উন্নয়নকারীরা সেন্ট ভিনসেন্টের ভারতীয় উপসাগরের প্রবাল প্রাচীরটিকে মৃত বললেও এই ছবিগুলি বলছে অন্য কথা

'আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, মানে এই নয় যে এটি নেই"

সাগরতলের ঘাসের উপর বিচরণশীল মাছ, ভারতীয় উপসাগর, সেন্ট ভিনসেন্ট। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

আলোকচিত্রশিল্পী নাদিয়া হাগিনসের শৈশবকালের একটি স্মরণীয় কাজ ছিল সুবিধাজনকভাবে সেন্ট ভিনসেন্টের রাজধানী কিংস্টাউনের নিকটবর্তী দক্ষিণ উপকূলীয় সমুদ্র সৈকতে ভারতীয় উপসাগরের উপকূল থেকে দূরবর্তী প্রবাল প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত স্বচ্ছ, নীলচে ফিরোজা জলরাশিতে সাঁতার কাটা। সৈকত এবং তার চারপাশের প্রবাল প্রাচীরের নথিপত্র “সূক্ষ্ম বিবরণ” নথিবদ্ধ করে বিগত ছয় বছরের বেশ সময় ধরে তার আলোকচিত্র চর্চার মাধ্যমে তিনি এই অঞ্চলকে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাচ্ছেন। তার ছবিগুলি সমুদ্র ও দ্বীপটির বাসিন্দাদের ওপর এর প্রভাব এবং যেভাবে তারা নিজেদের দেখছে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ করছে।

শিল্পী হিসেবে তার একটি বক্তব্যে তিনি যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, “সমুদ্রের সাথে বেশিরভাগ মানুষের অভিজ্ঞতা দিগন্তের সাথে চোখের স্তরে ঘটে থাকে এবং উপরিভাগের নীচে কী ঘটছে সে কথা তারা ভুলেই থাকে।” যেহেতু আপনি কিছু দেখতে পাচ্ছেন না, তার মানে এই নয় যে এটা নেই বোঝায় না” এই ধারণার প্রতি আমি আগ্রহী। এটা এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যাকে এখন বিশেষভাবে মর্মস্পর্শী বলে মনে হচ্ছে। কারণ এই অঞ্চলটি দ্বীপটির প্রস্তাবিত দক্ষিণ উপকূলীয় সামুদ্রিক সংরক্ষণ অঞ্চলের অংশ হওয়া সত্ত্বেও ,প্রবাল প্রাচীরটির একটা বড় অংশ – উপকূল থেকে প্রায় ১৫০ ফুট (৪৫.৭২ মিটার) অবধি বিস্তৃত প্রায় ১৭,৫০০ বর্গফুট (১,৬২৬ বর্গমিটার) বিস্তৃত সমুদ্র – খনন করে তার পরিবর্তে সেখানে একটি কৃত্রিম প্রবাল প্রাচীর তৈরি করে আমদানি করা বালি দিয়ে প্রতিস্থাপনের একটি প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে।

হাগিনস বলেছেন পর্যবেক্ষণ করা তথ্যগুলি এই অঞ্চলে প্রবাল প্রাচীরের পরিমাণ যে প্রচুর, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই স্থানীয় মৎস্যজীবনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বলে ইঙ্গিত দেয়। তিনি নিশ্চিত যে “এই অঞ্চলে জীবন রক্ষার একটা মূল্য রয়েছে […]”  এবং “ভারতীয় উপসাগরকে আবারো সজীব করা খুবই সম্ভব।” পরিস্থিতিটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে ফেসবুক পোস্টের ধারাবাহিকের প্রথমটিতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন:

মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই উপসাগর জুড়ে মূল জায়গাগুলিতে আমি নিজে আবারো এলখর্ন প্রবাল জন্ম নিতে দেখেছি। আমাদের সত্যিকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা দিয়ে বাস্তব কিছু করা সম্ভব কিনা ভেবে দেখুন; কৃত্রিম প্রবাল এর কোন সমাধান নয়।

আমি আমার দেশের সকল উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি দেখার পক্ষে হলেও অগ্রগতি এবং সংরক্ষণের মধ্যে খুব সরু রেখা রয়েছে মনে করি। কিছু জিনিস আছে যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে পবিত্র এবং সুরক্ষিত। প্রবাল প্রাচীরগুলি পুনরায় জন্মানোর ক্ষমতা রাখে। এমনকি একটি মৃত প্রবাল প্রাচীরও একটি বাস্তুতন্ত্রের  জন্যেএকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সাধন করে।

