পাকিস্তান: জরুরী অবস্থা জারী হয়েছে, কোন সংবাদ নেই, ইন্টারনেট নেই

প্রেসিডেন্ট মুশারফ পাকিস্তানে জরুরী অবস্থা জারী করেছেন। নানা উৎ‍সের খবর অনুযায়ী, এটির মানে হচ্ছে “সমস্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকার রহিত করা হয়েছে। টিভির সমস্ত খবর চ্যানেল প্রচার বন্ধ রয়েছে এবং মোবাইল ফোন সিগন্যাল এবং ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না”।

অল থিংস পাকিস্তান ব্লগ আমাদেরকে ধারনা দিচ্ছে যে পাকিস্তানী ব্লগোস্ফিয়ারে এর কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।

দ্যা পাকিস্তানী পলিসি ব্লগ জানাচ্ছে যে সৈন্যবাহিনী সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে, প্রধান খবর স্টেশনগুলোর ভবন সৈন্য দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছে এবং অনেক রাজনীতিবিদ গ্রেপ্তার হয়েছে। এই ব্লগ জরুরী অবস্থা জারীর ঘোষনাটি সম্বন্ধে মন্তব্য করেছে:

জরুরী অবস্থা জারীর ঘোষনায় (নিচে পূর্ণ বিবরন), মুশারফ নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে না উল্লেখ করে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে উল্লেখ করেছেন – এই আইন জারীর ভিত্তি হিসেবে দেশে ক্রমবর্ধমান সংঘাতকে দেখিয়েছেন। তবে ঘোষনাতে দেশের এই পরিস্থিতির জন্যে বিচার বিভাগের কার্যকলাপকে তিনি দায়ী করেছেন। এটি বিচার বিভাগকে প্রশাষনের লেজিস্লেটিভ (আইন প্রনয়নকারী) এবং এক্জিকিউটিভ (কার্যকরী) শাখার কার্যকলাপের উপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছে: “বিচার বিভাগের কিছু সদস্যবৃন্দ সন্ত্রাস এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, লেজিস্লেটিভ এবং এক্জিকিউটিভ বিভাগের সাথে দ্বিমত ও সংঘাতে জড়িয়ে পরছে এবং সরকারকে এবং দেশের অবস্থানকে দুর্বল করছে। ফলে সমস্যাগুলো সমাধানে সিদ্ধান্তগুলো কার্যকরী হচ্ছে না।”

রেড ডায়রি ডট পিকে ব্লগ বলছে এটি প্রমান করছে বর্তমান সরকারের অভিপ্রায় এবং এটি সামরিক নিয়মের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করছে:

জেনারেল পারভেজ মুশারফ কর্তৃক বিচার বিভাগ, মিডিয়া ও সাধারন জনগনের প্রতি এমন ভোঁতা, রাষ্ট্রদ্রোহী, এবং অসাংবিধানিক আক্রমন বর্তমান সরকারের আসল একনায়কতান্ত্রিক চেহারাকে সবার সামনে প্রকাশ করেছে। এই দ্বন্দ্বের পরে আরও প্রমাণিত হয়েছে যে রাজনীতি থেকে সামরিক বাহিনীকে না দুরে রাখলে পাকিস্তান কোন প্রকারের গণতন্ত্রের দিকেই কখনো আগাতে পারবে না। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যে কোন প্রকার সমঝোতা অথবা চুক্তির চেষ্টা করলে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সমস্ত প্রচেষ্টা বিফলে যাবে।

সাজা ফোরামের এ সংক্রান্ত পোস্টে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য পরছে, যেমন: “ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো বলছে যে এটি জরুরী অবস্থার চেয়ে আরও বেশি। এটি আসলে মার্শাল ল ঘোষণার কারণ দেশের সম্পূর্ণ সংবিধানকে স্থগিত করা হয়েছে”। অন্য কিছু মন্তব্য ওই সংবাদেরই সমর্থন করছে যে পাকিস্তানে খবর চ্যানেলগুলো বন্ধ আছে।

চাপাতি মিস্ত্রী ব্লগ আলোচনা করছে জরুরী অবস্থা মানে কি এ নিয়ে:

