ব্যাঙ্কসির গাজা ভ্রমণ, বিশ্বকে কাজে নেমে পড়ার আহ্বান

A scene from Banksy's mini-documentary from his visit to Gaza

ব্যাঙ্কসির গাজা দর্শন, বিশ্বকে এই লড়াই-এ এগিয়ে আসার আহ্বান

বৃটেনের বিখ্যাত দেয়াল চিত্র শিল্পী ব্যাঙ্কসি ছদ্মবেশে গাজা ভ্রমণ করে গেছেন এবং দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে তার বেশ কিছু ধারাবাহিক চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়ে গেছেন, সাথে তিনি তার এই ভ্রমণ নিয়ে এক ক্ষুদ্র তথ্যচিত্র তৈরী করেছেন।

ব্যাঙ্কসি একই সাথে দুই মিনিটের এক ক্ষুদ্র ভিডিও প্রকাশ করেছে। যার শিরোনাম “এই বছরটিকে কাঙ্ক্ষিত বছরে পরিণত করুন, আপনি এক নতুন গন্তব্য আবিষ্কার করবেন”, আর তা তিনি নিজের ওয়েবসাইটইউটিউব পাতায় পোস্ট করেছেন। এতে, আমরা দেখতে পাই যে মিশর এবং ইজরায়েল সীমান্তে গাজার নাগরিকরা অসংখ্য যে সব সুড়ঙ্গ খুড়ে রেখেছে তার একটা দিয়ে বাংকসি গাজায় প্রবেশ করেছেন।

এই তথ্যচিত্র দেখে মনে হয় যেন এক পর্যটন বিজ্ঞাপনের বিদ্রূপাত্মক সংস্করণ, যেখানে বাংকসি এমন এক শহরে সবাইকে স্বাগত জানায় যা “পর্যটন কর্মকাণ্ডের অনেক বাইরে”। তিনি গাজার লোকদের বর্ণনা করে এভাবে তারা এই এলাকাকে এতটাই পছন্দ করে যে তারা কখনো এই এর বাইরে যায় না, আর এর আগে তিনি এক বন্ধনীতে যোগ করেন “কারণ তাদের এর বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই”।

ব্যাঙ্কসির “এই বছরটিকে কাঙ্ক্ষিত বছরে পরিণত কর, একটা নতুন গন্তব্য আবিষ্কার কর” নামক তথ্য চিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট।

এরপর ব্যাঙ্কসি গাজার প্রতিবেশীদের বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন, এবং তার সাথে যোগ করেন ইজরায়েল-এর তথা কথিত “অপারেশন প্রোটেকটিভ এজ” নামক হামলার সময় এখনকার ১৮,০০০ বাড়ী ধ্বংস হয়ে গেছে, যেমনটা আমরা এর আগে গ্লোবাল ভয়েসেস-এ এই সংবাদ তুলে ধরেছিলাম। তিনি বলেন “এখানে সব জায়গায় উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে”, যার আগে তিনি যোগ করেন “বোমা বর্ষণের সময় থেকে এখানে কোন সিমেন্ট আনার অনুমতি নেই”।

যখনই আমরা প্রথম দেয়াল চিত্র দেখতে পেলাম যার শিরোনাম বোমায় ক্ষতিগ্রস্থ এবং সম্ভবত তা রো'দার “দি থিঙ্কারের” দ্বারা অনুপ্রাণিত। এটা তার ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে পোস্ট করা হয়েছে এবং এই লেখার সময় পর্যন্ত ১২,০০০ লাইক পেয়েছে। যেমনটা থিঙ্কার করেছে এর মধ্যে দর্শন উপস্থাপন না করে, মনে হচ্ছে এই দেয়াল চিত্রের চরিত্র তার চারপাশের ধ্বংসলীলা থেকে নিজেই নিজেকে আশ্রয় প্রদান করছে।

“বোমায় ক্ষতিগ্রস্থ, বাংকসির আঁকার দেয়ালচিত্র, ছবি www.banksy.co.uk থেকে নেওয়া।

দ্বিতীয়টি মূলত যা স্ট্রিটআর্টনিউজ থেকে নেওয়া, তা ইজরায়েলের দখলদারিত্বের এক প্রতীকের রূপান্তর, এটা হচ্ছে একটা পর্যবেক্ষন টাওয়ার ষ্টেশন, যা শিশুদের বিনোদনের উপাদানের বস্তু। “এপার্টহাইডওয়াল” [ বর্ণবাদী দেওয়াল], ইজারায়েলের পশ্চিম তীর ঘিরে যে প্রতিবন্ধক দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে এটি তার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, সেটি সহ এই প্রহরীদের পর্যবেক্ষন ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছে, সম্পূর্ণ এই প্রতিবন্ধক দেওয়ালের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার (৪৩৪ মাইল)।

ছবি www.banksy.co.uk থেকে নেওয়া।

তৃতীয় ছবিটি ইন্টারনেটের বেড়ালের প্রতি ভালবাসাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। এতে আমরা দেখছি যে বেড়াল ছানাগুলো সাধারণ যে তুলার বল দিয়ে খেলে তার বদলে তারা প্যাঁচানো ধাতব তার দিয়ে খেলেছে। ব্বাংকসি আরটি সংবাদ সাইটে উদ্ধৃত করেছেন যে, স্থানীয় এক ব্যক্তি এখানে এল এবং জিজ্ঞেস করল “দয়া করে আমাকে বল-এর অর্থ কি? আমি তাকে ব্যাখ্যা করে বললাম যে আমি আমার ওয়েবসাইটে ছবি পোষ্ট করে গাজার ধ্বংসলীলার বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই- কিন্তু ইন্টারনেটে লোকজন কেবল বেড়ালছানার ছবির দিকে দেখে।

বেড়াল ধাতব তারের বল দিয়ে খেলছে। ছবি www.banksy.co.uk থেকে নেওয়া।

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে গাজার শিশুরা বেড়াল ছানার পাশে খেলছে আর ব্যাঙ্কসির গ্রহণ করা এক পিতার সাক্ষাৎকার আমাদের বলছে:

এই বেড়ালটি সারা বিশ্বকে বলছে যে সে তার জীবনের আনন্দ হারিয়ে ফেলেছে। বেড়ালটি খেলার জন্য কিছু একটা খুঁজে পেয়েছে, কিন্তু আমাদের সন্তান বেলায় কি হবে? কিন্তু আমাদের সন্তান বেলায় কি হবে?

সবশেষে ব্যাঙ্কসির বার্তাকে এক সারাংশে পরিণত করা যেতে পারে তার এক উদ্ধৃতির মাধ্যমে যা সে গাজার এক দেওয়ালে লিখে রেখেছে, এতে লেখা রয়েছে:

যদি আমরা ক্ষমতাশালী এবং ক্ষমতাহীনদের লড়াই-এ চুপচাপ বসে থাকি, তাহলে আমরা ক্ষমতাশালীদের পক্ষে অবস্থান করলাম- আমরা আর নিরপেক্ষ রইলাম না।

বাংকসির বার্তা লেখা দেওয়ালে ফিলিস্তিনি শিশুরা চড়ছে। ছবি Banksy.co.uk।

এটাই ব্যাঙ্কসির প্রথম ফিলিস্তিন ভ্রমণ নয়। পশ্চিম তীরের প্রতিবন্ধক দেওয়ালের ফিলিস্তিনের অংশে তিনি যে সব দেয়াল চিত্র এঁকেছেন তা তার বিখ্যাত কিছু কাজ হিসেবে পরিচিত। এখানে তার কয়েকটি তুলে ধরা হল।

পশ্চিম তীরে ব্যাঙ্কসি। ছবি www.banksy.co.uk থেকে নেওয়া।

পশ্চিম তীরে ব্যাঙ্কসি। ছবি www.banksy.co.uk থেকে নেওয়া।

পশ্চিম তীরে বাংকসি। ছবি www.banksy.co.uk থেকে নেওয়া।

পশ্চিম তীরে বাংকসি। ছবি www.banksy.co.uk থেকে নেওয়া।

পশ্চিম তীরে ব্যাঙ্কসি। ছবি www.banksy.co.uk থেকে নেওয়া।

Exit mobile version