এ বছর নেপালের গড়িমাই উৎসবে কতটি পশু প্রাণ হারবে?

Butchers ready to sacrifice water buffaloes at the Gadhimai festival in Nepal (C) Diwakar Bhandari

নেপালের গড়িমাই উৎসবে দেবীর উদ্দেশ্য মহিষ বলি দেওয়ার জন্য কসাইরা প্রস্তুত। কপিরাইট দিবাকর ভাণ্ডারির, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

মুসলমানদের ঈদুল আজহার পরে বিশ্বের অন্যতম এক বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবে প্রাণী বলি দেওয়ার আয়োজক রাষ্ট্র হচ্ছে নেপাল। এখানে প্রতি পাঁচ বছরে একবার উদযাপিত গড়িমাই উৎসবে বারা জেলায় শতশত, হাজার হাজার তীর্থযাত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। এই সপ্তাহে শুরু হওয়া এই উৎসব একমাস ধরে চলবে । এতে পশু বলি দেওয়া হবে আগামী সপ্তাহের ২৮ এবং ২৯ নভেম্বর তারিখে।

উৎসবে পশুদের প্রতি যে আচরণ করা হয় তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে আওয়াজ ওঠা সত্ত্বেও এর আয়োজক কমিটি পরিকল্পনা অনুসারে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে টার্কি নামের বড় মোরগ জবাই করার সাথে গড়িমাই উৎসবের প্রাণী হত্যার কোন সর্ম্পক নেই। সকল ধরনের হত্যা খারাপ। কিছু কিছু তো জঘন্য। যেমন গড়িমাই-এ প্রাণী বলি প্রদান। এটা নিষ্ঠুর এক প্রথা। এই প্রথা বন্ধ করুন।

নেপালের ৫০০,০০০ প্রাণীর আপনার কণ্ঠস্বরের প্রয়োজন। দয়া করে গড়িমাই-এর নিষ্ঠুর ধর্মীয় পশু বলি প্রথা বন্ধ করুন।

ধর্মীয় বিশ্বাসের আবরণে পরিচালিত হচ্ছে মন্দ কাজ, প্রাচীন এক বিশ্বাসের সুবিধা গ্রহণ এবং সেটির বিকৃত ঘটানো হয়েছে।

এই উৎসবে, অংশগ্রহণকারীরা দুই দিনের এই সময়ের মধ্যে ৫০০,০০০ টি প্রাণী বলি দেয়। বলি দেওয়ার জন্য আনা এই পশুগুলোর ৭০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত অবৈধভাবে নেপালে পশু পাচার বন্ধে এক আদেশ জারি করেছে

ব্রান্ডেনবার্গ তোরণের কাছে পশু সাম্য নামক প্রতিষ্ঠানের পশু অধিকার কর্মীরা নেপালের গড়িমাই উৎসবে আয়োজিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ পশু বলি প্রথার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। ছবি ফ্লোরিন বাইলোট-এর। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (২৮/১০/২০১৪)।

গোর্খা নাগরিক অধিকার-এর প্রবক্তা জোয়ান্না লুমলেই এর আয়োজকদের আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা গড়িমাই উৎসবে পশুবলি প্রথা বাদ দেয়। লুমলেই, ব্রিটিশ সংগঠন “বিশ্ব খামার-এর ক্ষেত্রে সহানুভূতি” (ক্যামপ্যাশান ইন দি ওয়ার্ল্ড ফার্মিং বা সিআইডাব্লিউএফ)–এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, যা কিনা নেপালে পশু কল্যাণে-এর বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। একই ধরনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান এবং সিআইডাব্লিউএফ মিলে যৌথভাবে এই উৎসবের বিরুদ্ধে অনলাইনে একটি দরখাস্তের স্পনসর করছে।

অন্য সব অনলাইন দরখাস্তও গাধিমাই উৎসবে পশুদের প্রতি যে আচরণ করা হয় তার বিরোধীতা এগিয়ে এসেছে। অনেকে উৎসবে দেবীর উদ্দেশ্য উৎসর্গের জন্য পশু বলি বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রচারণা শুরু করেছে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় রয়েছে, এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে যাতে তারা প্রাণীদের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধ করে।

