বাংলাদেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিকেরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে

রক্ত দান করার আহ্বান জানাতে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় নিচ্ছে

এডিস আলবোপিকটাস মশা, ডেঙ্গু জ্বরের বাহক। জেমস গাথানে এর ছবিটি উইকিমিডিয়ার মাধ্যমে পাওয়া। সিডিসি, পাবলিক ডোমেইন।

বিগত কয়েক বছরে, বিশেষ করে বর্ষাকালে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই বছর এটি উদ্বেগ জনক হারে বেড়ে গেছে , এ পর্যন্ত মোট ৭১৭৯ জন এই ডেঙ্গু রোগীর নাম তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে, আর এদের মধ্যে কেবল ২৮০০ জন রোগী জুলাই মাসের প্রথম পর্যায়ে এই রোগে আক্রান্ত হয়।

সম্প্রতি মহামারী আকার ধারণ করা ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরসমূহ যখন নিজেদের করণীয় কাজ বুঝে উঠতে পারছে না, তখন নাগরিকেরা এই বিষয়ে তাদের অভিযোগ প্রকাশে, কী ভাবে এই ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায় সে তথ্য তুলে ধরতে এবং কী ভাবে নাগরিকেরা নিজেদের ডেঙ্গুর আক্রমণ রক্ষা করতে পারবে সে বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। জুলাই মাসের প্রথম ১৬ দিনে প্রায় ২৮০০ ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়েছে- আজকের তাজা সংবাদ।

জুলাই মাসে সর্বোচ্চ নাগরিকের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে

২২ জুলাই এ সর্বোচ্চ ৪০৩ জন ডেঙ্গু রোগী ২৪ ঘন্টা সময়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয় । বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে, অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে, আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণের ফলে ও পরিচ্ছনতা অভিযান অনিয়মিত হওয়ায় ডেঙ্গুর আক্রমণ তীব্র হয়েছে। অনেকে জানাচ্ছে আগের বছরগুলোর চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু রোগ আরো প্রাণঘাতি হয়ে আক্রমণ করেছে।

মোহাম্মদ সাইফ নামের টুইটার ব্যবহারকারীর মতে :

বাংলা ট্রিবিউনে প্রদান করা এক সাক্ষাৎকারে ডাক্তার গুলজার বলেছেন, যে সকল নাগরিক পূর্বে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের পুনরায় এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী।

“এবার ডেঙ্গু ভাইরাস তার ধরন বদলেছে। আগের চেয়ে আরও বেশি দুর্ধর্ষ হয়েছে। ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম করছে বেশি। আরেকটা কারণ হতে পারে বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। অনেকে হয়ত জানতেও পারেননি তিনি আগে আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয়বার তারা যখন আক্রান্ত হচ্ছেন, তখন ব্যাপারটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটি ব্যবহারকারীরা তাতে আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। শফিক আহমেদ এ রকম এক নতুন রোগীর সংবাদ টুইট করেছে

টুইটার ব্যবহারকারী সর্ব বসন্ত উল্লেখ করেছে :

এই রোগ প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ কি যথেষ্ট?

বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় পাঠকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা মশা মরার ক্ষেত্রে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের যে কোন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে। ব্যবহারকারী মাইনুদ্দিন এই মহামারী প্রতিরোধে সরকারের বিস্ময়কর রকমের ঢিলেমির সংবাদ প্রদান করেছে:

কোন কিছুই চোখে পড়ছে না। সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানালেন যে মশা মারার ওষুধ আমদানী করতে আরো কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সাথে এটাও বললেন যে হয়ত এগুলো হাতে পেতে অক্টোবর মাস লেগে যেতে পারে। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। ??

ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে সরকার সঠিক ভাবে সাড়া দিতে ব্যর্থ বলে যখন প্রতীয়মান হচ্ছে তখন এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। অনলাইন সংবাদ পত্র হেলথ বার্তা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে একটি ইউটিউব ভিডিও আপলোড করেছে:

অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ডেঙ্গু রোগীর জন্য রক্তের আবেদন জানাচ্ছে। ব্যবহারকারী সাজ্জাদ ইসলাম খান তার ভাইয়ের জন্য রক্ত চেয়ে টুইট করেছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত তার ভাইয়ের জরুরী ভিত্তিতে রক্ত প্রয়োজন। হান্নান গাজীও একই ধরনের বার্তা টুইট করেছে :

স্বাধীন পত্রিকা দি চিটাগাং পোস্ট টুইট করেছে:

ডেঙ্গু মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র এর পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও মশক নিধন কর্মীদের সকল সাপ্তাহিক ও ঈদের ছুটি বাতিল করেছেন। তবে, ডেঙ্গু থেকে নাগরিকদের রক্ষার জন্য আরো অনেক জোরালো উদ্যোগের প্রয়োজন।

Exit mobile version