে তাইওয়ানের প্রধান ক্রিয়াশীল কারা?

বিএইচ: ঐতিহাসিকভাবে তাইওয়ানে শক্তিশালী কোন বাম রাজনীতি ছিল না। কেএমটি [১৯৪৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তাইওয়ানের রাজনীতিতে একচেটিয়া অধিকারী কুওমিনতাং পার্টি] ঐতিহাসিকভাবে কমিউনিজম বিরোধিতার অজুহাতে স্বৈরাচারী সময়ে বামপন্থীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। চীনের বামপন্থী রাজনীতির দাবি তাইওয়ানের রাজনৈতিক বামদের উপর ছায়াপাত করলেও সেখানে স্বাধীনতাপন্থী বামদের ইতিহাসও রয়েছে। তাইওয়ানের বেশিরভাগ রাজনৈতিক বামপন্থী আজ পশ্চিমা চিন্তাধারার প্রেক্ষাপটে বামপন্থী তত্ত্বে প্রবলভাবে প্রভাবিত, যার ফলে তাইওয়ানে ফিরে আসার আগে বিদেশে পড়াশোনা করা ব্যক্তিরা এই ধারণাগুলি গ্রহণ করে।

তাইওয়ানে বামপন্থীদের চ্যালেঞ্জের একটি অংশ হলো তাইওয়ানের নির্বাচনবাদ ও দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার আধিপত্যের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া। তৃতীয় কোনো দল ভোট বিভক্ত করে একীকরণের পক্ষে থাকা মধ্য-ডানপন্থী কেএমটিকে জিতিয়ে দিতে পারে বলে এটি মধ্য-বাম ও ঐতিহাসিকভাবে স্বাধীনতা-সমর্থক ডিপিপি [গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল পার্টি]-এর প্রাক্তন বিকল্পগুলির জন্যে অসুবিধাজনক।

ফলে আধিপত্য বিস্তারকারী দুটি প্রধান দল ও সুশীল সমাজ উভয়ের মধ্যে বিচরণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। গণমাধ্যমগুলি কেএমটি ও ডিপিপি ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে মেরুকরণের প্রবণতা প্রদর্শন করে বলে এটি গণমাধ্যমকেও প্রভাবিত করে৷

বিশেষভাবে তাইওয়ানের রাজনীতিতে দুই দলের প্রাথমিক বিভাজন বাম ও ডানের পরিবর্তে তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ অস্তিত্বের একটি সংগ্রাম হিসেবে দেখা [চীনের সাথে] স্বাধীনতা ও একত্রীকরণ সম্পর্কিত। আর তাই বাম বনাম ডান ভিত্তিতে রাজনৈতিক কথোপকথন আরো কঠিন ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ।

এফএন: আপনি এখানে তাইওয়ানে ইউক্রেনের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখেছেন। কী এটা চালিত করছে এবং তাইওয়ানের গণমাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইউক্রেন সম্পর্কে কী ধরনের জ্ঞান অনুপস্থিত?

বিএইচ: তাইওয়ানের সাথে তীক্ষ্ণ মিলের কারণে রাশিয়ার ইউক্রেনে সামরিক আক্রমণ তাইওয়ানিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চীন আক্রমণ করলে তাইওয়ানেরও একই পরিণতি হতে পারে। আর ইউক্রেনের কোনো স্বাধীন ইতিহাস, সংস্কৃতি বা নিজস্ব ভাষা নেই রাশিয়ার এমন দাবির সাথে তাইওয়ানের উপর চীনের নিজস্ব সাংস্কৃতিক দাবির সাথে দারুণ মিল রয়েছে।

ফলে এধরনের মানসিক অভিক্ষেপ ইউক্রেনের প্রতি তাইওয়ানের আগ্রহকে পরিচালিত করে। হংকংয়ে ২০১৯ সালের বিক্ষোভ যেভাবে একটি সংঘবদ্ধ সমস্যা হিসেবে চীনের হুমকির উদ্বেগকে ফুটিয়ে তুলেছিল তা এর থেকে ভিন্ন নয়। তবে চীনাভাষী বিশ্ব হিসেবে তাইওয়ান ও হংকংয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত যে সম্পর্ক রয়েছে তার সাথে ইউক্রেনের মিল নেই।

ইউক্রেনের নিজের মধ্যে এবং তার সম্পর্কে তেমন বোঝাপড়া না থাকায় চীনপন্থী উৎসগুলি ইউক্রেনের বর্তমান পরিণতি ব্যবহার করে তাইওয়ানের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিশেষভাবে তাইওয়ানে চীনের সামরিক আগ্রাসনের প্রতি অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক ক্রিয়াশীলেরা এভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ক্রমাগত আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সংলাপের জন্যে অনেক বেশি জায়গা এবং তাইওয়ানের ক্ষেত্রে উপলব্ধির যথেষ্ট ব্যবধান থাকায় সেই অর্থে ইউক্রেনের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। একইসাথে তাইওয়ানের ইউক্রেন নিয়ে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রেও আমার একই সন্দেহ রয়েছে।

এফএন: আপনি আপনার ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত একটি ক্যাফেও চালান যেখানে চলচ্চিত্র, ঘটনা এবং বিতর্ক উপস্থাপিত হয়। আপনি কীভাবে এতগুলি কাজকে একসাথে করে পরিচালনা করেন এবং কিভাবে তারা একে অপরকে শক্তিশালী করে?

বিএইচ: এদের কোনটিই আর্থিকভাবে টেকসই নয় বলে এটি শুধু স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে দীর্ঘ সময় কাজ করতে চাওয়া একটি দলের পক্ষেই সম্ভব। দুটিই একই কর্মীদল ভা্গাভাগি করে বলে স্থান ও প্রকাশনার কাজকে সংযুক্ত করা আমাদের কাছে একটি প্রশ্ন হলেও কথোপকথনগুলি মাঝে মাঝে কিছুটা বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে। বলা যেতেই পারে আমরা প্রকাশনা সম্পর্কে পরামর্শ চাইতে মাঝে মাঝে নতুন পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করি।

অনেক বছর ধরেই আমরা অনুভব করেছি আমরা যাদের সাথে যোগাযোগ করছি তা শুধু একটি অনলাইন প্রকাশনার মাধ্যমে জানা কঠিন বলে সরাসরি সংযোগ শক্তিশালী যোগাযোগ তৈরির একটি উপায় হতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারীর পরে তাইওয়ানকে খারাপ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে এই স্থানগুলির গুরুত্ব আগের চেয়েও বেশি। দুই পক্ষ যাতে পরস্পরকে আরো দৃঢ়ভাবে শক্তিশালী করতে পারে তার জন্যে ভবিষ্যতে আমরা আমাদের গণমাধ্যমের ধরনগুলিকে আরো বিস্তৃত এবং আমাদের স্থানের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ করার আশা করি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .