মিয়ানমারের শিশু শরণার্থীরা ভিজুয়াল আর্টের মাধ্যমে তাদের গল্প তুলে ধরলেন

forced to flee

ছবির মাধ্যমে গল্প-বলা কর্মশালা আয়োজকদের ধন্যবাদ। কারণ, তাদের জন্যেই মিয়ানমারের একদল শিশু শরণার্থী যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাড়ি থেকে পালানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে সক্ষম হয়েছেন। কর্মশালার মাধ্যমে প্রাপ্ত এই ছবিগুলো বিগত কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং জাতিগত সংঘাতকে বুঝতে সহযোগিতা করতে পারে।

পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাহায্য নিয়ে আমেরিকান লেখক ইরিকা বার্গ এই কর্মশালার আয়োজন করেছিলেন। কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল দুটি: মিয়ানমারের শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থন জোগানো এবং ভীত সন্ত্রস্ত শরণার্থীদের আশাবাদী করে তোলা। এই সেমিনারের মাধ্যমে দুইশ'র বেশি ছবি আঁকা হয়েছে। ছবিগুলো নিয়ে খুব শিগগিরই একটি বই প্রকাশ করা হবে। বইয়ের নামও ঠিক করা হয়ে গেছে- “ফোর্সেড টু ফ্লি: ভিজুয়াল স্টোরিজ বাই রিফিউজি ইয়থ ফ্রম বার্মা”। বার্গ কিকস্টার্টার এর সহায়তায় অর্থ জোগাড়ের মাধ্যমে বইটি প্রকাশের ব্যাপারে আশাবাদী।

থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে বর্তমানে ১২০,০০০ এর বেশি শরণার্থী বসবাস করেন। তাছাড়া ১ লাখের বেশি জাতিগত কোচিন এবং শান সম্প্রদায়ের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশের অভ্যন্তরেই শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। ১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমারে সামরিক শাসন চলছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কারের ফলশ্রুতিতে সাধারণ নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। সেনা সমর্থিত গণতান্ত্রিক সরকারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তবে দেশটিতে এখনো জাতিগত সংঘাতের অবসান হয়নি। বিশ্বের সবচে’ দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ চালু থাকার যাবতীয় মালমশলা বিদ্যমান এখানে। জাতীয় পুনর্মিলনকে উৎসাহিত করতে শান্তি স্থাপনের বেশকিছু উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। তবে সারাদেশজুড়েই দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছে। আগামী নির্বাচন শান্তি প্রক্রিয়া তরান্বিত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী শিবিরে আটকা পড়েছেন। তাছাড়া সেনাবাহিনী সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের ফলে আরো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন।

মিয়ানমারের একটি চিত্র উপস্থাপনা। দেশটিতে ১০০টির বেশি জাতিগত সম্প্রদায় বসবাস করেন।

স্বেচ্ছাসেবকের কাজের মাধ্যমে বার্গ জেনেছেন যে, “প্রত্যেক শরণার্থীর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পলায়নপরতা, নতজানুতা এবং উদ্দীপক গল্প আছে, যা শেয়ার করা যায়।” বার্মা স্টাডি সেন্টারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন:

Refugee youth who participate in the visual storytelling workshops quickly realize that they aren’t simply victims. They are survivors and witnesses whose life stories deserve—and need—to be heard.

ছবির মাধ্যমে গল্প-বলা কর্মশালায় যেসব তরুণ শরণার্থী অংশ নিয়েছিলেন, তারা খুব দ্রুতই উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, তারা শুধু ঘটনার সাধারণ শিকার নন। তারা হলেন ঘটনাক্রমে বেঁচে যাওয়া মানুষ, ঘটনার সাক্ষী। তাদের জীবনের গল্প সবাইকে শোনানোর খুবই জরুরি।

বার্গ জানিয়েছেন, তার সংকলিত বইটি মিয়ানমারে শান্তি স্থাপনে সবাইকে সচেতন করতে সাহায্য করবে:

‘Forced to Flee’ illustrates that the emotions conveyed and evoked by a single narrative image can tell a story of a thousand words, open hearts and build bridges of understanding. In this book, refugee youth harness the power of narrative art to personalize human rights issues and promote a just and inclusive peace in Burma.

