ফার্গুসন হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে রাস্তার শিল্পকে উৎসাহ প্রদান করছে

"Message Reflects on Traffic" in Ferguson, Missouri. Photo by Light Brigading on Flickr.

মিসৌরির ফার্গুসনের রাস্তায় হত্যাকাণ্ড বিষয়ক এক বার্তা প্রদর্শিত হয়েছে। ছবি ফ্লিকারের লাইট ব্রিগাডিং-এর।

একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক ১৮ বছর বয়স্ক কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মিশেল ব্রাউনের হত্যা মিসৌরির ফার্গুসনে এলাকায় অস্থিরতার সৃষ্টি করেছিল, আর এই বিষয়টি এখন ফার্গুসন এবং সারা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে শিল্পের ক্ষেত্রে এক গভীর প্রভাব তৈরী করেছে।

অনেক শিল্পী এবং অনুষ্ঠান প্রদর্শনকারীদের ফার্গুসন অথবা এই সম্পর্কিত সকল র‍্যালি এবং মশাল বা মোমবাতি জ্বালিয়ে নিশি জাগরণ (ভিজিল) কার্যক্রমে দেখা গেছে। ব্রাউন যার গুলিতে নিহত হয়েছে সেই পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনকে অভিযুক্ত না করার গ্রান্ড জুরির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ন্যায়বিচারের দাবীতে ক্রমাগত বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ফার্গুসনের ঘটনার ভিত্তিতে তৈরী করা এক জানালা চিত্র। ছবি ফ্লিকারের পল সাবলিমানের

১৩ ডিসেম্বর ২০১৪-এ ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত সকলের জন্য ন্যায়বিচার নামক র‍্যালি। ছবি ফ্লিকারের স্টেফান মেলকিসেথিয়ানের

বিভিন্ন র‍্যালিতে আয়োজিত রাস্তার শিল্পের মধ্যে প্রদর্শনের জন্য ছিল গ্রাফিতি, পোস্টার এবং ব্যানার, দৃশ্যত মনে হচ্ছে র‍্যালিতে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এবং সম্প্রদায়ের মাঝে প্রতিদিন এ সব শিল্পের সংখ্যা বাড়ছে। সম্প্রতি এক সংবাদ প্রবন্ধে ওয়েবসাইট মিক দাবী করেছে যে মিসৌরির ফার্গুসনে রয়েছে “আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী সড়ক শিল্প” এবং উক্ত প্রবন্ধে তরুণ এক শিল্পী ড্যামন ডেভিসের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, যে এই শহরে গ্রাফিতি এবং হাতে তৈরী পোস্টার দিয়ে দেওয়াল শিল্প তৈরী করছে। একই সাথে ডেভিস তার সৃষ্টিকর্ম তৈরীর জন্য স্থানীয় অনেক দোকান এবং ব্যবসায়ীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। সে ব্যাখ্যা করেছে, যদিও অনেক ম্যানেজার এবং বাড়ির মালিক রয়েছে যারা এই বিক্ষোভে সাহায্য এবং সমর্থন করতে ইচ্ছুক, তবে এখনো অনেকে আছে যারা “নিরপেক্ষ” থাকতে চায়। তবে ডেভিড লিখেছে:

যদি আপনি এই সম্প্রদায়ের কাছ থেকে টাকা বানান, তাহলে এখানে নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই।

ডেভিড এবং অন্য শিল্পীরাও মিয়ামির ওয়েএনউড বিক্ষোভের নিশি জাগরণে অংশগ্রহণ করার অথবা নিজেদের সৃষ্ট শিল্পকর্ম পাঠানোর আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বিখ্যাত এবং ব্যাপক পরিচিত মিয়ামি আর্ট বাসেল যে সময় অনুষ্ঠিত হয় এটিও সেই সময় অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় অজস্র সেলিব্রেটি এবং প্রখ্যাত শিল্পী উপস্থিত হয়, কিন্তু পলায়নপর মনোবৃত্তির জন্য এটি এবার ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।

