পোপ ফ্রান্সিস ফিলিপাইনে এসেছেন, কিন্তু সকলের তাকে দেখার অনুমতি নেই

Human rights groups were blocked by the police from getting near the pope motorcade. Image from Facebook page of Kathy Yamzon

পুলিশ মানবাধিকার দলগুলোকে পোপের গাড়ি বহরের কাছে যেতে বাঁধা দিয়েছে। ছবি ক্যাথে ইমাজোন-এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

যখন পোপ ফ্রান্সিস তার বর্তমান ফিলিপাইন সফর শুরু করেছে, তখন সকলের তাকে দেখার সুযোগ নেই। সামাজিক ন্যায়বিচারের স্লোগান বহন করা একদল একটিভিস্ট বলছে যে তাদের পোপের গাড়ি বহরের সামনে এক প্রদর্শনীর আয়োজনে পুলিশ বাঁধা প্রদান করে। একই সাথে এই ধরনের সংবাদ রয়েছে যে পোপের এই নাগরিক শোভাযাত্রার সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকজন পথ শিশুকে আটক করে রেখেছিল।

পোপ ফ্রান্সিস ১৫ থেকে ১৯ জানুয়ারি ফিলিপাইন সফর করবেন। তার এই এবারের ভ্রমণের বিষয় বস্তু হচ্ছে “ক্ষমা এবং অনুকম্পা” যা পোপ ফ্রান্সিসকে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ক্যাথলিক অধ্যুষিত রাষ্ট্রে নিয়ে এসেছে।

তার এই সফরের সময় ম্যানিলায় প্রায় ২০০০ একটিভিস্ট সমবেত হয় যারা কিছু ব্যানার নিয়ে পোপের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছিল যে সমস্ত ব্যানারে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়, যে সব বিষয় দেশটির গরীব নাগরিকদের উপর প্রভাবিত করছে যেমন ক্ষুধা, ভূমিহীন এবং অন্যায়। তবে পুলিশ এই মিছিলটিকে গাড়ি বহরের সামনে যাওয়ার আগে আটকে দেয়

একটিভিস্ট নেতা নাটো রেইয়েস দেশটির “সত্যিকারের পরিস্থিতির” কথা পোপের সামনে তুল ধরতে বিভিন্ন দলকে বাঁধা দেওয়ার সরকারের সমালোচনা করেছে:

প্রথম দিন থেকে, পোপ কি দেখবে এবং শুনবে সে বিষয়ে সচেতন ভাবে এক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা ঘটনাক্রমে এক পরিহাসে বিষয় কারণ যেহেতু পোপ এখানে কেবল, সত্য, ঈশ্বর এবং সৌন্দর্য্য দেখার জন্য আসেনি। পোপ এখানে গরীব এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যার কথা শুনতে এসেছেন।

পুলিশ পোপের গাড়ি বহরের সামনে মিছিল নিয়ে আসার পথে একদল একটিভিস্টের সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে। ছবি সাউদার্ন টাগালগ এক্সপোজার-এর ফেসবুকের পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

কর্দমাক্ত হাঁটা নামক এক প্রদর্শন শিল্পীর দল, যারা হাইইয়ান নামক টাইফুন–এর শিকার ব্যক্তিদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরছে, তাদেরও পুলিশ চার্চের কর্মকর্তাদের হাতে একটি চিঠি হস্তান্তরে বাঁধা প্রদান করে। ছবি এই দলের ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া।

পুলিশ সদস্যরা এক একটিভিস্টের পতাকা জব্দ করে নেয়। পুলিশ বলে যে কেবল “অভিবাদন জানানোর উদ্দেশ্য বানানো পতাকা” বহন করার অনুমতি রয়েছে। ছবি সাউদার্ন টাগালগ এক্সপোজার-এর ফেসবুকের পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

কয়েকজন রাজবন্দী তাদের কারাকক্ষের বাইরে একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দিতে সক্ষম হয়। তারা পোপের প্রতি আহ্বান জানায় যেন তিনি দেশটির অতীব বাজে মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে খেয়াল করেন। ছবি ক্যাথে ইয়ামজোন-এর ফেসবুকের পাতা থেকে নেওয়া।

