ছবি প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা নেপালের বিস্ময়কর জীবন তুলে ধরছে

Photo of the year category winner image by Deepak Ratna Bajracharya. Used with permission.

বছরের সেরা ছবি বিভাগে পুরস্কার বিজয়ী দীপক রত্ন বজ্রাচারী। সৌজন্যেঃ ফটোজার্নালিস্ট ক্লাব নেপাল।

গত জুলাই-এর শেষ সপ্তাহে নেপালের এক ফটো জার্নালিস্ট ক্লাব আইএমই–গ্লোবাল আইএমই ব্যাংক নেপাল নামক ছবি প্রতিযোগিতার এবছরের পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষনা করা হয়। এই প্রতিযোগিতা নেপালের অন্যান্য ছবি প্রতিযোগিতার মধ্যে বিজয়ীদের সর্বোচ্চ অর্থ প্রদান করে থাকে। যে সমস্ত বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে সংস্কৃতি এবং পর্যটন, দৈনন্দিন জীবন, প্রকৃতি এবং বন্য জীবন, নেপালের হাসি, ক্রীড়া, সংবাদ, ছবির কাহিনী এবং বছরের সেরা ছবি।

ফটোজার্নালিস্ট ক্লাব আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অপেশাদার এবং পেশাদার উভয় ধরনের ফটোগ্রাফার অজস্র সংখ্যক ছবি পাঠিয়ে এতে অংশগ্রহণ করে। এ বছর সাতটি ভিন্ন বিভাগের জন্য ৮১১ জন ফটোগ্রাফার মোট ৬৬৭০টি ছবি পাঠায়।

এই প্রথম প্রতিযোগিতার নিয়ম ভেঙ্গে দীপক রত্ন বজ্রাচারী নামক এক সন্ন্যাসী এবং অপেশাদার ফটোগ্রাফারকে ২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সময় তোলা ছবির জন্য বছরের সেরা ছবি পুরস্কার প্রদান করা হয়, উল্লেখ্য এই ভূমিকম্পে হাজার হাজার নাগরিক মারা গেছে।

কান্তিপুর প্রকাশনার প্রাক্তন ছবি সম্পাদক বিকাশ রাউনিয়া তার ফেসবুকে বজ্রাচারীর জয়ের সংবাদ আবার তুলে ধরেন:

পিজে ক্লাব ফটো প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দীপক রত্ন বজ্রাচারীকে মূল বিভাগের প্রথম হওয়ার জন্য অভিনন্দন, যিনি সানকাটা (সঙ্কট) মন্দিরের একজন পূজারী, তিনি সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে ছিলেন এবং ভূমিকম্পের এক সত্যিকারের এক শক্তিশালী ছবি তুলেছেন!

এদিকে যখন পুরস্কার বিজয়ী অনেক ছবি নেপালের প্রতিদিনের জীবনের ভিন্ন ভিন্ন রং তুলে ধরেছে, সেখানে সংবাদ বিভাগে ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়া এক বাড়ীর ধ্বংসস্তুপের নীচে আটকে পরা এক ব্যক্তির ভয়াবহ ছবি প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। একই ঘটনায় খোকানা গ্রামের ধুলোর এক বিশাল ঝড়–এর ছবি দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করে।

সতর্কতাঃ নীচের এই ছবিটি গ্রাফিক ছবি 

২৫ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে এক ভূমিকম্প আঘাত হানার পর নেপালের কাঠমুন্ডুতে ধ্বংসস্তুপের নীচে আটকা পড়া এক ব্যক্তির শায়িত মৃতদেহ। এই তীব্র ভূমিকম্প ছিল ৭.৯ মাত্রার যা শনিবারের নেপালের প্রাচীন রাজধানী কাঠমুন্ডুর পশ্চিমে আঘাত হানে, যে ঘটনায় ৯,০০০ নাগরিক নিহত হয়। ছবি নাভেশ চিত্রকর-এর, সৌজন্যেঃ ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

তবে,সকলে এই ধরনের ছবিকে যথাযথ মনে করে না। একজন ব্যক্তি টুইট করেছে :

কারো উচিত সাংবাদিকদের শেখানো সাংবাদিকতা কাকে বলে, যারা রক্তাক্ত মৃতদেহের ছবি অনলাইন এবং ফেসবুকে পোস্ট করছে।

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫ সালে আঘাত হানা বিধ্বংসী ভূমিকম্প নেপালে আঘাত হানার পর ললিতপুর বিভাগে খোকানা গ্রামের আকাশে উড়তে থাকা ধোঁয়া এবং ধুলোর ঝড়। ছবি রাজেশ গুরং-এর, সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।


এখন, ফটোগ্রাফাররা যে সমস্ত সুখী মূহূর্তগুলো ধারন করেছে আসুন সে সব দেখি।

বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে ললিতপুরের বজ্রভারতী মন্দিরে অনুষ্ঠিত বাল চতুর্দশী উৎসবে হিন্দু রমণীরা প্রদীপ প্রজ্বলন নামক ধর্মীয় প্রথা প্রদর্শন করছে। এই ছবিটি সংস্কৃতি এবং পর্যটন বিভাগে সেরা ছবির পুরস্কার বিজেতা, ছবি দিনেশ শ্রেষ্ঠর, সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

