ছবিঃ ভানুয়াতুর এক দুর্গম দ্বীপে টিকা প্রদানের সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে ড্রোন

টিকার সরঞ্জাম নিয়ে ড্রোন কুকস বে দ্বীপে এসে হাজির হওয়ার পর সেটিকে ঘিরে জমায়েত হওয়া দ্বীপের নাগরিক সম্প্রদায়। ইউনিসেফের কাছে ছবি সরবরাহ করেছে সোয়াপ এরো।

“আজ ড্রোনের এক ক্ষুদ্র যাত্রা বিশ্বের স্বাস্থ্য সেবায় এক বিশাল সাফল্য এনে দিয়েছে।” এই কথাটি বলেছেন ইউনিসেফের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হেনরিয়েটা এইচ ফোরে। ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ এ ভানুয়াতুর এক দুর্গম দ্বীপে দ্রোন এক বাক্স টিকার সরঞ্জামাদি সফল ভাবে পৌঁছে দেওয়ার পর তিনি এই কথা উল্লেখ করেন।

ভানুয়াতু হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের অবস্থিত ৮৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এক রাষ্ট্র, আর এই ৮৩টি দ্বীপ ছড়িয়ে আছে সমুদ্রের ১২১৮৯ কিলোমিটার জুড়ে। ভানুয়াতু হল বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র যারা দুর্গম এলাকায় টিকার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে ড্রোন ব্যবহার করেছে।

ভৌগলিক ভাবে সীমাবদ্ধতা ছাড়াও ভানুয়াতুর যে সকল দ্বীপে মানুষ বাস করে সেখানকার মাত্র এক তৃতীয়াংশে বিমানবন্দর অথবা এ্যাসফল্ট এর সড়ক রয়েছে।

ভানুয়াতুর প্রতি ৫ জনের একজন হচ্ছে এমন শিশু যাদের সবগুলো টিকা প্রদান না করতে পারার কারণে তাদের সম্পূর্ণ ভাবে রোগ মুক্ত করা যায় না।

অস্ট্রেলিয়ার সোয়াপ আরোয়ার এই ড্রোন ডিলনস বে থেকে ইরোমাঙ্গো দ্বীপের পশ্চিম হয়ে কুকস বে দ্বীপের পূর্বে এসে হাজির হয়, আর এর জন্য তাকে ৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়, এই দূরত্ব অতিক্রম করতে এই ড্রোনের প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। ৫ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে এই পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রোন উড্ডয়নের কাজ পরিচালনা করা হয়।

দুর্গম এলাকায় অবস্থিত কুকস আইল্যান্ড এ কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই, নেই কোন বিদ্যুৎ নেই। কেবলমাত্র পায়ে হেঁটে কিংবা ছোট ছোট নৌকায় করে এখানে আসতে হয়।

৫, ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রোনের উড্ডয়ন। ছবি ইউনিসেফের, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

উপরে, আরো উপরে উঠে যাও, আর উড়তে থাকো, তারপর গন্তব্যস্থলে চলে যাও!!! সোয়াপ আরো প্রদর্শন করছে কীভাবে তারা এই সপ্তাহে টিকার সরঞ্জাম পৌছে দেওয়ার আগে পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রোনটিকে উড়িয়েছে।

বিশেষ করে যখন টিকার ঔষধ ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হয়, সেই প্রেক্ষাপটে টীকার বোতলগুলো ড্রোনে রাখার আগে একটা ফোমে ঢাকা একটি বাক্সে বরফ দিয়ে মুড়ে দিতে হয়।

কুকস বে এর এক দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের উপর থেকে তোলা এক ছবি। এখানে ড্রোন সফল ভাবে অবতরণ করেছে। ছবি জেসন চুট/ইউনিসেফের, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

কুকস বে এর নার্স মিরিয়াম নামপিল, ড্রোন এর মাধ্যমে সরবরাহ করা ভ্যাকসিন গ্রহণ করে সেগুলো ১৩টি শিশু ও পাঁচজন গর্ভবতী মহিলার শরীরে এই টিকা প্রদান করেন। এক মাস আগে পৃথিবীতে আসে শিশু জয় নাওয়া হচ্ছে প্রথম জন যাকে হেপাটাইটিস এবং যক্ষার টিকা প্রদান করা হয়। আর এর মধ্যে দিয়ে জয় বিশ্বের প্রথম শিশুতে পরিণত হল যার শরীরে বাণিজ্যিক ভাবে উড়ানো এক ড্রোন এর মাধ্যমে বহন করা টিকা প্রদান করা হয়।

নার্স মিরিয়াম নামপিলের নেতৃত্বে (ডানে) কুকস বে এর স্থানীয় একদল স্বাস্থ্য কর্মী সোআপ আএরো এর ড্রোন এর মাধ্যমে পাঠানো টিকার সরঞ্জাম গ্রহণ করছে। ছবি জেসন চুটে/ইউনিসেফ-এর, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে

নামপিল বিস্তারিতভাবে এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন:

যেহেতু প্রায়শ এই ধরনের যাত্রা হতে অনেক দীর্ঘস্থায়ী ও কষ্টসাধ্য, তাই আমি সরঞ্জাম নিয়ে শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য সেখানে মাসে মাত্র একবার যেতে পারতাম। কিন্তু আমার আশা করতে পারি যে ড্রোনের সুবিধা নিয়ে আমরা দ্বীপের অনেক দুর্গম এলাকায় বাস করা অনেক শিশুকে টিকা দিতে পারব।

টিকার সামগ্রী নিয়ে কুকস বে আইল্যান্ডে ড্রোন নামার পর সেটিকে ঘিরে সম্প্রদায়ের সকলের সমবেত হওয়া। ছবি জেসন চুটে/ইউনিসেফের, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

২০১৭ সালে ভানুয়াতু এবং ইউনিসেফ মিলে টিকা প্রদানের এলাকা আরো বাড়ানোর জন্য ড্রোন এর ব্যবহারের প্রথম প্রস্তাব করে। আর নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে ড্রোনের পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে অংশ নিতে অন্তত ১৩টি কোম্পানি তাদের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব জমা দেয়। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার বাস্তবতা এবং অর্থনৈতিক কারণে অনেক তাদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়। শেষ পর্যন্ত ভানুয়াতু সরকার ড্রোন এর মাধ্যমে টিকার সরঞ্জাম প্রদানের জন্য দুটি কোম্পানীর সাথে তিনটি চুক্তি করে। আর এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে ৫ ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক ড্রোনের যাত্রা শুরু হয়।

ভানুয়াতুতে ইউনিসেফের প্রধান এন্ড্রু পার্কার ড্রোন নিয়ে যে শঙ্কা তার প্রশমন করেছেন, বিশেষে করে এই ধারণাকে যে ড্রোন এর ব্যবহার স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে:

আমার কারো চাকরী ছিনিয়ে নিতে চাইনা, তার বদলে একটা পরিপূরক ব্যবস্থা চাই। পরবর্তী পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা নার্সদের কথা ভাবি। যাদের কাছে টিকার সরঞ্জাম থাকে না, আর যার ফলে তারা শিশুর চিকিৎসা করতে অপারগ হয়ে হতাশ হয়ে যায় এই কারণে যে সে জানে তার করণীয় কাজটি কী কিন্তু সেই মূহূর্তে সে কিছুই করতে পারছে না।

এখন ভানুয়াতু সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশটির স্বাস্থ্যসেবায় ড্রোন যুক্ত করার সম্ভাব্যতার বিষয়টি যাচাই করে দেখছে।

Exit mobile version