হাগিনস তার বক্তব্য প্রমাণ করার জন্যে তিনি এবং তার এক সহকর্মী আরো হালনাগাদ ছবি তোলার জন্যে ৪ জুলাই তারিখে আবারো জলে ফিরে গিয়ে দেখান যে প্রবালপ্রাচীরটিতে এখনো জীবন বহমান:

উন্নয়নকারীদের করা পরিবেশগত মূল্যায়ণে ভারতীয় উপসাগরের প্রবাল প্রাচীরটি মারা গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই দাবি প্রমাণে পানির নীচের একটি ছবিও নেই। সবগুলি ছবি তোলা হয়েছে সৈকতের উপর থেকে। এখানকার বেশিরভাগ লোকজন যেভাবে কোন কিছু দেখে, আসলে কী ঘটছে তা বোঝার জন্যে কখনোই সমস্যার যথেষ্ট গভীরে না গিয়ে জিনিসের উপরের স্তরটাই দেখে শুধু […] ছবিগুলি একবার দেখে আমাকে বলুন এটাকে একটা মৃত প্রবাল প্রাচীরের মতো দেখায় কিনা।

উপকূলের খুব কাছাছি সামুদ্রিক ঘাসের বিছানা; সামুদ্রিক কচ্ছপের একটি আদর্শ আবাসস্থল এটি। ২০২১ সালের ৪ জুলাই তারিখে নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

এলখর্ন প্রবালের শৈশব পর্যায়, ৪ জুলাই, ২০২১ তারিখে ০.৩ মিটার (১ ফুট) গভীরতায়, অবস্থানের স্থানাঙ্ক ১৩°০৮’১২.৮”উ এবং ৬১°১২'৩২.০″প। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

মস্তিষ্ক প্রবাল, ৪ জুলাই, ২০২১। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

৪ জুলাই, ২০২১ তারিখে মস্তিষ্কের প্রবাল থেকে সামুদ্রিক প্রাণী উঁকি মারছে। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

খোলসে ঢাকছে জোনটিড, ৪ জুলাই, ২০২১। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

সাদা সামুদ্রিক সজারুর গুচ্ছ, ৪ জুলাই, ২০২১। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

তারা প্রবাল, ৪ জুলাই, ২০২১। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

“খোলা চোখে একটি প্রবাল প্রাচীরকে দেখতে একটি মৃত বাদামি পাথরের মতো মনে হতে পারে [কারণ] মানুষের চোখ কেবল পানির নীচে বর্ণের একটি নির্দিষ্ট পরিসীমা পর্যন্ত দেখতে পারে,” এরকম একটি যুক্তি দিয়ে “রঙের বর্ণালী যে আসলেই রয়েছে” আরো ভালভাবে সেটা দেখানোর জন্যে হাগিনস তুলনামূলক কাঁচা এবং ফিল্টার করা ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি তার পোস্টে মন্তব্যকারীদেরকে দেশের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করার পরামর্শ দিয়ে লা ভু হোটেল ও বিচ ক্লাবেনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নথিগুলি দেখার অনুরোধ করেছেন।

এদিকে, ফেসবুক ব্যবহারকারী কারেন পামার এটিকে অগ্রহণযোগ্য” বলেছেন এ কারণে যে “[উন্নয়নকারীদের] অনুরোধের সাথে জমা দেওয়া ‘মূল্যায়ন’টি একজন পরিবেশ প্রকৌশলী করলেও তাতে সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের মতো কারো মতামত একেবারেই ছিল না”:

এতে প্রবাল প্রাচীরটি যে মারা গেছে এমন যুক্তির পক্ষে তথ্যের অভাব রয়েছে, কাঠামোগত পরিকল্পনা এবং কাজটি কীভাবে পরিচালিত হবে তার দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে এবং প্রস্তাবিত যেকোন কাজ সঠিক ও দায়িত্বপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্যে ঠিকাদারদের কীভাবে দায়বদ্ধ করা যাবে তারও পর্যন্ত কোন উল্লেখ বা এমনকি এতে প্রবাল প্রাচীর অপসারণের নেতিবাচক বিভিন্ন প্রভাব জানানোর মতো কোন সমীক্ষাও তালিকাভুক্ত নেই। এটা বর্তমান সময় ও যুগে কারো কাছে প্রস্তাবিত সামুদ্রিক উদ্যানের মধ্যে থাকা প্রবাল প্রাচীরের একটি অংশকে তো দূরে থাক, জীবিত প্রবাল প্রাচীরটিকে অপসারণের প্রস্তাব দেওয়া অবিশ্বাস্যভাবে কতোটা বোধশক্তি এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন – সেই বাস্তবতারও বাইরে।

