অনলাইন ফটো সংগ্রহশালায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপান ও জাপানী আমেরিকান নাগরিকের গাথা

থিওডোর আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন এর ছবি এখন সংরক্ষণ করছেন ডেনশো ডিজিটাল রেপোসিটোরি।
General MacArthur lands in Japan

শিরোনাম “সি-৪৫ বিমান চড়ে আতসুগি বিমান ঘাটিতে এসে হাজির হলেন জেনারেল ম্যাকর্থার। এই বিমানঘাঁটি টোকিও থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। আর এটি ছিল জেনারেল ম্যাকর্থারের প্রথম জাপান দর্শন। ধারণা করা হয় ফটো ডিভিশন এসক্যাপ এর এক ফটোগ্রাফার এই ছবিটি তুলেছিল। এসক্যাপের এক কর্মী হিসেবে জাপানে কাজ করার সময় টেড আকিমোতো পালাক্রমে এই সকল ছবি সংগ্রহ করেছিলেন। সৌজন্যে থিওডোর আকিমোতো ফ্যমিলি কালেকশন। সিসি-বাই -এনএস ৪.০।

এক গুচ্ছ ফটো যা অনলাইনের এক ফটো সংগ্রহশালা থেকে প্রাপ্ত, সেগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানের কিছু দৃশ্য তুলে ধরেছে যে সময় মিত্র বাহিনীর অধীনে জাপান নিজের পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

থিওডোর আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন এ ২৫০ এর বেশী ছবি রয়েছে যার কয়েকটি তুলেছেন স্বয়ং থিওডোর আকিমোতো নিজে, আর অন্যগুলো জেনারেল ডগলাস ম্যাকর্থার এর অধীনস্থ এক বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তিনি সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেনারেল ডাগলাস ম্যাকর্থার ছিলেন মিত্র সুপ্রিম কমান্ডার অফ অ্যালায়েড পাওয়ার (এসক্যাপ) নামে পরিচিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ সামরিক কমান্ডার, কার্যত যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একজন একচ্ছত্র শাসক হিসেবে কয়েক বছর জাপান শাসন করেন।

টেড আকিমোটো ছবি তুলছেন। শিরোনাম “আমাদের ক্যামেরা ৪x৫ এর গতির গ্রাফিক্সের জন্য অনেক ভারি, সে সময় কোন কিছুই স্বয়ংক্রিয় ছিল না। সে সময় ছবি তোলার জন্য কাঠের একটি ফিল্ম হোল্ডার ধরে থাকতে হত, যার একপাশে একটা ফিল্ম থাকত, এটিকে পেছনে রাখতে হত, একটা স্লাইড বের করতে হত, সেটিকে ফ্লাশ বাল্ব এ রাখতে হত, এরপর এক্সপোজার বের করতে হত এবং সাটার কক করতে হত, তারপর স্টপ সেট করতে হত সবশেষে ফোকাস করে ছবি তুলতে হত। এরপর স্লাইডটি হোল্ডারে রাখতে হত তারপর হোল্ডারটি সরিয়ে নিতে হত, আবার এটিকে পাল্টে জায়গামত রাখতে হত। আবার ক্যামেরায় ফিরে আসতে হত। আবার স্লাইড সরিয়ে নিয়ে নতুন করে ফ্লাশবাল্ব এ রাখতে হত। থিওডোর আকিমতো ফ্যামিলি কালেকশন এর সৌজন্যে। সিসি-বাই-এনসি-এসএ ৪.০

থিওডোর আকিমতো ফ্যামিলি কালেকশন এর ছবি এখন ডেনসু ডিজিটাল রিপোসিটোরি নামের এক প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করছে, যে প্রতিষ্ঠানটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ শিবিরে আটকে রাখা জাপানী আমেরিকানদের ছবি, নথি, সংবাদপত্র, চিঠি এবং অন্যান্য প্রাথমিক তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে। থিওডোর আকিমোতো ছিলেন এ রকম এক জাপানি আমেরিকান নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পূর্বে তিনি পরিবারের সাথে তাকে এক বিশেষ শিবিরে থাকতে হয় এবং ঘটনাক্রমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাপানে মিত্রবাহিনীর অবস্থানের সময় তিনি উক্ত বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে সেখানে কর্মরত ছিলেন।

থিওডোর আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন এর বিষয়ে ডেনশোহ ডিজিটাল রেপসিটোরি বলছে:

থিওডোর আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন এর উদ্যোক্তা ছিলেন থিওডর আকিমতো। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৪৪ রেজিমেন্ট কমব্যাট টিমের একজন সদস্য হিসেবে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ, ৭১ ফার্স্ট সিগনাল ব্যাটেলিয়ান ও ফোটো ডিভিশন এসকাপে কর্মরত ছিলেন, এ কারণে তার এই সংগ্রহশালা এক বিশেষ সময়ে তোলা ছবির মত উপাদানে সমৃদ্ধ। তার বেশীর ভাগ সংগৃহীত ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকার সেনাবাহিনী যখন জাপানে অবস্থান করছিল সে সময়ে তোলা।

থিওডোর (টেড) আকিমোতোর সিরিজের ধারা বর্ণনাকারীর মতে থিওডোর আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন এর সব ছবি আকিমোতোর নিজের তোলা নয়, বরঞ্চ যুদ্ধ পর জাপানের উপস্থিতির সময় সামরিক কাজের উদ্দেশ্যে যে সমস্ত ছবি তোলা হয়েছে এই সংগ্রহশালা সেসবের ছবি। এর সকল ছবি ক্রিয়েটিভ কমন্স এট্রিবিশন-নন কমার্শিয়াল-শেয়ার এলাইক ৪.০ ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্স অনুসারে এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে।

শিরোনাম “আমাদের আগুন বোমার কার্যকারিতার প্রমাণ সর্বত্র, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়া নির্গমন করা চিমনির সারি ও কনক্রিটের দেওয়াল সকল দাঁড়িয়ে আছে যেখানে। থিওডোড় আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন। সিসি-বাই-এনসি-এসএ ৪.০।

জাপান ৭ জুলাই, ১৯৪১ এ যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর পার্ল হারবারের বিমান হামলা চালায়। সে সময় আকিমোতো তার পরিবারের সাথে ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস এ বাস করছিলেন২০১৬ অল থিং কনসিডারিং সেগমেন্ট নামের এক অনুষ্ঠান যা আমেরিকার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) থেকে প্রচারিত হয় তার তথ্য অনুসারে, এই পরিবারের তিন সন্তান ভিক্টর, জনি ও টেড আকিমোতো তার পরের দিনই আমেরিকার সামরিক বিভাগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগদানের প্রচেষ্টা চালায়, যেদিন তাদের পরিবারকে লস এঞ্জেলস এর বড়ি থেকে বন্দুকের নলের মুখে সরিয়ে নেওয়া হয়। জাপানের এই বিমান হামলার পরই হাজার হাজার জাপানী আমেরিকানদের তাদের গৃহ থেকে উচ্ছেদ করা হয়, এরপর তাদের এক দুর্গম স্থানে নিয়ে রাখা হয়। সে সময় তারা তাদের সকল অধিকার হারিয়ে ফেলে।

ঘটনাক্রমে এই তিন ভাই ৪২ রেজিমেন্টাল কমব্যাট দলে নাম লেখায়, এটি এমন এক সামরিক শাখা যার পুরোটা গঠন করা হয়েছিল জাপানী আমেরিকান অভিবাসীদের নিয়ে যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ও সেবা প্রদানে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিত। ভিক্টর ও জনি যুদ্ধকালীন সময়ে ইউরোপে নিহত হয়। এদিকে টেডকে যুদ্ধের পর জাপানে জেনারেল ডগলাস ম্যাকর্থার এর বাহিনীর এক ফটোগ্রাফার হিসেবে পাঠানো হয়।

শিরোনাম “গিনজা ১৯৪৬”। থিওডোড় আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন। সিসি-বাই-এনসি-এসএ ৪.০।

এই সকল সংগৃহীত ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পুনর্নির্মাণের যে গতি তার এক ছবি সরবরাহ করে। উপরের এই ছবিটি ১৯৪৬ সালে তোলা। এই ছবিতে গিনজা এলাকাকে দেখা যাচ্ছে যা টোকিওর এক সমৃদ্ধশালী শপিং এলাকা ছিল, ছবি তোলার সময় দেখা যাচ্ছিল সে সময় এর বড় অংশ বিধ্বস্ত ছিল, যার অনেক দৃষ্টিনন্দন…কাঠামো। নীচের ছবিটি এক বছর পরে নেওয়া, এতে দেখা যাচ্ছে একে নতুন করে গড়া হয়েছে, এতে এখন অনেক বেশী পরিমাণ ট্রাক, বাস ও অন্যান্য যান রাস্তায় চলতে দেখা যাচ্ছে।