তবে, উৎসবে প্রাণীদের প্রতি এই আচরণের বিরুদ্ধে যে সব একটিভিস্ট, অনলাইনে কেবল তারা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করছে এমনটা নয়। এই উৎসবের সমর্থকরা উল্লেখ করছে কি ভাবে এই উৎসব পরিবারের সদস্যদের মাঝে মিলন ঘটায়, যা প্রায়শ তাদের অন্য প্রান্তে নেপাল সীমান্তে বাস করা আত্মীয়কে একত্রিত করে। যেমন বলা যায়, গড়িমাই মন্দিরের পুরোহিত এক থারু সম্প্রদায়ের নাগরিক, যেখানে বেশীর ভাগ মন্দিরের উপাসক মণ্ডলী বর্ণ বিভাজিত নেপালের উচ্চ বর্ণে অবস্থান করা মাধোশী সম্প্রদায় থেকে আসে

নেপালে এই বিশাল পরিমাণ পশু বলি হিসেবে উৎসর্গ করা হয় হিন্দুদের শক্তির দেবী গড়িমাইকে। ছবি কোজি-এর। ২৩ নভেম্বর ২০০৯-এ তোলা। কপিরাইট ডেমোটিক্সের।

অন্যরা উল্লেখ করছে যে উৎসবে বলি দেওয়া পশুর সংখ্যার সাথে যদি যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশের পশু শিল্পের তুলনা করা হয়, সেক্ষেত্রে এই উৎসব উক্ত শিল্পের পাশে বিবর্ণ দেখাবে, যেখানে গত বছর খাওয়ার জন্য গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লক্ষ পশু হিসেবে বছরে ৯১ কোটি পশু জবাই করা হয়েছে

বৌদ্ধ ধর্ম ছাড়া, হিন্দু, খ্রিষ্টান, এবং ইসলাম ধর্মে কোরবানি কিংবা বলি হিসেবে সৃষ্টিকর্তা বা দেবতার উদ্দেশ্য পশু উৎসর্গ করার বিধান লেখা রয়েছে।

যে বিষয়টি আমাকে উদ্বিগ্ন করেছে তা হচ্ছে গড়িমাই উৎসব বিরোধীদের শব্দ চয়ন, “বর্বর” “নিষ্ঠুর”, “অমানবিক”

হিন্দু ধর্মে পৈশাচিকতা আরোপ করা এবং আমাদের সংস্কৃতিকে উপহাস করা পশ্চিমা নাগরিক এবং পশ্চিমা চিন্তা ধারা প্রভাবিত আধুনিক ধারণা, এমনকি মধ্যপন্থী হিন্দুকে গোঁড়া হিসেবে চিহ্নিত করবে।

নাগরিকরা যেখানে এই উৎসব নিয়ে এখনো বিভক্ত, সেখানে একটিভিস্ট এবং এই উৎসবে পশুবলি প্রথা বিরোধিতায় অংশগ্রহণকারীরা একই ভাবে তাদের এই আন্দোলনে আরো নাগরিককে যুক্ত করে কেবল সচেতনতা বৃদ্ধির আশা করতে পারে।

উৎসব পশু বলি বিরোধী কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির উপায় অনুসন্ধান না করে, স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি হতে পারে গড়িমাই উৎসবে প্রাণী হত্যা বন্ধের আরো বেশী গ্রহণযোগ্য উপায়।

যেমন চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক ছাত্র এস. এস পোখরেল লিখেছে:

গড়িমাই উৎসবে-এ পশু বলি প্রথার বিলুপ্তি ঘটাতে আরো সময় এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন। বিদেশীদের সমর্থনের বদলে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা এবং সহানুভূতি অনেক বেশী জরুরী।

নেপালের গড়িমাই মন্দির। ছবি দিবাকর ভাণ্ডারীর, অনুমতিক্রমে প্রকাশিত।

Exit mobile version