Drawn into their inner worlds, we gain a child’s eye-view of what it’s like to be forced to flee one’s homeland and live in exile, haunted – and empowered – by traumas of the past.

ফোর্সেড টু ফ্লি বইটি মানুষকে আবেগাপ্লুত করবে, যুদ্ধকালীন স্মৃতি জাগ্রত করবে। তাছাড়া কেবলমাত্র এই একটি ছবিই হাজার শব্দের বেশি গল্প বলে দিবে, মানুষের আত্মার দুয়ার খুলে দিয়ে সবার সাথে বোঝাপড়ার সংযোগ তৈরি করবে। এই বইটিতে তরুণ শরণার্থীরা তাদের শিল্পের শক্তিকে ব্যক্তিগত মানবাধিকার ইস্যুতে ব্যবহার করেছেন এবং বার্মায় শান্তি প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করেছেন।
নিজস্ব ভিটেমাটি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ, নির্বাসিত জীবন, সর্বদা পলায়নের শংকা, শক্তি অর্জন, অতীতের ক্ষত-কে শিশুরা কী চোখে দেখে, তাদের সেই মনোবিশ্বকে আমরা বের করে আনতে পেরেছি।

ছবির মাধ্যমে গল্প-বলা কর্মশালায় এক তরুণ শরণার্থী ছবি আঁকছেন।

তরুণ শরণার্থীদের আরো কিছু ছবি রইলো নিচে:

কর্মশালায় অংশ নেয়া এক তরুণ শরণার্থী বলেছেন, তার মনে হয়, দেশ ছাড়া হলেও বার্মা এবং সামরিক জান্তা তার উপর যেন নজরদারি করছে।

এই চিত্রগল্পটি টেক্সটাইল কারখানার নামহীন এক অভিবাসী বালকের। ছবিতে বালকের স্বপ্নের কথা উঠে এসেছে।

ক্যাথি ম্যালচইদি নামের একজন শিল্প থেরাপিস্ট বই প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন:

It honors the visual narratives of youth, tells their stories of injustice and atrocity, and offers us a window into possibilities for reparation and redemption for these young survivors. Most of all, it reminds us how children’s art provides a compelling, personal and often profound worldview their life experiences as well as another way of knowing their truths.

তাদের ওপর যে অন্যায় অত্যাচার করা হয়েছে, সেই গল্প বলতে পারা তরুণ শরণার্থীদের জন্য সম্মানীয় বটে। তাছাড়া এটা বেঁচে যাওয়া তরুণদের যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দেয়ার সম্ভাবনার দরজা আমাদের সামনে খুলে দিয়েছে। বেশিরভাগ চিত্রই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, তরুণ শরণার্থীদের শিল্পকর্মের মধ্যে আছে আবেগাপ্লুত, ব্যক্তিগত এবং এক বৈশ্বিক ধারনা যা তারা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এঁকেছেন।

আদিবাসী কারেন উইমেনস অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক নাউ কেনাউ পাউ বইটি সম্পর্কে লিখেছেন, “তরুণ শরণার্থীরা প্রতিদিন যে সংগ্রাম এবং অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যান, তার চিত্র উঠে এসেছে এতে”। কবি মে নাঙ-ও বইটির প্রশংসা করেছেন:

Never before have I seen such an intense and credible portrait of the journey of refugees from Burma. This is a magnificent work, larger than Burma’s democracy movement and the inter-ethnic conflict. Its message is universal.

বার্মা থেকে উদ্বাস্তু যাত্রার এমন চিত্র আমি আগে কখনো দেখিনি। এটি বার্মার গণতন্ত্র আন্দোলন এবং জাতিগত দাঙ্গার চেয়ে বেশি মহৎ কাজ। এর বার্তা সর্বজনীন।

বড়রা ছোটদের মতো গল্প পড়তে চান। তবে কিছু সময় আছে যখন শিশুরা কী বলতে চায়, তা আমাদের শোনা দরকার। বিশেষ করে যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের উপলদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা যখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মিয়ানমারের তরুণ শরণার্থীরা ভিজুয়াল আর্টের একটি সংকলন তৈরি করেছে যেখানে শিশুরা তাদের কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।

ছবি এবং চিত্র ইরিকা বার্গের সৌজন্যে পাওয়া। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
Exit mobile version