ফেইসবুকের মাধ্যমে মিয়ানমারের গ্রামীণ অধিবাসীদের উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রচার

Community deliberations during the drafting of the 'Village Book'. Photo from ActionAid

‘গ্রাম বই’ এর খসড়া তৈরির সময় সাম্প্রদায়িক বৈঠক। এ্যাকশনএইডের থেকে পাওয়া ছবি।

মিয়ানমারে গ্রাম ফেইসবুক প্রকল্পটি মিয়ানমারের গ্রামীণ নাগরিকদের ফেইসবুকে তাদের গ্রাম সম্পর্কে প্রতিবেদন আপলোড করতে উদ্বুদ্ধ করছে, যেন সরকারি আমলা, উন্নয়ন সহযোগী এবং সম্ভাব্য দাতা গোষ্ঠীগুলো গ্রামগুলো সম্বন্ধে সহজেই জানতে পারেন।

এ্যাকশনএইড মিয়ানমারের বিভিন্ন কার্যক্রমের পুরোভাগে থাকা এই প্রকল্পটি গ্রামবাসীদের নিজেদের “গ্রাম বই” এর খসড়া তৈরি করে ক্ষমতায়নের জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে অংশগ্রহণমূলক বিভিন্ন টুল ব্যবহার করছে। এই গ্রাম বইগুলো স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে নানা রকম উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সুপারিশ জানানোর ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এ্যাকশনএইড বলেছে, “এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রক্রিয়া। কেননা তাদের যা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি তার পরিবর্তে বরং তাদের প্রকৃত অর্থেই যা প্রয়োজন তা চিহ্নিত করতে এটি সাহায্য করে থাকে”।

সাম্প্রদায়িক বিচারবিবেচনার মাধ্যমে উঠে আসা বিভিন্ন তথ্য এই “গ্রাম বই” নামক দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে। একটি সামাজিক মানচিত্র, মৌসুমি দিনপঞ্জি এবং একটি সমস্যা গাছ এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা অধিবাসীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি গ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে থাকে। একটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং বেগবান বা সক্রিয় শক্তিকে চিহ্নিত করতে এতে একটি মাকড়সা মানচিত্র এবং ভেনচিত্রও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়াও গ্রামবাসীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন কার্যক্রম অথবা প্রকল্প বিশেষভাবে তুলে ধরতে এতে একটি স্বপ্ন মানচিত্র এবং কর্ম পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মেইখটিলা প্রশাসনিক উপবিভাগের কিন পোন চং গ্রামের ইউ হান সো উইন “গ্রাম বই” এর উপকারিতা বুঝতে পেরে বলেছেনঃ “আমি এমন একটি গ্রাম বই চাই, যেখানে আমাদের গ্রামের প্রকৃত অবস্থা যথাযথভাবে উপস্থাপিত হবে। আমি চাই আমাদের সকল চাহিদাঃ সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ এবং অন্যান্য চাহিদাগুলো এই বইয়ে চিত্রিত হবে”।

এ্যাকশনএইড সমগ্র মিয়ানমার জুড়ে ৫ শতেরও বেশি গ্রাম বইয়ের খসড়া তৈরি করতে সাহায্য করেছে এবং তাঁর মধ্যে ১ শত ২৯ টি বইয়ের নামে “গ্রাম ফেইসবুক” পেইজ রয়েছে। দলটি বলেছে প্রকল্পটি গ্রামবাসীকে তাদের সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আরও স্পষ্টভাবে কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করছে। পাশাপাশি দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের স্বপ্ন এবং উন্নয়ন চাহিদাগুলো কেবলমাত্র স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে শেয়ার করতে নয় বরং অন্যান্য দেশের সম্ভাব্য উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে শেয়ার করার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কন ডিনে গি গ্রামের “গ্রাম ফেইসবুক” পেইজটি একটি শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে

ভিডিওটিতে “গ্রাম বই” তৈরির প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে দেখানো হয়েছেঃ