এর পরে কি? মার্শাল ল। আরও বেশি বোমা হামলা। এবং গত ৮ বছরে দেশে যে পরিমান মূলধন সন্চয় হয়েছে তার বরবাদী। জিম্বাবুয়ে, আমরা আছি তোমার পথে যদি না, চীন এবং আমেরিকা তাদের বোধ ফিরে পায় এবং এবং কিছু প্রকৃত কুটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়। অবস্থা শোচনীয়। ধরুন মুশারফ পদত্যাগ করল এবং ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেল। সুপ্রিম কোর্ট একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করল, নতুন সরকার বালুচিস্তান বিষয় সমাধান করল, আমেরিকা আফগানিস্তানে আবার সেনা মোতায়েন করল (এবং তাদেরকে বেশ কিছুদিন রাখল) পাকিস্তানের নগরী এবং পর্বতের মধ্যে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী (উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ চালাল। বিশৃঙ্খলা। অনিশ্চয়তা। এবং এটি, আমার সুবোধ পাঠকেরা, হতে পারে সর্বোত্তম ঘটনা। এছাড়া একটি আরও বেশি সম্ভাব্য পরিনতি রয়েছে তা হলো ২০০৫ সালের পর মুগাবের জিম্বাবোয়ে এবং ১৯৭৬ সালের গান্ধীর ভারত এর মতো একটি সামরিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা। আমি যে ভুল এটি প্রমাণ করা জরুরী।

এছাড়াও এই বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও মন্তব্য হয়েছে মেট্রোব্লগিং লাহোর, পিকল্ড পলিটিক্স এবং মেট্রোব্লগিং ইসলামাবাদ ব্লগগুলোতে । কেও ব্লগ লিখছেন যে একনায়কতান্ত্রিক রাজ্যে ফেরত যাওয়া মানে কি:

এটি সম্পূর্ণ বিপরীতার্থক একটি ব্যাপার (অক্সিমরন)। গত ৮ বছর ধরে পাকিস্তান একটি সামরিক একনায়কন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে কিন্তু এই একনায়ক গণতন্ত্রের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট রেখেছেন যেমন একটি মুক্ত সংবাদপত্র, বিরোধী দল (শুধু রাজনীতিবিদদের নিয়ে নয়, তালেবানদের মত বেসামরিক সশস্ত্র দল) ইত্যাদি।

কমেন্ট ইজ ফ্রি ব্লগে আলী এতেরাজ জরুরী অবস্থা প্রসঙ্গে লিখছেন:

ঐতিহ্যগতভাবে, পিসিও (সামরিক শাষন) হচ্ছে একটি ঘোষনা যেটি সংবিধান স্থগিত করে এবং লেজিস্লেশন এবং বিচার বিভাগসহ সমস্ত নাগরিক মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে মার্শাল ল জারী করে। মুশারফের পিসিও কেবল বিচার বিভাগকে ভেঙে দিয়েছে (সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে নাক গলানোর জন্য এবং তার সীমা অতিক্রমের জন্য) কিন্তু বিধানসভা ঠিক রেখেছেন। পিসিওর এই সীমিত প্রয়োগে বোঝা যাচ্ছে যে বর্তমান পরিস্থিতি সামরিক শাষনের চেয়ে কিছু কম। কিন্তু একে একটি জরুরী অবস্থা বলা যাবে না কারণ ঔটিতে পিসিওর এই ব্যাপারগুলো থাকে না। তাই এই মধ্যবর্তী অবস্থাকে “বিশেষ জরূরী অবস্থা” বলে অভিহিত করা হচ্ছে।

এবং হ্যাঁ, এখনই সময় পুনরায় পাকিস্তানে ইন্টারনেট সেন্সরশীপের বিরুদ্ধে সমাজের সক্রিয় হবার। ড: আওয়াব আলভী এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছেন এই পরামর্শ নিয়ে যে আন্তর্জাতিক ব্লগারদের পাকিস্তানী ব্লগারদের তরফ থেকে ব্লগিং করতে নিযুক্ত করা হোক।

আমি মনে করি সমস্ত পাকিস্তান ভিত্তিক ব্লগারদের ব্লগিং করা থামিয়ে সাবধান থাকতে কারন নিশ্চিত করা গেছে যে এখন সামরিক শাষন বলবৎ করা হয়েছে এবং আমাদের নিরাপদে থাকতে হবে। আমাদের উচিৎ আন্তর্জাতিক ব্লগারদের কাছে আমাদের ব্লগের ভার ছেড়ে দেয়া যাতে তারা আমাদের হয়ে রিপোর্ট করা চালিয়ে যেতে পারে।

একটি উদাহরণ হিসেবে আমি বাক-স্বাধীনতা একটিভিস্ট অ্যান্জে এম্বুলদেনিয়াকে আমার ব্লগ পোষ্টিং অধিকার অর্পন করেছি।

আমি জানি আমরা নিশ্চয়ই এনিয়ে লিখতে চাই কিন্তু দয়া করে বুঝুন এটি একটি সামরিক শাষন। আন্তর্জাতিক ব্লগ সম্প্রদায় বর্তমানে পাকিস্তানের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে এবং আমরা খুব শীঘ্রই তাদের মন্তব্যগুলো শুনব।

এখানে রয়েছে আওয়াব আলভীর ব্লগের লিন্ক, যা অ্যান্জে চালাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত লিখে যাচ্ছে।

- নেহা বিশ্বনাথন

Exit mobile version