পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট বন্ধ ও হতাশা

Pakistan Tehreek-e-Insaf (PTI) Chairman and former Prime Minister Imran Khan's victory speech (AI version). Screenshot from Imran Khan's YouTube Channel. Fair use.

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিজয় ভাষণ (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্করণ)। ইমরান খানের ইউটিউব চ্যানেলের পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।

পাকিস্তানের ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর থেকে ১২তম সাধারণ নির্বাচনের একটি ধারাবাহিকতা যা দেশটির ভবিষ্যৎ নির্বাচন প্রক্রিয়া ও প্রচারণাকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করবে। দেশটি নির্বাচন ও ভোটের দিনের জন্যে প্রস্তুত নাগরিকদের মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট অবরোধসহ নির্বাচনের আগে ইন্টারনেট বন্ধের একটি ধারাবাহিক প্রত্যক্ষ করেছে। লেখার সময় পর্যন্ত মোবাইল পরিষেবা বন্ধ ছিল। অনেকের অনুমান এটি আগামী দিনগুলিতেও অব্যহত থাকবে। ইন্টারনেট প্রতিবন্ধকতার শিকার ছাড়াও পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোটারদের আখ্যান ও ধারণা প্রভাবিত করতে রাজনৈতিক দলগুলি আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে উৎপাদী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপ ফেক ভিডিও ব্যবহার করেছে।

বিশ্বব্যাপী সাইবারনিরাপত্তা ও ইন্টারনেটের শাসন নিরীক্ষণকারী একটি পর্যবেক্ষক নেটব্লক এক্সে পোস্ট করেছে:

⚠️ নিশ্চিত: বাস্তব মেট্রিকগুলি #পাকিস্তান জুড়ে এক্স/টুইটারে জাতীয় পর্যায়ে একটি ব্যাঘাত দেখায়; ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি বিতর্কিত নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটেছে 📉

নির্বাচনের আগে প্রচারণার সময় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ এন (পিএমএলএন) এর মতো রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে তাদের বার্তা ছড়িয়ে দিতে ও ভোটারদের সংগঠিত করতে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে। পিটিআইয়ের নেতা ইমরান খানকে বন্দী ও দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করায় দলটি এই নির্বাচনের মরসুমে কার্যকর রাজনৈতিক প্রচার চালাতে পারবে না মনে করা হলেও দলটি অফলাইন সমস্যার মুখে সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চের মাধ্যমে তার সমর্থকদের একত্রিত করার চেষ্টা করে। ডিসেম্বরে পাকিস্তান ইন্টারনেট পরিষেবা ধীরগতির ও সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলিতে প্রবেশ অবরোধের পাশাপাশি পকেট ব্যাঘাত প্রত্যক্ষ করেছে। দেশটি একটি ভার্চুয়াল পিটিআই তহবিল সংগ্রহের ইভেন্টের মধ্যে ৭ জানুয়ারি, আবারো ব্যাহত সামাজিক গণমাধ্যম ওয়েবসাইটগুলিতে প্রবেশসহ প্যাকেট ব্যাঘাত দেখেছে

বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট বিধি-নিষেধের একটি মুক্ত তথ্যের উৎস ওওএনআই এক্সপ্লোরারের প্রতিবেদন এবং ওওএনআই প্রোব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পরিমাপ অনুসারে পাকিস্তানের ইন্টারনেট পরিষেবা দানকারীরা পিটিআইয়ের দুটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ ও সত্যতা যাচাইয়ের একটি সংবাদ মঞ্চ ফ্যাক্ট ফোকাসে প্রবেশাধিকার ভোটের দিনের আগের সপ্তাহে বন্ধ করেছে।

তবে ইন্টারনেটের উপর অনেক বিধিনিষেধ সত্ত্বেও এই সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিশেষ করে উৎপাদী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপ-ফেক ভিডিওর ক্রমবর্ধমান ব্যবহারও দেখা গেছে। ডিসেম্বরে পিটিআইয়ের সামাজিক গণমাধ্যম দল উৎপাদী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে কারারুদ্ধ থাকা স্বত্ত্বেও ইমরান খানের একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা প্রকাশ করে। ভিডিওটির দায়মুক্তিতে বলা হয়েছে যে ভিডিও বার্তাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভয়েসওভারটি উৎপাদী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরঞ্জামের মাধ্যমে তৈরি।

প্রবাসী পাকিস্তানি সামরা সাগির এক্সে পোস্ট করেছেন:

ইমরান খানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জেল থেকে বার্তা তৈরি করেছে #جازان_الان #فلسطين_الان #ইসরায়েলসন্ত্রাসী #غزة_تستغيث #ফিলিস্তিনিগণহত্যা #জাংকুক #স্পাইডারম্যান২

নির্বাচনের প্রাক্কালে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীরা পিটিআই এবং পিএমএলএন প্রার্থীদের এই বছরের সাধারণ নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানানো ডিপ-ফেক ভিডিওর একটি ধারাবাহিক অনলাইনে প্রচারিত হতে দেখেছেন, যা বিশেষ করে অনেক নাগরিক দেশটির নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে অনেক ভোটার ও সমর্থককে হতাশ করেছে

পাকিস্তানে ভোটের দিন মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্ন হওয়ায় অনেক ভোটার তাদের ভোটকেন্দ্রের বিবরণ খুঁজে পায়নি। এই ব্যবস্থায় তথ্য পেতে ভোটারদের কম্পিউটারাইজড জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (সিএনআইসি) দিয়ে ৮৩০০ নম্বরে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠাতে হলেও, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্নের কারণে অনেক ভোটার এই বিশদ বিবরণ পাওয়া নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। বিশেষভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা ঘন ঘন স্থগিত করা “অসাংবিধানিক” উল্লেখ করে একজন স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্রার্থী আদালতে একটি আবেদন দাখিল করায় কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষকে (পিটিএ) সিন্ধু উচ্চ আদালত (এসএইচসি) ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারনেটে নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও এমনটি ঘটেছে।

প্রাক্তন সিনেটর শেরি রেহমান পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) কাছে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থগিত নিয়ে অভিযোগ দায়েরের কারণে অনেক রাজনৈতিক প্রার্থী ইতোমধ্যে এই বিষয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছে

পাকিস্তান পিপলস পার্টির সভাপতি বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এক্সে পোস্ট করেছেন:

অবিলম্বে সারাদেশে মোবাইল ফোন পরিষেবা পুনরুদ্ধার করতে আমার দলকে ইসিপি ও আদালত উভয়ের কাছে যেতে হবে।

পাকিস্তানি নাগরিক অধিকার কর্মী ও আইনজীবী মোহাম্মদ জিবরান নাসির পোস্ট করেছেন:

আজকে উচ্চ আদালতের আদেশ সত্ত্বেও সংস্থাপনের মদদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো সরাসরি প্রতিবেদন না হওয়া নিশ্চিত করতে সারাদেশে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে ভোটার ও রাজনৈতিক দল বিশেষ করে পিটিআই এবং প্রার্থীদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাঘাতকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মৌলিক স্বাধীনতার উপর আক্রমণ হিসেবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

🇵🇰নির্বাচনের দিনে টেলিযোগাযোগ ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিতের সিদ্ধান্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের উপর একটি নির্লজ্জ  আক্রমণ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে প্রবেশের উপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছে…

দেশে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরেও মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থগিত থাকায় সারাদেশের নাগরিকরা এই ব্যাঘাতের জন্যে হতাশ। এছাড়াও এখনি_প্রবেশাধিকার, সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি ও #চালিয়েযাও জোটও নির্বাচনের দিন ও ভোটগ্রহণের পরে পাকিস্তানের জন্যে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক পুনঃস্থাপনের বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার, ইন্টারনেট এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যাঘাত মিলে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনটি বিতর্কিত বিষয় ছাড়া কিছুই নয়। অনেক সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারকারীরা প্রথম থেকেই নির্বাচনী ফলাফলের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং অনেককে ভোটের দিনের ঘটনাবলী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এই নির্বাচনগুলি আদৌ দেশের নাগরিকদের জন্যে অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল কিনা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .