মৌরিতানিয়া: অজ্ঞতা এবং ঐতিহ্য

সৌন্দর্য যার যার চোখে। সাধারনত: স্থুলকায় ও সম্পদশালী মহিলাদের মৌরিতানিয়ায় ভাল চোখে দেখা হয়। মহিলারা যত মোটা হয় ততই বেশী সুন্দরী বলে ধারনা করা হয়। স্থুলকায় হওয়াটা ধনী হবারও সমার্থক তাই সৌন্দর্যের সন্ধানে এবং সম্পদের প্রকাশে অনেকেই কিছু অভিনব পন্থার অবলম্বন করে যেমন গাভাজ (gavage) বা জোর করে বেশী খাওয়ানো। সাধারনত: এক বসায় মহিলাদেরকে ২ কেজি কুসকুস (এক ধরনের খাদ্য) দুই গ্লাস মাখনের সাথে খাওয়ানো হয়।

মৌরিতানিয়ার মহিলাদের এই গাভাজের ঐতিহ্য নিয়ে নাওমেড লিখেছেন “পলিটিক অ সেনেগাল” ব্লগে। তার পোস্টে একজন মন্তব্যকারী বলেছেন:

ওদের এতে দোষ নেই। আসলে এই শিক্ষাই তারা পেয়েছে।

নাওমেড আরচিপো ব্লগে আলোচনা করছেন অজ্ঞতা বা ঐতিহ্যের অজুহাত দেখানো যুক্তিযুক্ত কিনা তা নিয়ে:

আমাদের সমাজে নিন্দনীয় অনেক আচার রয়েছে এবং সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে এগুলোকে বলবৎ করা হয়। উদাহরন দিতে গেলে বলতে হয় যবতী গৃহ পরিচারিকাদের উপর অত্যাচার, ছোট তালিব দাস-দাসীদের উপর ম্যারাবাউটদের নির্যাতন, বাল্যবিবাহ এবং জোর করে বিয়ে দেয়া.. এগুলো সবই আমাদের সংস্কৃতিতে ওতপ্রোতভাবে প্রথিত। আমাদের রীতিনিতি এগুলোকে সায় দেয় এবং একটি পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি এবং ক্ষমতা, গায়ের জোরে সম্পদ হরন এবং পক্ষপাতিত্ব আমাদের ঐতিহ্যে রয়েছে।

আমরা যে এসব শিক্ষা লাভ করেছি এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমরা কতদিন পর্যন্ত এই শিক্ষাকে বর্ম করে আমাদের এইসব আচারগুলোর পেছনে যুক্তি দেখাতে থাকব এটাই প্রশ্ন।

তিনি আরও আবেগপূর্ণ যুক্তি দেখাচ্ছেন:

আমাদের বাসায় এইসব অপরাধ সংগঠিত হলে আমরা চেপে যাই এবং এগুলোর পেছনে থাকে আমাদের সমাজেরই লোক, আমাদের ঘরের লোক বা পড়শীরা…

এবং এরপর তিনি ঐতিহ্য এবং শিক্ষার যুক্তির মূল সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন:

যদি কোন নিন্দনীয় কাজ ঐতিহ্য এবং শিক্ষার অজুহাত দেখিয়ে যুক্তিযুক্ত করা হয় তাহলে এই নীতিটি সারা বিশ্বেই গ্রহন করা উচিৎ। আমাদের জন্যে যা ভাল তা অন্যদের জন্যেও ভাল হওয়া উচিৎ।

এটি আমাদের একটি অপ্রতিভ অবস্থায় ফেলে দেয় কারন দাসত্ব প্রথাকে যুক্তিযুক্ত করা কি ঠিক যেখানে আফ্রিকা মহাদেশ এর বলি হয়েছে। এককালে দাসত্ব প্রথা একটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্য ছিল। অনেক সংস্কৃতিই দাসত্ব প্রথার উপর ভিত্তি করে ছিল, আফ্রিকারগুলো সহ। দাসত্ব তাই সেই সময়কার ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও রীতিনীতির সাথে সামন্জস্যপূর্ণ ছিল।

তিনি শেষ করছেন যুবতী গৃহপরিচারিকাদের দাসের মত ব্যবহারের নিন্দা করে এবং ঐতিহ্য এবং শিক্ষার হাস্যকর যুক্তির নমুনা দেখিয়ে।

“কারও মাথায় এটি কেন আসছেনা যে আমরা অন্যান্য সকল অপরাধীদেরও ক্ষমা করে দিতে পারি যদি আমরা এইসব পরিচারিকাদের উপর নির্যাতনকারীদের বা ছোট তালিবদের উপর ম্যারাবাউটদের দাসত্বকে ক্ষমা করে দেই। কারন হিসেবে আমরা যুক্তি দেখাতে পারি যে ঐসব অপরাধীরা এভাবেই শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং ঐতিহ্যগতভাবেই সেটি তারা করেছে।”

- মায়ালী আন্দ্রীয়ামানানজারা

Exit mobile version