২.৩ কোটি তাইওয়ানিকে বাদ দিয়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবাইকে সেবাদানের দাবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই মাসে জেনেভায় তার বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশের (ডব্লিউএইচএ) জন্যে বৈঠক করে বৈশ্বিক মাত্রায় জনস্বাস্থ্যের উপর মনোযোগ দেওয়ার দাবি করলেও এটি তাইওয়ানে বসবাসকারী ২ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষের আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য আলোচনায় কথা বলার, অংশগ্রহণের বা এর থেকে উপকৃত হওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করে চলেছে।

হোমপেজে বিধৃত নিম্নলিখিত আদেশের মাধ্যমে ডব্লিউএইচও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল:

আমরা সকলের জন্যে স্বাস্থ্য ও একটি উন্নত ভবিষ্যতকে বিজয়ী করি। সকল মানুষের মঙ্গলের জন্যে নিবেদিত ও বিজ্ঞান দ্বারা পরিচালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সকলকে সর্বত্র একটি সুস্থ জীবনযাপনের সমান সুযোগ দেওয়ার জন্যে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব প্রদান করে বিজয়ী হয়।

এটি নিয়মিতভাবে একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশ (ডব্লিউএইচএ) করে — এটা জেনেভাতে এই বছর ২১ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত। বিশ্ব সহজে সংক্রমিত একটি সীমানাহীন মারাত্মক কোভিড-১৯ মহামারী থেকে মুক্ত হয়েছে বলে ডব্লিউএইচএ এই বছরের সমাবেশের জন্যে নিম্নলিখিত থিমটি ভাগাভাগি করেছে:

এবারের স্বাস্থ্য সমাবেশের থিম হলো: ৭৫-এ ডব্লিউএইচও: সকলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে জীবন বাঁচাচ্ছে।

তবুও শুধু তাইওয়ান দ্বীপে বসবাস করে বলে ঐ ২ কোটি ৩০ লক্ষ লোকের প্রকৃতপক্ষে লক্ষ লক্ষ কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং কয়েক হাজার প্রতিবেশী ও বয়স্ক স্বজনদের মৃত্যু দেখার কথা ডব্লিউএইচও প্রকাশ্যে উল্লেখ করতে পারেনি।

তাইওয়ানকে নির্বাসন

তাইওয়ানের ভূখণ্ড পরিচালনাকারী চীন প্রজাতন্ত্র (আরওসি) ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য থাকাকালে জাতিসংঘ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে (পিআরসি) স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর থেকে তাইওয়ানের পাসপোর্টধারীদের জাতিসংঘের সদর দফতরে প্রবেশে অস্বীকার করার মাধ্যমে তাইওয়ানকে বঞ্চিত করা হয়। ডব্লিউএইচওসহ জাতিসংঘের সকল সংস্থা এইভাবে একই সিদ্ধান্ত মেনে চলে।

তবুও তাইওয়ান নিজস্ব সরকার, মুদ্রা ও সেনাবাহিনী থাকা শুধু একটি দেশ নয়, এর ২ কোটি ৩০ লক্ষ লোকের একটি গণতান্ত্রিক সমাজ রয়েছে যারা বাণিজ্য, ভ্রমণ ও যোগাযোগের ঘনিষ্ঠভাবে আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে গ্রহের অন্যান্য সমাজের মতো একই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

তা সত্ত্বেও দেশটিকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, এমনকি ডব্লিউএইচওতে পর্যবেক্ষকের মর্যাদাও অস্বীকার করা হয়েছে। জাতিসংঘের আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্যে জাতিসংঘ কোনো সংস্থা বা অ-সদস্য রাষ্ট্রকে নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতাসহ পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দিয়ে থাকে। বর্তমানে হলি সি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দুটি এই মর্যাদা উপভোগ করছে

বিগত বছরগুলির মতো এই বছরও তাইওয়ানকে ডাব্লুএইচএতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো এবং অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাইওয়ানের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রী হ্‌সুয়েহ জুই-ইয়ুয়ান (薛瑞元) এই তাইপেই টাইমস নিবন্ধে ব্যাখ্যা করেছেন:

তাইওয়ান বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ এটা অনেক দেশ জানলেও ডাব্লুএইচও তাইওয়ানকে অবহেলা করা হচ্ছে, যা অন্যায্য আচরণ।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের জন্যে তদবির করতে মন্ত্রীর নেতৃত্বে তাইওয়ানের একটি প্রতিনিধিদল জেনেভায় উপস্থিত রয়েছে, যেমন এই টুইটটি ব্যাখ্যা করে:

@জেনেভাপ্রেসক্লাবের সহযোগিতায় @এমওএইচডাব্লিউ_তাইওয়ানের মন্ত্রী হ্‌সুয়েহ তাইওয়ানকে #ডব্লিউএইচএ৭৬ থেকে বাদ দেওয়ায় তাইওয়ানের গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাইওয়ান মহামারী প্রতিরোধে সহায়তা করে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের প্রচার করতে পারে। তাইওয়ান @ডব্লিউএইচও এবং ডব্লিউএইচএ-তে অংশগ্রহণের জন্যে তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে

কোভিড কূটনীতি মনে রেখে সম্প্রসারণ

পর্যবেক্ষকের মর্যাদার জন্যে তাইওয়ানকে সমর্থনকারী বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে: চেক প্রজাতন্ত্র, লিথুয়ানিয়া, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জার্মানি এর আগে দ্বিপাক্ষিক কোভিড কূটনীতিতে জড়িত ছিল।

তাইওয়ান ডিসেম্বর ২০১৯ এর প্রথম দিকে ডব্লিউএইচওতে কোভিড-১৯ ঘটনা জানালেও ডব্লিউএইচও তার সতর্কতা উপেক্ষা করে তার অভিযোগ খারিজ করে দেয়। মহামারীটি ২০২০ সালে ইউরোপের অত্যন্ত অপ্রস্তুত চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়ার মতো দেশে আঘাত করলে তাইওয়ান ভেন্টিলেটর, মুখোশ ও মুখোশ তৈরির সরঞ্জাম প্রস্তাব করে পাঠিয়ে দেয়।

চেক প্রজাতন্ত্র ২০২১ সালের জুলাই মাসে  না-পাওয়া দেশগুলিকে ভ্যাকসিন দেয় যাতে তাইওয়ানের জন্যে ৩০,০০০ ডোজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। নিজস্ব ভ্যাকসিন না-থাকা এই দ্বীপটির ব্যাপারে স্লোভাকিয়া, লিথুয়ানিয়া, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্যান্য দেশও যোগ দেয়।

তাইওয়ান অনেক দেশকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণে তার দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করে চলেছে। এটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য শিল্পে তাইওয়ানের অনন্য অবস্থান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে #তাইওয়ানসাহায্যকরতেপারে হ্যাশট্যাগকে ঘিরে একটি বৈশ্বিক প্রচারণা শুরু করেছে।

এর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মে মাসের শুরুতে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যা এখানে ইউটিউবে দেখা যাবে

এতে বলা হয়েছে “এটি গত ২০ বছরে ৭৭ টি দেশের ২,০০০ এরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।” এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সম্প্রসারণের চলমান মিশনের অংশ হিসেবে ১৯৫০ সাল থেকে ইউক্রেন ও আফ্রিকাকে সমর্থনের উল্লেখ করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .