‘মিথ্যা সংবাদ’ লালনের অভিযোগ করে ব্রাজিলের বৃহত্তম সংবাদপত্রের ফেসবুক ত্যাগ

জানুয়ারিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংবাদের যোগান (নিউজফিডস) থেকে ব্র্যান্ড এবং মিডিয়াসহ বিভিন্ন পাতার প্রকাশিত বিষয়বস্তু কমিয়ে তার পরিবর্তে বন্ধুদের পোস্ট বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে। চিত্র: পিক্সাবে সিসিও

ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোর অন্যতম একটি পত্রিকা তার ফেসবুক পাতায় বিষয়বস্তু প্রকাশ বন্ধ করে দিয়ে ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পত্রিকাটির প্রায় ৬০ লক্ষ অনুসরণকারী রয়েছে।

ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধে ঘোষণা করা এই পদক্ষেপটি হয়ত এধরনের ব্যাপক অনুসৃত একটি প্রধান সংবাদ সংস্থার পাতার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব। সময়ই বলে দিবে যে অন্যান্য প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলো ফোলা (চাদর) সংবাদপত্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে কিনা।

মুদ্রণ এবং ডিজিটাল মিলে গণমাধ্যম গোষ্ঠী ফোলা দে সাও পাওলোর বিক্রয় তিন লক্ষ কপির কাছাকাছি। তারা বলেছে তারা মূলতঃ ফেসবুকের ব্যবহারকারীদের নিউজফিড বা সংবাদের যোগানে ফেসবুক পাতাগুলোর প্রকাশিত বিষয়বস্তু কমিয়ে তার পরিবর্তে বন্ধুদের পোস্ট বাড়ানোর লক্ষ্যের কথা ঘোষণা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক পরিবর্তন থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে:

[বর্তমান নিউজফিড] ব্যবহারকারীদের নিজেদের পছন্দের মতামতের বুদ্বুদ তৈরীর মতো বিষয়বস্তু এবং মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোর প্রবণতার পক্ষে কাজ করে।

প্রধান ফেসবুক পাতা ছাড়াও ফোলার আলাদা আলাদা বিভাগের ফেসবুক পাতাগুলি অতিরিক্ত ২ কোটি ২০ লক্ষের বেশি অনুসরণকারী নিয়ে গর্ব করে। ফোলা’র ফেসবুক পাতা পরিত্যাগের পরিকল্পনা নেই তবে তারা বলেছে এখন থেকে আর এগুলোর হালনাগাদ হবে না। প্রস্থান ঘোষণাকারী নিবন্ধটি হলো পাতাটির টাইমলাইনের শেষ পোস্ট।

ফোলা তার টুইটার (৬২ লক্ষ অনুসরণকারী), ইনস্টাগ্রাম (৭ লক্ষ ২৭ হাজার অনুসরণকারী) এবং লিঙ্কডইন (৭২ হাজার অনুসরণকারী) অ্যাকাউন্ট হালনাগাদ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।

এর অর্থ এই হবে যে ব্রাজিলীয়দের যারা ফেসবুক থেকে তাদের বেশিরভাগ সংবাদ পেয়ে থাকতেন তারা ভবিষ্যতে ফোলা থেকে এটি আর পাবেন না। তবে সম্পাদকীয়টিতে আরো বলা হয়েছে যে প্রযুক্তি কোম্পানী ফেসবুক তার অ্যালগরিদম পরিবর্তন ঘোষণা করার আগেই বিতরণ মঞ্চে তার শীর্ষস্থানটি হারিয়েছে। ফোলা নিজেই একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে যাতে ৫১টি পেশাদার গণমাধ্যম এবং ২১টি “জাল বা উত্তেজক সংবাদ” সাইটের ফেসবুক পাতার পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত প্রথম দলের ব্যবহারকারীদের মিথস্ক্রিয়াটি ১৭% কমতে দেখা গিয়েছে। একই সময়ে দ্বিতীয় (“জাল এবং উত্তেজক সংবাদ সাইট”) দলেরটি ৬১% বেড়েছে।

ফোলার কার্যনির্বাহী সম্পাদক সের্জিও ডি আভিলা গার্ডিয়ান পত্রিকার সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে  ফেসবুকের অ্যালগরিদম পরিবর্তনকেই এখনও “সিদ্ধান্তমূলক উপাদান” বলছেন:

পাতাগুলো থেকে পেশাদারী সাংবাদিকতাকে কার্যকরভাবে  নির্বাসিত করে সেখানে “মিথ্যা সংবাদ” বিস্তারের জন্যে ব্যক্তিগত বিষয়বস্তুকে জায়গা করে দেয়ার ফলে আমরা যারা মানসম্পন্ন বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে চাই তাদের জন্যে ফেসবুক বিরূপ ভূখণ্ড হয়ে উঠেছে।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে ব্রাজিলের “জাল সংবাদ” এবং ভুল তথ্য অস্বস্তিকর ছায়া ফেলছে। ২০১৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির রাষ্ট্রপতি দিলমা রৌসেফের  বিতর্কিত অভিশংসন এর পর এটাই হবে প্রথম ভোট।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ব্রাজিলের সরকার নিরীক্ষণের জন্য একটি কমিটি প্রতিষ্ঠা করেছে যেটি সম্ভবতঃ আসন্ন নির্বাচনের আগে সামাজিক গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন অবরোধ করার আদেশ দিতে পারে। সংবাদটি জনসাধারণের মধ্যে সেন্সরশিপের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৬২ সাল থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর ঔপনিবেশিক আভিজাত্যের ধারাবাহিক ফ্রিয়াস পরিবারের মালিকানাধীন ফোলা দে সাও পাওলোকে সাধারণভাবে ব্রাজিলের মূলধারার সবচেয়ে উদার মধ্যডানপন্থী পত্রিকা হিসেবে দেখা হলেও এর সঙ্গে ব্রাজিলীয় সমাজের আরো রক্ষণশীল খাতগুলো সংযুক্ত।

দীর্ঘদিন ধরে এটি এমনকি পুলিশকে তাদের গাড়ি ধার দেয়া থেকে শুরু করে ১৯৬৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের সামরিক শাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করার দায়ে অভিযুক্ত। পত্রিকাটি এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ২০০৯ সালে একটি সম্পাদকীয় সামরিক শাসনকে এটি লাতিন আমেরিকার সমসাময়িক অন্যান্য শাসকদের সাথে তুলনা করে ‘দিতাব্রান্দা (বড় ভাই)‘  বা ‘নিছক একনায়কত্ব’ হিসেবে উল্লেখ করলে বিক্ষুদ্ধ জনগণ সেসময় পত্রিকাটির সদর দপ্তরের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশে করেছিল।

২০১৩ সালে ফোলা পুলিশী দমন অভিযানকে সুরক্ষার জন্যে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করার পর একই দিনে ফোলা’র প্রতিবেদক জিউলিয়ানা ভ্যালোন চোখে একটি রাবার বুলেট বিদ্ধ হন। সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত ভ্যালোনের চোখে রক্তপাতের একটি  ছবি ছিল প্রতিবাদ বিক্ষোভটির একটি বড় বাঁক, যা পত্রিকাটিকে সমাবেশগুলো সমর্থনের দিকে ধাবিত করে।

Exit mobile version