উন্নয়নটিতে জড়িত এঅ্যান্ডএ ক্যাপিটাল ইনকর্পোরেশনের জনাব আদেম আদেম হাগিন্সের ছবিগুলির প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেছেন “আপনারা যে ছবিগুলি দেখছেন সেগুলি আমরা যেখানে একটি কৃত্রিম প্রবাল প্রাচীর তৈরি করবো; আমরা যেখানটা পরিষ্কার করার পরিকল্পনা করছি সেখান থেকে এটা অনেক দূরে।” তিনি আরো বলেছেন যে “লক্ষ লক্ষ বছরেও এই প্রকল্পের কোন বিনিয়োগকারী জীবিত প্রবাল প্রাচীর সরানোর চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা করবে না; আমি যে কাউকে এসে উপকূলের কাছে থাকা মরা প্রবালগুলি দেখে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাই”। তিনি পামারের এই গ্রুপটির সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের সাথে পরামর্শ না করার  অভিযোগকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন:

অঞ্চলটি দেখার জন্যে আমরা সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের নিয়োগ দিয়েছি; প্রবালগুলি উন্মুক্ত হওয়ার বিভিন্ন সময়ে তারা বেশ কয়েকটি ছবি তুলেছে এবং সেগুলো জীবিত কোন প্রবাল নয়।

জবাবে প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাগিনস তার ক্যামেরার ফোকাল দৈর্ঘ্যের মেটাডেটা তথ্যের পাশাপাশি একটি ছবি পোস্ট করেছেন:

পটভূমিটা এতো স্পষ্টভাবে কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে গিয়ে (যার জমিনের সংকীর্ণ গভীরতা উল্লেখ করা হয়েছে) আপনাকে তীরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করতে হয়েছে, যেমনটা আপনি নারকেল গাছ এবং বিল্ডিংয়ের ক্ষুদ্র অংশ থেকে দেখতে পাবেন।

এই প্রবালটির জিপিএস স্থানাঙ্কগুলি মোটামুটি ১৩.১৩৬৮০২, -৬১.২০৮৮৫৬। এতে প্রস্তাবিত খনন অঞ্চলের কাছে একটি এলখর্ন প্রবালকে বেড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে।

দয়া করে আমাকে মামাগাই করবেন না।

“মামাগাই” হলো মিথ্যা কথা বলে প্রতারণার ক্যারিবীয় অভিব্যক্তি।

অন্য একটি ফেসবুক পোস্টে, হাগিনস প্রস্তাবিত উচ্ছেদ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি সঙ্কটপূর্ণভাবে বিপন্ন এলখর্ন প্রবাল উপনিবেশের ছবি ভাগাভাগি করে উল্লেখ করেছেন যে প্রজাতিগুলি “বিশেষকরে হারিকেনের মরসুমে – বর্তমানে আমরা মাঝখানে রয়েছি – ঢেউ ভাঙ্গার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভারতীয় উপসাগরে এলখর্ন প্রবাল। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

২০২১ সালের আটলান্টিক হারিকেন মরসুমের প্রথম বড় ঝড় এলসা-র সাম্প্রতিক গতিপথে আক্রান্ত ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্যতম হলো সেন্ট ভিনসেন্ট।

ভারতীয় উপসাগরে এলখর্ন প্রবালের উপনিবেশ। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

একদিকে স্থানীয় এবং আঞ্চলিক সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা যেমন বিদ্যমান প্রাকৃতিক প্রবাল প্রাচীরটি সংরক্ষণের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে একটি অনলাইন আবেদন চালুর সাথে সাথে ইতোমধ্যে ২,০০০ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে তেমনি অন্যদিকে, ভারতীয় উপসাগরের তল ভরে উঠছে প্রাণ প্রাচূর্যে:

ভারতীয় উপসাগরে চলমান জেলিফিশ। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

ভারতীয় উপসাগরে বেলে ডলার নিয়ে খেলছে মাছগুলো। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

ভারতীয় উপসাগরের কাঁকড়া একটি সামুদ্রিক সজারু খেতে যাচ্ছে। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

জীবনে পরিপূর্ণ ভারতীয় উপসাগরের প্রবাল প্রাচীর। নাদিয়া হাগিনসের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

আপনি এখানেএখানে এবং এখানে নাদিয়ার ভারতীয় উপসাগরের আলোকচিত্র দেখতে পারেন।

Exit mobile version