বইগুলো তৈরি করতে যেসব কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁর কিছু, অংশের ছবি নিচে দেয়া হয়েছেঃ

পাকোক্কু গ্রামের “গ্রাম বই” সম্পর্কিত সভা। এ্যাকশনএইড থেকে নেয়া ছবি।

একটি গ্রাম সম্পর্কে এই সামাজিক মানচিত্রটি এক নজর দর্শন দেয়, যা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক এবং জনগণের জন্য বিদ্যমান সামাজিক অবকাঠামো সম্পর্কে বর্ণনা প্রদান করে থাকে। এটি সাট পিয়ার কিন গ্রামের একটি সামাজিক মানচিত্র, যেখানে ১২৪ টি বসতবাড়িতে ৪৪৪ জন লোকের বসবাস।

একটি মৌসুমি দিনপঞ্জি “একটি গ্রামের মানুষের জীবনধারণের রীতি সম্পর্কে লোকেদের বুঝাতে সাহায্য করে থাকে”। এটি কন ডিনে গি গ্রামের একটি মৌসুমি দিনপঞ্জি।

“বিভিন্ন সমস্যার কারণ এবং এসব সমস্যা সমাধানের যথাযথ উপায় বিশ্লেষণ করতে” সমস্যা গাছ ব্যবহার করা হয়। ওয়ার ইয়ুন সু গ্রামের অধিবাসীদের তৈরি করা একটি সমস্যা গাছ। এখানে ৭২ টি বসতবাড়ি রয়েছে।

“গ্রামবাসী সুদূর ভবিষ্যতে কেমন গ্রাম প্রত্যাশা করে” সেটাই স্বপ্ন মানচিত্রে তুলে ধরা হয়। কন ডিনে গি গ্রামের স্বপ্ন মানচিত্র।

একজন সংসদ সদস্যের কাছে “গ্রাম বই” উপস্থাপন করার পর সেই গ্রামের একজন মহিলা তাদের সম্প্রদায়ের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করতে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আকুল আবেদন জানান। এ্যাকশনএইড থেকে নেয়া ছবি।

এ্যাকশনএইড বাস্তবতা মেনে নিয়ে বলেছে যে ফেইসবুক পেইজগুলোকে সম্পূর্ণতা দান করা অত্যন্ত বড় একটি চ্যালেঞ্জ, কেননা মিয়ানমারের বেশীরভাগ গ্রামীণ শহরতলিতে ইন্টারনেট সুবিধা একেবারেই সীমিত। এখানে স্মার্টফোনের দামও খুব বেশি। এ ধরণের প্রযুক্তিগত আধুনিক যন্ত্র কিনতে দূরের শহরে যাওয়া অথবা ইন্টারনেট সুবিধা নিতে সাইবার ক্যাফেতে যাওয়া এবং ফোন কার্ড ব্যবহারের খরচ বহন করা গ্রামবাসীদের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়। তবে দলটি বেশ আশাবাদী যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশটির ইন্টারনেট সংযোগের দ্রুত উন্নয়ন ঘটবে।

এ্যাকশনএইড আবারও জোর দিয়ে বলেছে যে মিয়ানমারের আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য “গ্রাম বই” অথবা “গ্রাম ফেইসবুক” কোন যথাযথ সমাধান নয়। তারা বলেছে, “সমন্বিত উন্নয়ন সাধনের জন্য আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের যথাযথ এবং ন্যায়সঙ্গত অগ্রগতির জন্য সামগ্রিকভাবে সুদূরপ্রসারী একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন”।

জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারকেরা যখন দেশটির রাজধানীর উন্নয়নের জন্য নীলনকশা নিয়ে আলোচনায় বসেছেন, তখন তৃণমূল পর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা “গ্রাম বই” এবং “গ্রাম ফেইসবুক” এর মতো পদক্ষেপ নিতে বেশি আগ্রহ বোধ করছেন। কেননা উন্নয়ন প্রক্রিয়াতে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এ ধরণের পদক্ষেপ বেশ কার্যকর।

Exit mobile version