প্রতিবাদে হস্তক্ষেপ করা ছাড়াও সংবাদ পাওয়া গেছে যে সরকার পোপের আগমনের কয়েকদিন পূর্ব থেকে পথ শিশুদের “আটক করে” এবং “খাঁচায় পুড়ে রাখে” শুরু করে। দেশটির অন্যতম এক প্রধান সংবাদপত্র ম্যানিলা স্ট্যান্ডার্ড টুডে এই ধরনের নীতির পেছনের চিন্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, পত্রিকাটি বলছে, এই ক্ষেত্রে পোটেমেকিন-গ্রাম মনোভাব গ্রহণ করা হয়েছে।

পোপের এই ভ্রমণের সময় পথ শিশুদের আটক করার কথা সরকার অস্বীকার করেছে

এদিকে পোপের গাড়ি বহর যে সড়ক পথ অতিক্রম করে সরকার তার পাশে এক সবুজ বেষ্টনি খাঁড়া করে রাখে যাতে তিনি এবং গাড়ির অন্য যাত্রীরা শহরে বাস করা গরীবদের দেখতে না পায়, যারা এই বেষ্টনীর পেছনে বাস করছে।

আরেকটি “প্রতিবন্ধকতা” পোপকে সাধারণ জনতার থেকে বিছিন্ন করে রেখেছিল আর তা হচ্ছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনেকে বলছে যে শহর জুড়ে পুলিশ নামানো এবং ধাতব প্রতিবন্ধকতা বসানো বাড়াবাড়ি এক বিষয়, যার ফলে এমনকি জাতির এই অতিথিকে এক নজর দেখাও অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। বেশ কিছু অসন্তুষ্ট ফিলিপিনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পোপের সাম্প্রতিক শ্রীলংকা সফরের কথা উল্লেখ করে, যেখানে পোপকে রাস্তার পাশে বিশ্বাসীদের হাত ধরতে এবং তাদের আশীর্বাদ করতে দেখা যায়।

অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি রকমের পুলিশ নামানো? একুইনো হচ্ছেন ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি। ছবি পয়লা মে আন্দোলন (কিলুসাং মায়ো উনো)-এর ফেসবুকের পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

পোপ ফ্রান্সিস! কুইরিনো এভিনিউ থেকে টাফট এভিনিউ হয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে মোয়া রঙ্গভূমির দিকে যাচ্ছে।

কুইরিনো এভিনিউ পার হওয়ার সময় পোপ ফ্রান্সিস হাত নাড়ছেন। আজ দুপুর ১.৪৫ মিনিটে তিনি টাফট এভিনিউ অতিক্রম করেন।

সরকার বলছে যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজনীয় এক সতর্কতা। তারপরেও অনেকে কর্তৃপক্ষের সাথে তর্ক করছে যেন তারা বিশ্বাসী নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবং তাদের পোপের কাছে আসতে দেয়:

নিশ্চয় এটা নিরাপত্তার কারণে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু আমি মনে করি শত শত নিরাপত্তা রক্ষীর কারণে আড়ালে চলে যাওয়া নাগরিকদের কাছে যেতে পোপ সত্যিই পছন্দ করবেন।

নোনয় অপলাস সরকার কর্তৃক গ্রহণ করা “সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার” সমালোচনা করেছে:

রাস্তায় পোপকে দেখতে পাওয়া হচ্ছে নাগরিকদের জন সবচেয়ে কাছের বিষয় যা একজন পেতে এবং তাকে দেখতে পারে। আর ভয়ের বিকারগ্রস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতটা সম্ভব স্বল্প সময় , এবং যতদূর সম্ভব নাগরিকদের পোপকে দেখার বিষয়টিকে কঠিন করে তুলেছিল।

অনেকে আশা করছে যে আগামী দিনগুলোয় সরকার নিরাপত্তার আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে পুনরায় চিন্তা করবে, ১৯ জানুয়ারিতে ফিলিপাইন ছেড়ে যাওয়ার আগে সরকার আরো বেশী বেশী নাগরিককে পোপ ফ্রান্সিসকে দেখতে এক নজর দেখতে দেবে।

Exit mobile version