নেপালের ভূমিকম্প পরবর্তী জীবন তুলে ধরলো একটি ছবি প্রকল্প

A date none of us will forget, sketched on a wall in Pokhara. The quake spared Pokhara, but aftershocks have hit in the form of cancelled bookings and empty hotel rooms. Photo by @paavan11

পোখারার একটি ইঁটের দেয়ালে লিখে রাখা আছে দিনটি, যার কথা আমরা কোনোদিনই ভুলতে পারবো না। পোখারায় ভুমিকম্পের আঁচ খুব একটা লাগেনি। কিন্তু ভুমিকম্পের পরবর্তী কম্পনের কারণে বেশিরভাগ পর্যটক তাদের ভ্রমণ বাতিল করেছেন। হোটেল রুমগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন পাবান১১। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

গত কয়েক মাসে নেপালে পরপর তিনটি তীব্র মাত্রার ভুমিকম্প হয়েছে। এতে ৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২ মিলিয়ন মানুষ। তাছাড়া ৮ মিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনো ভাবে ভূমিকম্পে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। (আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য গ্লোবাল ভয়েসেস-এর বিশেষ কাভারেজ দেখুন।) নেপাল ছবি প্রকল্প এই দুর্যোগের ছবি তুলে রাখতে কাজ করছে।

কাঠমান্ডু’র দশজন আলোকচিত্রী এই প্রকল্পের জন্য কাজ করছেন। প্রকল্পের কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলোকচিত্রী সুমিত দয়াল এবং লেখক তারা বেদী। এই দু’জন গত ২৫ এপ্রিল ভূমিকম্প হওয়ার পরপরই ছবি তুলে রাখার প্রকল্প হাতে নেন। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ইনস্টাগ্রাম পাতায় ৬১,৪০০ জনের বেশি এবং ফেসবুকে ৭,৬০০ জনের বেশি অনুসরণকারী জুটেছে।

ক্রাউডসোর্সিং ছবির মাধ্যমে আলোকচিত্রীরা ভূমিকম্প পরবর্তী জীবন কেমন কাটছে, তাই তুলে ধরেছেন। তাদের তুলে ধরা ছবির মধ্যে যেমন ধ্বংসযজ্ঞ, উদ্ধার অভিযান, ত্রাণ কার্যক্রম, পুনর্গঠন রয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য আশার আলোও ফুটে উঠেছে।

প্রকল্পটি জনপ্রিয়তা পাবার কারণ খুব সাধারণ। যে কেউ #নেপালছবিপ্রকল্প হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এতে ছবি যুক্ত করতে পারেন। সাথে অবশ্য ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে একটা ক্যাপশন দিতে হয়। উদ্যোক্তারা একে আরো বেশি ব্যবহারিক এবং ব্যক্তিগত রাখতে চেষ্টা করেছেন।

প্রকল্পের সাম্প্রতিক ছবিগুলোতে নেপালে যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসছে এবং জনগণ দেশটিকে পুনর্গঠন করছে তা দেখানো হয়েছে।

এ হচ্ছে মঞ্জু গুরুং। যতোবারই আমি তার ছবি তুলতে গেছি, সে ততোবারই চাপা হাসি দিয়ে পালিয়ে গেছে। গত ২৫ এপ্রিলের পর থেকে তারা অন্য আরো দু’টি পরিবারের সাথে মুরগির জন্য বানানো শেডের নিচে বসবাস করছে। সম্প্রতি তার স্কুল খুলেছে। সে তার বন্ধুদের সাথে স্কুলে যেতে পেরে খুশি। তবে সে আমাকে বলেছে, স্কুলে কোনো ক্লাস হয় না। বন্ধুদের সাথে খেলেই সময় কাটে। তার আশা, আগামী সপ্তাহ থেকে স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হবে। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন সচিন্দ্র রাজবংশী। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

সিক্রিগ্রায়াং, নেপাল। বাড়ির জন্য কতোটুকু কাঠের দরকার হবে মান বাহাদুর তা বিলংয়ের কাছে জানতে চাইছেন। ৩১ বছর বয়সী বিলং পাশের দেশ ভারত থেকে এসেছেন। বাঁশের বাড়ি বানানোয় তার রয়েছে ৭ বছরের অভিজ্ঞতা। ভাষাগত ভিন্নতা থাকলেও তারা একে অপরকে ভালোই বুঝতে পারেন। ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়া মান বাহাদুরের বাড়ি নতুন করে বানাতে একসাথে কাজ করছেন তারা। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন উজ্জ্বলগার্গ০৪১২। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

ভূমিকম্পের পরে থেকে থেকে কেঁপে ওঠার ৪৬ দিন পার হয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে, সবকিছু ঠিক আছে। গত কিছুদিন ধরে দু’দিন পরপরই আমরা ৪.১ মাত্রার কম্পনের মুখোমুখি হচ্ছিলাম। মানুষজন এখন আগের মতোই দিন কাটাচ্ছে। শান্তিতে ঘুমাতে পারছে। ভয়ে, রাতে আর বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে না। রাস্তায় গাড়িঘোড়াও বেড়েছে। কাঠমুন্ডু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন সাগরছত্রী। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

