ইন্দোনেশিয়ায় পুত্র উপ-রাষ্ট্রপতি পদে লড়ার সময় রাষ্ট্রপতি জোকোভি কি নিরপেক্ষ থাকতে পারেন?

রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের সমর্থনের অনুমতি পাওয়ার কথা বলেছেন
Jokowi

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ২ নভেম্বর, ২০২১ অনুষ্ঠিত বন ও ভূমি ব্যবহার সম্পর্কিত বিশ্ব নেতাদের সম্মেলনের সময় রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো। সূত্র: উইকিপিডিয়া সাধারণ/ রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের সংবাদমাধ্যম, গণমাধ্যম ও তথ্য ব্যুরো। প্রকাশ্য ডোমেইন।

ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো “জোকোভি” উইডোডোর বিরুদ্ধে ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত রাষ্ট্রপতি ও সাধারণ নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকার পূর্ব প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কিছু প্রার্থীর প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রথম ২০১৪ সালে নির্বাচিত ও ২০১৯ সালে পুনঃনির্বাচিত জোকোভিকে সাংবিধানিকভাবে তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থী হতে বাধা দেওয়া হয়েছে। একজন বর্তমান কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি তার অফিস বা রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলিকে একটি নির্দিষ্ট প্রার্থীর সুবিধার জন্যে ব্যবহার করার অনুমতিও তার নেই।

তবুও পর্যবেক্ষক ও বিরোধী দলগুলি লক্ষ্য করেছে জোকোভি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রবোও সুবিয়ান্তোর নির্বাচনী প্রার্থিতা প্রচার করছেন যার উপ-রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হলেন রাষ্ট্রপতির পুত্র জিবরান রাকাবুমিং রাকা।

ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দুটি রাষ্ট্রপতি বিতর্কের পর জোকোভি সাধারণ নির্বাচন কমিশনকে কর্মসূচির বিন্যাস পরিবর্তন করতে বলেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন এই পদক্ষেপটি অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে শক্ত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ প্রাবোওর সম্ভাবনা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সক্রিয়ভাবে নগদ ভর্তুকি প্রদানকারী প্রদেশগুলিতে জোকোভির পরিদর্শন প্রবোও এবং জিবরানের প্রার্থীতার পক্ষে নির্বাচনী সমর্থন বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে।

এটি রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মকর্তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রথম ঘটনা নয়। একটি বিচার বিভাগীয় প্যানেল নির্বাচিত কর্মকর্তাদের বয়সসীমা ৪০ থেকে ৩৫-এ নামিয়ে আনা একটি বিতর্কিত আদালতে অংশ নেওয়ার জন্যে জোকোভির ভগ্নিপতি প্রধান বিচারপতি আনোয়ার উসমানকে পদচ্যুত করেছে। জোকোভি নির্বাচনী প্রার্থীদের নিবন্ধনের আগের দিন জারি করা এই রায়টিতে অনুমতি দেন। উপ-রাষ্ট্রপতি প্রতিদ্বন্দ্বী তার পুত্রের বয়স ৩৬ বছর। পরবর্তীতে একটি নৈতিকতা প্যানেল সিদ্ধান্তে পৌঁছায় আনোয়ার “নিজেকে প্রত্যাহার না করায় বিচারকদের নৈতিক বিধি বিশেষত নিরপেক্ষতা ও সততার নীতি লঙ্ঘন করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে।”

বিরোধী দলের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী জাকার্তার প্রাক্তন গভর্নর আনিস বাসওয়েদান প্রথম রাষ্ট্রপতি বিতর্কের সময় আদালতের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বলেছেন:

ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের স্বার্থ অনুসারে অনেক নিয়মনীতি বাঁকা হয়েছে। সহ-সভাপতি হওয়ার মতো সহস্রাব্দের যেমন একজন আছেন তেমনি প্রান্তিক হয়ে থাকা জাতিকে সম্মান করার মতো সহস্রাব্দের আরো হাজার হাজার জেনারেল জেড আছে। তারা সরকারের সমালোচনা করলে তাদের সহিংসতা, এমনকি কাঁদানে গ্যাসের শিকার হতে হয়।

ইন্দোনেশিয়ায় কোনো রাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করতে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট দরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট অর্জিত না হলে জুনে আরেকটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবসানের নির্বাচন স্থির হবে। জরিপ অনু্সারে প্রবোও এগিয়ে থাকলেও তার পরিমাণ ৫০ শতাংশের নিচে। প্রবোওর সাথে জোকোভির আরো বেশি দৃশ্যমান হওয়ার চেষ্টার হয়তো এটাই কারণে।

জাকার্তা পোস্টের একটি সম্পাদকীয় রাষ্ট্রপতিকে মনে রাখতে বলেছে:

জ্বীন বোতলের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় সম্ভবত রাষ্ট্রপতির দিক পরিবর্তনের অনেক দেরি হয়ে গেলেও আমাদের নৈতিক বাধ্যবাধকতা আমরা তাকে নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি, আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করায় ইতিহাস তার প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করবে না।

গত দুই দশকে আমাদের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের নিরপেক্ষ থাকার ঐতিহ্য রয়েছে এবং সেই ভালো চর্চা অব্যাহত রাখা উচিত।

তা না হলে আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে।

সমালোচনার জবাবে জোকোভি প্রার্থীদের সমর্থনের অনুমতি পাওয়ার উপর জোর দিয়েছেন

রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার না করার শর্তে একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের সমর্থন করা ও পক্ষ নেওয়ার অনুমতি প্রাপ্ত।

এই বিবৃতিটি সুশীল সমাজ গোষ্ঠীগুলির থেকে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নির্বাচন ও গণতন্ত্র সমিতি (পারলুডেম) সতর্ক করেছে “রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব” দেখানোর জন্যে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে “এটি অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে পরিচালিত করতে পারে”। স্বচ্ছ নির্বাচনের সুশীল সমাজ জোট রাষ্ট্রপতি মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় একটি বিবৃতি জারি করেছে:

এই বিবৃতিটি ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এ ভোটের দিন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি তৈরি করেছে৷ রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের প্রকাশ্যে প্রচারণার অনুমতি দেওয়া হলে ক্ষেত্রটিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও সম্ভাব্য প্রতারণামূলক চর্চা হতে পারে৷

প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা সরঞ্জামাদির উপর রাষ্ট্রপতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকায় তা জনসমর্থনের নির্দেশ দিতে পারে বলে রাষ্ট্রপতির পক্ষপাতকে অবশ্যই হালকাভাবে নেওয়া যায় না।

জোটটি মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের “তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা ও নির্বাচনী রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে বিরত থাকার” আহ্বান জানিয়েছে।

টেম্পো সংবাদ ওয়েবসাইট একটি সম্পাদকীয়তে জোকোভি প্রবোও-জিবরান স্বার্থের “মুখপাত্র” হিসেবে কাজ করতে থাকলে তার গুরুতর পরিণতি সম্পর্কে লিখেছে:

তিনি প্রবোও ও তার পুত্রের জয় নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ না থাকেন তবে জোকোভি দুভাবে উপায়ে হেরে যাবেন। প্রথমত জুনে দ্বিতীয় ধাপের ভোটে রাষ্ট্রপ্রধানের নিরপেক্ষতার অভাবে জনরোষের ফলে প্রবোওর ভোটের ভাগ ভেঙে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত সংশোধনের যুগের শুরুর পর থেকে জোকোভিকে সবচেয়ে খারাপ রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্মরণ করা হবে। এই দুটি নিয়ামকের কারণে জোকোভি ইতিহাসের আস্তাকূঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে পারেন।

Exit mobile version