শিরোনাম দি গিনজা ১৯৪৭/ দি গিনজা ১৯৪৬ এবং এক বছর পর। খেয়াল করুন কোনের এই ভবনটিতে পিএক্স চিহ্ন রয়েছে ১৯৪৭ সালের ছবিতে। ১৯৪৬ সালের আমেরিকান সেনাদের গাড়ির পরিমাণ কমে আসার বিষয়টি খেয়াল করুন। সৌজন্যে থিওডোড় আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন। সিসি-বাই-এনসি-এসএ ৪.০।

এই সকল সংগ্রহশালা প্রদর্শন করছে দেশটির সমৃদ্ধি অর্জনে এখনো কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে এবং সাফল্যের জন্য যার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাপানে অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটবে। গ্রামীন অঞ্চল তখনও বন্যায় আক্রান্ত যেমনটা নীচের এই ছবি প্রদর্শন করছে।

জাপানী একদল উদ্বাস্তু ভেলায় করে বন্যা আক্রান্ত গ্রামের দিকে যাচ্ছে। সইরকা ১৯৪৫-৪৬। থিওডোড় আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন। সিসি-বাই-এনসি-এসএ ৪.০।

যুদ্ধকালীন সময়ে যখন ধ্বংস করার বিষয়টির সম্ভবত ১৯৪৫ সালে যখন ইতি ঘটে তারপরে এগুলোর ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন রয়ে যায়। ফুকুওকা নামের এক আঞ্চলিক শহর যা ১৯৪৫ সালে ব্যাপক আগুন বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর এর বেশীর ভাগ অংশ পুনরায় নির্মাণ করা হয় যা আবার ১৯৪৮ সালের ভূমিকম্পে আরেকবার মাটির সাথে মিশে যায়। যুদ্ধ শেষে জাপানে থেকে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা এই বিপর্যয়কর ভূমিকম্পে ত্রাণ বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

ইএফসি-৪৮-৫৩৩১। ২৮ জুলাই ১৯৪৮ সাল ফুকাই, ভূমিকম্পের এক মাস পরে; দক্ষিণ জাপানের উপকূলীয় শহরে যে প্রাকৃতি বিপর্যয় ঘটে। ২৮ জুনে ১৯৪৮ সালে এক ভূমিকম্প কোন ধরনের সঙ্কেত প্রদান ছাড়াই নির্মম ভাবে আঘাত হানে, যার আগে নগরের এই উন্নয়ন পুনর্নিমাণের এক প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। সে সময় বিশেষজ্ঞরা হিসেব করে দেখেছিলেন যে জাপানী নাগরিকদের বাড়ি আবার নতুন করে নির্মাণে জন্য ছয় বছর লাগবে। ফটোগ্রাফার ডারগিস-ফটোগ্রাফ ইউএস আর্মির সিগনাল কোর পাবলিক ডোমেইন এর।

এই সংগ্রহশালায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কোরিয়া তোলা ছবিও রয়েছে, বিশেষ করে যখন মিত্র বাহিনীর সেনারা দেশটিকে জাপানীদের কাছ থেকে স্বাধীন করে।

শিরোনাম” কোরিয়াতে নাগরিকেরা যুদ্ধের শেষে আমেরিকার সেনাদের আগমনের অপেক্ষায়। থিওডোর আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন। সিসি-বাই-এনসি-এসএ ৪.০।

পরবর্তী সময়ে থিওডোর আকিমোতো জার্মানীতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিবিরের এক হাইস্কুলে ফোটগ্রাফির শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং সেখানে ৩০ বছর শিক্ষা প্রদানের পর ১৯৮৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে থিওডোর আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন এর ছবি কেবলমাত্র ডেনসো ডিজিটাল রেসপোসিটোরি সংরক্ষণ করে থাকে।

জাপানী এক নারী ভারী ব্যাগ কাধে চলেছে। থিওডোড় আকিমোতো ফ্যামিলি কালেকশন। সিসি-বাই-এনসি-এসএ ৪.০।

 

Exit mobile version