নেপালের উৎসবসমুহ হচ্ছে নেপালের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের এক অংশ। অন্য অনেক উৎসবের মত এই বার্ষিক কার্তিক নাচ উৎসব (দেবতা কার্তিককে উৎসর্গ করে নাচা নাচ) পাটান দরবার স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হয়। কার্তিক নাচ হচ্ছে মাসব্যাপী চলা ঐতিহ্যবাহী নাচ এবং ঢোল বাজানো উৎসব যা হিন্দু চন্দ্র বর্ষপঞ্জি অনুসারে কার্তিক মাসে অনুষ্ঠিত হয়, ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে এটি অক্টোবর/নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এই ছবিটি সংস্কৃতি এবং পর্যটন বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার লাভ করেছে। ছবি আভাস কর্মচারিয়ার, সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

পয়োনিষ্কাশন পাইপের উপর দিয়ে এক বালিকার দেওয়া লাফ। এই ছবিটি প্রতিদিনের জীবন বিভাগে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে। ছবি নরেশ শ্রেষ্ঠর, সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

সামজং থেকে লোমান্থং যাওয়ার পথে এক নারী তার দুই সন্তান নিয়ে হাঁটছেন। আপার মুস্টাং হচ্ছে নেপালের হিমালয় অঞ্চলের এক দুর্গম এবং বিচ্ছিন্ন এলাকা। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আপার মুস্টাং ছিল সীমিত আকারে বেসামরিক এলাকা, যার ফলে এই এলাকাটি ছিল বিশ্বের অন্যতম এক সংরক্ষিত অঞ্চল, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক এখনো তিব্বতি ভাষায় কথা বলে। বহির্বিশ্বের কাছ থেকে তুলনামূলক বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে তিব্বতী সংস্কৃতি আলাদা ভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিনের জীবন বিভাগের দ্বিতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি। ছবি গোপেন রাই-এর। সৌজন্য ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

৯ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে এক মহিলা কাঠমুন্ডুর সানখুতে নেপালের আদিবাসীদের হাতে তৈরি কাগজ বানানোর উপাদান হিসেবে পরিচিত এক কাঠের ফ্রেম বহন করছে। হাতের তৈরি কাগজ লোক্তা নামক উপকরণ দিয়ে বানানো হয়। এটি এমন এক উপাদান যা কেবল সমুদ্র পৃষ্ঠের ৬,৫০০ থেকে ৯,৫০০ ফুট উচ্চতায় পাওয়া যায়। সাধারণত এই কাগজ সরকারী ও উৎসবের কাজে ব্যবহার করা হয়, আর এটি নেপালে ১৯টি প্রধান রপ্তানী পণ্যের একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রতিদিনের জীবন বিভাগের তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি। ছবি প্রতাপ থাপার। সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

চিতবোন ন্যাশনাল পার্কের মুয়ুরেরা। প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী বিভাগে প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত। ছবি রমেশ পোডোয়ালের। সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

গ্রীষ্মকালে ভালবাসা। প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী ছবি। তুলেছেন বিশপ তামারকার। সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল

এক গাছের গুড়ির বাসায় বসে থাকা একদল পেঁচা। প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর জীবন বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার বিজেতা। ছবি বিকাশ খাডগার। সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

কাঠমুন্ডুর, জিটপুর ফেডির এক ধান খেতে এক প্রবীণ ব্যক্তির আনন্দ ও উচ্ছলঘন মুহুর্ত। নেপালের হাসি বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত। ছবি সুলভ ভক্ত শ্রেষ্ঠর। সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল

রুকুম টাকসেরা গ্রাম উন্নয়ন কমিটির পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বাড়ীর ছাদে স্থানীয় শিশুরা ফুটবল খেলছে। যেহেতু এই পাহাড়ি এলাকায় তেমন একটা খেলার মাঠ নেই, তাই ছেলেরা বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ছাদের উপর খেলে থাকে। ক্রীড়া বিভাগে প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ছবি। ফটোগ্রাফার সুরবিন্দ্র কুমার পান। সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল

পাহাড় চুড়া থেকে তোলা, মুষ্টাং-এর মুক্তিনাথ এলাকার দুই পাহাড়ি বাইসাইকেল চালকের ছবি, ক্রীড়া বিভাগের তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ী ছবি। তুলেছেন উমেশ শ্রেষ্ঠা। সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপাল।

প্রতিযোগিতার সেরা ১৫০ টি ছবি এক প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হবে,যা নেপালের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন শহরে প্রদর্শিত হবে।

সৌজন্যে ফোটোজার্নালিস্ট ক্লাব, নেপালের নিজস্ব প্রেস কিট থেকে ছবিগুলো নেওয়া হয়েছে।
Exit mobile version