তবে এখানে অন্তত একটি শিল্পকর্ম যা ছিল ২০১৪-এ আমেরিকা কাঁপানো বিক্ষোভের সাথে সম্পৃক্ত। আর এর সৃষ্টিকর্তা ছিল অতি বাস্তববাদী শিল্পী রবার্ট লঙ্গো, যার এই কাজের শিরোনাম “শিরোনামহীন (ফার্গুসন পুলিশ, ১৩ আগস্ট ২০১৪)”। অনেকে এই বিশাল পেইন্টিং-কে “মিয়ামী বিচ আর্ট বাসেলের সবচেয়ে শক্তিশালী চিত্রকর্ম” হিসেবে অভিহিত করেছে। এই খানিকটা অন্ধকারচ্ছন্ন পেইন্টিং-এ পদ অনুসারে চেহারা বিহীন পুলিশ কর্মকর্তার ছবি আঁকা হয়েছে এবং অভিন্ন এক শক্তি ধোয়ার আবরণে দর্শকদের দিকে ধেয়ে আসছে,যেটা সম্ভবত কাঁদানে গ্যাস।

তবে মিয়ামির এই বিশাল আর্ট বাসেলের বাইরে শিল্পকলার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এক নিশি জাগরণের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে যার উপস্থিত হয়েছিল, তারা পুলিশি নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে একটি মুহূর্ত বেছে নেন। তাদের ফেসবুক পাতায়, এই নিশি জাগরণের সংগঠক বলেন:

Last night, we ‪#‎ShutItDown‬, we shut down the highway and part of‪#‎ArtBasel‬, largest art show in the country, calling for justice for‪#‎IsraelHernandez‬‪#‎MikeBrown‬‪#‎EricGarner‬ and countless other victims of police brutality!  

গত রাতে, আমরা ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়ে সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছিলাম, আমরা মহাসড়ক এবং আর্ট বাসেল-এর খানিকটা অংশ বন্ধ করে দিয়েছিলাম, যা দেশটির সবচেয়ে বড় শিল্পকলা প্রদর্শনী। ইজরায়েল হার্নানদেজ,মাইক ব্রাউন, এরিক গারনার এবং পুলিশের নির্মমতার শিকার এ রকম অন্য অজস্র ব্যক্তির জন্য ন্যায়বিচার দাবী করছি।

এই কার্যক্রমে বিশেষ মনোযোগ প্রদান করা হয় ২০১৩-এ নিহত কিশোর গ্রাফিতি শিল্পী ইজরায়েল হার্নানদেজ–এর মৃত্যুর ঘটনার প্রতি, যে পরিত্যাক্ত এক ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁর দেওয়ালে স্প্রে পেইন্টিং করার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে টেসার নামক যন্ত্র দিয়ে বিদ্যুতায়িত করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। হার্নানদেজ ছিল এক প্রতিভাবান রাস্তার শিল্পী, যে তার এই স্বল্প জীবনে গ্রাফিতি এঁকে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছিল। তার এই মৃত্যু পুলিশ কর্তৃক টেসারের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অনেক প্রতিবাদের জন্ম দেয় এবং এই ঘটনা একটি তথ্যচিত্রের বিষয়ে পরিণত হয়েছে যার নাম, “টেসারডঃ ইজরায়েল হার্নানদেজ এর কাহিনী”।

এই সমস্ত র‍্যালিতে পুলিশের নির্মমতার শিকার সকল ব্যক্তির জন্য ন্যায়বিচারের দাবী জানানো হয়, যা একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঙ্গরাজ্যে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয় এবং তাদের কাহিনী বিশ্বের কাছে পৌঁছে যায়। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের গ্রাফিতিতে প্রদর্শন করা হয়েছে একটি বালক তার দুই হাত উঁচু করে রেখেছে এবং সেখানে লেখা “গুলি করোনা”। লন্ডনের এক গ্রাফিতিতে দেখা যাচ্ছে একটি বালক তার এক হাত উঁচু করে আছে এবং তার পুরো ছবি জুড়ে সেই একই কথা লেখা আছে::

ব্রুকলিনের গ্রাফিতি। মিসৌরি ফার্গুসনের বিক্ষোভের সমর্থনে নিউইয়র্ক। ছবি ফ্লিকারের ড্যামিয়েন ডেরুয়েনের

মিসৌরির ফার্গুসন বিক্ষোভের সমর্থনে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের গ্রাফিতি। ছবি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।

ফার্গুসনে, ড্যামন ডেভিস শিল্পীর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করছে::

এই সমস্ত কাহিনীর বর্ণনা এবং ইতিহাসকে জীবন্ত রাখার ক্ষেত্রে শিল্পীরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। [এই সকল পোস্টার] নাগরিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা হয়ত এই সকল বিষয়ে দ্বিধান্বিত। হয়ত তারা তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে চায় [এবং আমাদের সমর্থন করা শুরু করে]। এবং যারা আমাদের পক্ষে নয় … এখন তারা জানে যে, আমরা এখনো এখানে আছি আর আমরা পিছু হটবো না।

Exit mobile version