ডিজিটাল মঞ্চে জিম্বাবুয়ের তথ্য যুদ্ধ স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্যে হুমকি

ক্ষমতাসীন দল অনলাইন আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়

পিক্সাবে থেকে হাইঞ্জ শ্মিৎজ এর ছবি। পিক্সাবে লাইসেন্সের অধীনে মুক্তভাবে ব্যবহারে করার জন্যে।

জিম্বাবুয়ে নির্বাচন কমিশন (জেডইসি) ক্ষমতাসীন দলের উপ-রাষ্ট্রপতি কেম্বো মোহাদির মেয়েকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে জিম্বাবুয়ের অনেক নাগরিক সামাজিক গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে। নাগরিকরা ২০২৩ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে তার নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় অ্যাবিগেল অ্যামব্রোসের নিয়োগ জেডইসি‘র স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের মুখপাত্র নিক মাংওয়ানা দ্রুত তার নিয়োগের পক্ষাবলম্বন করে অন্য সবার মতোউচ্চ-প্রোফাইল ব্যক্তিদের সন্তান ও আত্মীয়দের তাদের দেশে চাকরি ও সেবা করার সমানাধিকার রয়েছে বলে যুক্তি দেন। আর “এজন্যেই একে ‘সমান সুযোগ’ বলা হয়,” বলেন মাংওয়ানা৷

এই সমস্যা নিয়ে পরবর্তী আলোচনা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সমস্যায় ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর ও সরকারের মধ্যে উচ্চ স্তরের মেরুকরণকে প্রতিফলিত করে, কারণ উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা ও বিভ্রান্তি দেশটির সামাজিক গণমাধ্যমের পটভূমিকে ক্রমেই কোণঠাসা করে চলেছে।

জিম্বাবুয়ে ২০২৩ সালের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রাজনৈতিক পরিবেশ রাষ্ট্র ও ভিন্নমতাবলম্বী কন্ঠের স্বীকৃত বর্ণনার একটি উত্তপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতারোহনে গতি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে অনলাইনে মূল রাজনৈতিক কুশীলবদের সমন্বিত অপ্রমাণিত আচরণ প্রচারণার ঝুঁকিতে পড়ার একটি সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।

জিম্বাবুয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রয়াত লৌহমানব রবার্ট মুগাবেকে ক্ষমতাচ্যুত করা অভ্যূত্থানের পর থেকে শাসকগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিজনিত আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিক অধঃপতনে ভুগছে। তাই শাসকগোষ্ঠীর উপর ইতিবাচক আলো ফেলার জন্যে রাষ্ট্রের আখ্যান তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা বা সত্যতা নির্বিশেষে তথ্য মন্থনের দিকে ঝুঁকছে।

গণমাধ্যম তথ্য ও সম্প্রচার পরিষেবা মন্ত্রণালয় সরকারের আচরণকে ন্যায্যতা দিতে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা ও তথ্য পরিবর্তনকে উচ্চ স্তরে নিয়ে গেছে। জিম্বাবুয়ে নির্বাচন কমিশনে মোহাদির মেয়ের নিয়োগে কোন অপ্রীতিকর বা অনিয়ম না হওয়ার বিষয়ে সরকারি মুখপাত্র মাংওয়ানার সাফাইয়ে স্পষ্ট। এটি অভিজাতদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্রের ন্যায্যতা প্রতিপন্নেও সুস্পষ্ট।

দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির পাশাপাশি শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টার ফলে নাগরিক স্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি ম্নাঙ্গাগোয়া শাসন পরিবর্তনের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে “সরকা্র সমালোচক”দের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে নাগরিকদের উস্কানি দিতে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করেছে। জিম্বাবুয়ের সামাজিক গণমাধ্যম বাস্তুতন্ত্রে বিভ্রান্তি ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণার একটি নতুন যুগ শিকড় গজিয়েছে বলে এটি এক ধরনের সঙ্কর প্রযুক্তি-চালিত যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছে।

দেশের রাজনীতিতে প্রযুক্তির ভূমিকা

২০১৭ সালের নভেম্বরে মুগাবেকে ক্ষমতাচ্যুত করা অভ্যুত্থানের আগে ক্ষমতাসীন দল ও সেনাবাহিনী মুগাবের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে সামাজিক গণমাধ্যমের সমাবেশ সহ্য করেছিল। মুগাবেকে চলে যেতে হবে বলে জনগণকে বোঝানোর জন্যে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সামাজিক গণমাধ্যম উভয় মঞ্চে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতি ম্নাঙ্গাগোয়ার অধীনস্থ বর্তমান নেতৃত্ব বিপ্লব বাস্তবায়নে সামাজিক গণমাধ্যমর শক্তি জানতো বলে কয়েক বছর পরে তার নতুন সরকার সরকারি রাষ্ট্রীয় বর্ণনার সাথে ভিন্নমত পোষণকারীদের কথিত দেশ-বিরোধী বিদেশী ও অন্যায় নিষেধাজ্ঞাপুষ্ট শাসন পরিবর্তনের এজেন্ডাধারী আখ্যা দিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমের উপর দমনাভিযান চালিয়ে ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরকে গ্রেপ্তার করছে। তবুও ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কৌশলগত তথ্য সম্প্রচারের মধ্যে গতিশীল ইন্টারপ্লে বোঝাটা আরো গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাডভক্সের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যম উৎকর্ষের আফ্রিকীয় কেন্দ্রের অনলাইন বিষয়বস্তু প্রযোজক ক্লেয়ার মুহিন্দো বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র পার্থক্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন৷ “বিভ্রান্তি হলো স্পষ্টতই মিথ্যা ছড়ানোর জন্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ছেড়ে দেওয়া যা ক্ষতির কারণ হয়। বেশিরভাগ সময় একটা উদ্দেশ্য নিয়েই কেউ মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডা হলো বিদ্বেষ ও নেতিবাচক অর্থপূর্ণ বিভ্রান্তির একটি গুচ্ছ,” মুহিন্দো অ্যাডভক্সকে ব্যাখ্যা করেছেন।

ডিজিটাল প্রযুক্তির ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুহিন্দো বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি বিভ্রান্তি ছড়ানো এজেন্টদের কাজকে সহজতর করে দিয়েছে। “বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে আবেদন করার একটি বিশাল মঞ্চ প্রদান করে বলে ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর ক্ষেত্রে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। এটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণার প্রচারকে সহজতর করার সরঞ্জামগুলির সাথে বিভ্রান্তির বাহকদেরও সরবরাহ করেছে,” তিনি বলেন।

মুহিন্দো আরো বলেছেন ডিজিটাল মঞ্চগুলি সর্বোত্তমভাবে আগে থেকেই বিদ্যমান মিথ্যা তথ্যের বিস্তারের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে এবং এটা একটা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত।

ক্ষমতাসীন দল জাতীয় আলোচনার উপর আধিপত্য চায় বলে জিম্বাবুয়েতে একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও রাষ্ট্রপতি ম্নাঙ্গাগোয়ার উপদেষ্টা ক্রিস মুতসভাংওয়া আগেই যুক্তি দেখিয়েছেন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলি জন্যে দেশের কোন সমস্যা হয়নি, বরং এটি হয়েছে মুগাবে শাসনের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার জন্যে। তবে ২০২০ সালে মুতসভাংওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলি জিম্বাবুয়ের আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করার জন্যে পরিকল্পিত বলে একটি বর্ণনা ঠেলে দিয়েছিলেন। প্ররোচনার লক্ষ্য অর্জনের জন্যে ডিজিটাল মঞ্চ ব্যবহার করাসহ ক্ষমতায় থাকার ন্যায্যতা প্রমাণের জন্যে ক্ষমতাসীন দল গণযোগাযোগকে যে মূল্য দেয় সেটা স্পষ্ট।

অ্যাডভক্সের সাথে অন্য একটি সাক্ষাৎকারে নামিবিয়া গণমাধ্যম ট্রাস্টের পরিচালক জো টাইটাস ব্যাখ্যা করেন ডিজিটাল যুগ মানুষকে তথ্য এবং এর ভাগভাগি সম্পর্কে আলাদাভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে৷ “উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে, ইচ্ছাকৃত এবং একটি নির্দিষ্ট ফলাফল অর্জনে জনমত পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিকল্পিত হয়,” তিনি বলেন।

টাইটাস উল্লেখ করেছেন ডিজিটাল প্রযুক্তিকে যেভাবে তথ্য প্রচারের ম্যাট্রিক্সে যুক্ত করা হয় তা মূলত সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলিতে ব্যবহৃত ব্যবসায়িক মডেলগুলির উপর নির্ভর করে। “তথ্য জীবন ও মৃত্যুকে প্রভাবিত করার মতো বিষয়। অনিয়ন্ত্রিত বলে সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলিকে একটি স্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে,” তিনি বলেন।

বিভ্রান্তি ও স্বাধীন মত প্রকাশ

দেশে অনেক বেশি সংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বিষয়ে সচেতন থাকার কারণে সরকার সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলিকে তার উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে মূল্যায়ন করে। তবে বর্ণনা নিয়ে ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর ও রাষ্ট্রের মধ্যেকার আধিপত্যের যুদ্ধের কারণে বাকস্বাধীনতার উপর যথেষ্ট প্রতিক্রিয়াসহ সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চ একটি সংঘাতপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। অনলাইন মঞ্চ ব্যবহার করে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা ও অপপ্রচারের বিকাশ ও বৃদ্ধি কর্তৃত্ববাদী শাসন ও গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণকে জোরদার করেছে।

পরাধীনতা পর্যবেক্ষক এর আরো কিছুর জন্যে অনুগ্রহ করে প্রকল্প পৃষ্ঠা দেখুন।

 

Exit mobile version