ধ্বংসস্তুপের স্মৃতি: আমি যখন সানখু’র ধ্বংসস্তুপে ভরা একটি সরু গলি দিয়ে হেঁটে আসছিলাম, তখন এই ছবিটি দেখি। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, ছবির লোকজন রোদ পোহাচ্ছে। এই গ্রাম্য শহরে একদা এরকম দৃশ্য অহরহ চোখে পড়তো। এখন সর্বত্র শুধু ধ্বংসস্তুপ। এই ছবি একসময়ের সুখস্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন সচিন্দ্র রাজবংশী। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

বাঙ্গামাটির দিব্য জ্যোতি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। স্কুলটি কোআর্ট #রিবিল্ডিংবাঙ্গামাটি টিমের সদস্যরা পুনর্গঠন করে দিয়েছে। কিছু কিছু ক্লাস পুরোনো ভবনেই নেয়া হচ্ছে। টিমের সদস্যরা অদূরেই আরো কিছু আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করছেন। এপ্রিলের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরে গত সপ্তাহে নেপালের বেশিরভাগ স্কুল চালু হয়েছে। যদিও অনেক স্কুলের ভবন নিরাপদ নয়। সেজন্য খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস নেয়া হচ্ছে। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন কিশোরকেএসজি। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

আপনি একে যদি স্টিভেন স্পিলবার্গের ছবির দৃশ্য ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল হবে। আমি এই বালকটিকে যখন দেখি সে হাতে তৈরি খেলনা সামনে ঠেলছিল। খেলনাটি বানানো হয়েছে একটি লাঠির সাথে দু’টি ধাতুর চাকা দিয়ে। আমি তাকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দিয়ে তার খেলনাটি চালিয়ে যেতে দেখলাম। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন কেভিনকাস্টার।। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

১৮৫৫ থেকে ১৮৫৬ সালে নেপাল এবং তিব্বতের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। সে যুদ্ধে উভয় পক্ষের বিপুল সংখ্যক সৈন্য মারা যায়। যুদ্ধ শেষে হাইবাঙ্গের সৈন্যরা গ্রামে ফেরেন, তখন তারা তাদের নিহত সহকর্মী যোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বৃক্ষ রোপণ করেন। সেই গাছগুলো এখনো হাইবাঙ্গ গ্রামের প্রান্তদেশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন সচিন্দ্র রাজবংশী।। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

শহীদগেটে একটি ছোট্ট ধারাহারা বানানো হচ্ছে। ভূমিকম্পে পড়ে যাওয়া ধারাহারার স্মৃতি মনে রাখতে দু’জন মানুষ একটি ছোট্ট ধারাহারা বানাচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পে ঐতিহাসিক ধারাহারা ধ্বংস হয়ে যায়। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন ইন্সপায়ার্ডমনস্টার। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

নেপালের চাপাগাওয়ের ১৬ বছর বয়সী সুলোচনা মহাজন চরকায় সুতা কাটছেন। ভূমিকম্পের পরে বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে সে ও তার পরিবার বাড়ির পাশেই একটি তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছেন। ধ্বংসস্তুপের মাঝে তাদের দিন কাটে বিষণ্ন ভাবে। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন ইলিগার্ডনার। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

যতোবারে পারা যায় নেপালিরা তাদের দেশ পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিল্পী-সাহিত্যিকরা তাদের সৃজনশীলতা ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহের কাজ করছেন। এরা কাঠমান্ডুভিত্তিক শিল্পী সংগঠন আর্ট ল্যাবের কর্মী। তারা রাস্তার পাশের দেয়াল ব্যবহার করে আশাবাদ, শান্তি, সহানুভুতি ও সাহসের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া ভূমিকম্পে যারা মানসিক আঘাত পেয়েছেন, তাদের কাছে শিল্পকে একটি থেরাপি হিসেবে উপস্থাপন করতেও তারা দেয়ালে আশাবাদ আর সাহসের মন্ত্র লিখে রাখছেন। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন প্রাচ_ইজ_হেয়ার। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পের পরে চলতি সপ্তাহে নেপালের স্কুলগুলো খুলেছে। বটগাছের শীতল ছায়ার নিচে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এটি গোর্খার খুব কাছে সালয়ানতরে অবস্থিত। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন মিকানেস। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

কাঠমুন্ডুর একটি ক্যাম্পে পুলিশ কনস্টেবল এবং জুডো খেলোয়াড় প্রমীলা খাদকা মহিলা ও শিশুদের আত্মরক্ষার শিক্ষা দিচ্ছেন। একজন অংশগ্রহণকারী আমাকে বলেছেন “ক্যাম্পের পরিবেশ বাড়ির মতো নয়। চারদিকে অসংখ্য আগন্তুক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন একজন ছেলে যদি আমাকে উত্যক্ত করে, তবে সে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না”। নেপাল পুলিশের কাজ পছন্দ হলো। তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ অভিবাদন। নেপাল ছবি প্রকল্পের জন্য ছবি তুলেছেন পাবান১১। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

Exit mobile version