গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাংবাদিকরা

দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার গণমাধ্যম জোট সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল জুড়ে বিদ্যমান সাংবাদিকদের প্রতি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে তাদের চিন্তা ভাবনা শেয়ার করার আহ্বান জানিয়েছে। বাক স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখতে এবং এর আরও প্রসার ঘটাতে যে প্রচারাভিযানটি চালানো হচ্ছে তার একটি অংশ হিসেবে তাদের দেয়া মতামত অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। অনেক রিপোর্টার বর্তমানে বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করে এ বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। এমনকি এ অঞ্চলে সংবাদপত্রগুলো ক্রমান্বয়ে যেসব কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে সে সব সম্পর্কে তারা মতামত জানিয়েছেন। প্রচারাভিযানটি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে সাংবাদিকরাও কার্যকর পরামর্শদাতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার এ সব কারনকে সমর্থন করে তারা সমগ্র সমাজের উপকার করেছেন।

সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বন্দী থাকা মিয়ানমারের রাজনৈতিক কারাবন্দী এবং একজন ঝানু সাংবাদিক উইন টিনকে দিয়ে আমরা শুরু করছি। তিনি গত মাসে মারা গেছেন। প্রায় দুই দশক ধরে কারাভোগ করার পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সরকারের উপর লাগাতারভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। 

কম্বোডিয়ার ঘেপ নাভিন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা দাবি করেছেন। 

পূর্ব তিমুরের আর্জেন্টিনা কারদোসো লিখেছেন, কীভাবে গণমাধ্যম জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে আসছে। 

থাইল্যান্ডের পিরংরং রামাসুতা সত্য এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেনঃ  

মিয়ানমারের নাই নাই আত্ম-সেন্সরশীপের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেনঃ 

রায়িদজ বার্সিয়া ফিলিপাইনের গণমাধ্যম কর্মী হত্যা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্নঃ 

মালয়েশিয়ার কহ জুন লিন স্বাধীন গণমাধ্যমকে “সম্রাটের গাঁয়ে কাপড় নেই” বলে চিৎকার করা সেই ছেলেটির সাথে তুলনা করেছেনঃ 

মিয়ানমারের থু রেইন হলাইং বলেছেন, গণমাধ্যম হচ্ছে গণতন্ত্রের জন্য অক্সিজেন স্বরূপঃ 

ইন্দোনেশিয়া থেকে মেলানি ইন্দ্রা হাপসারি ভাল এবং খারাপ দুই ধরনের খবর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেনঃ 

প্রতিটি দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকা জরুরি। গণমাধ্যম হচ্ছে সরকারের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রহরী। আমি চিন্তাই করতে পারি না, কীভাবে আমি স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া কাজ করবো। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি নিজেকে এবং অন্যান্য সাংবাদিকদেরকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের “প্রভাবক” বলে মনে করি। কেননা, আমরা গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলোকে দর্শক-পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেই। যে কোন সাংবাদিককে কোন রকম চাপ, ভয়ভীতি, হুমকি বা সহিংসতা ছাড়া কাজ করতে হবে। সরকারের দুর্নীতি, অকার্যকর নীতি, অথবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেগুলো সম্পর্কে পাঠক ও দর্শকদের জানা প্রয়োজন সেগুলো সহ যেকোন খারাপ এবং ভাল খবর সম্পর্কে মুক্তভাবে প্রতিবেদন প্রচার করতে হলে সাংবাদিকদেরকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেশ ও দশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। এটি গনতন্ত্র, সুশাসন এবং সুশীল সমাজকে অনুপ্রেরণা যোগায়।

থাইল্যান্ডের প্রাকাইদাও বাংসুনতির মতে, স্বাধীনতার সাথে সাথে দায়িত্ববোধ নিয়ে আসা উচিতঃ   

জনগণকে তাদের মানবাধিকার নিয়ন্ত্রণের ভার নেওয়ার যোগ্য করে তুলতে যে কোন দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি। এটি প্রতি নাগরিককে রাষ্ট্রের চোখে সমান করে তোলে। কিন্তু থাইল্যান্ডের মতো কিছু দেশে আমাদের এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে ধনী এবং দরিদ্রের মাঝে পার্থক্য অনেক বেশি। এই অসামঞ্জস্য পার্থক্যের কারণে রাজনীতির মেরুকরণ করা সম্ভব হয়েছে। তাই খুব বেশি স্বাধীনতা নিয়েও আমাদের সমস্যা আছে। এতে করে ধনী এবং দরিদ্র উভয় পক্ষের অনেকেই এই স্বাধীনতাকে একে অপরের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করতে ব্যবহার করে থাকে। এভাবে স্বাধীনতার সাথে সাথে গণমাধ্যমের মাঝে দায়িত্ববোধও আসা উচিৎ।  

মিয়ানমারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আরও অনেকেই এগিয়ে আসবেন বলে আশাবাদী জাও নাইং উঃ  

গণমাধ্যমের সীমিত স্বাধীনতা নিয়ে এখন লোকজন পথ চলছে। আমি এই অবস্থাকে “সীমিত” বলব। কারন কর্তৃপক্ষ এখনও সাংবাদিকদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে থাকে। তাঁর অর্থ আমরা এখনও পুরোপুরি স্বাধীন নই। 

কিন্তু, অত্যাচারী শাসক কীভাবে জনগণকে দাবিয়ে রাখছে এটা কোন বিষয় নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অবশেষে জনগণকে সঠিক পথের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। আরও উন্নততর জীবন পেতে এটি জনগণের একটি মঞ্চে পরিণত হবে। মিয়ানমার হয়তোবা এমনি এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারবে।

কম্বোডিয়ারমায় থিটারাকে একটি তদন্ত মূলক প্রতিবেদন করার জন্য যখন “সতর্কবার্তা” দেয়া হয়েছিল, তখন তিনি দমে যাননিঃ   

একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমার লেখা একটি তদন্ত মূলক প্রতিবেদন যখন আমার দেশে প্রকাশিত হল তখন আমি সতর্কবাণী দেয়া একটি চিঠি পেলাম। যদিও আমার লেখা কলামে আমি অন্যায় কোন কিছু লিখিনি। তারা শুধুমাত্র সেই সংবেদনশীল বিষয়টি সম্পর্কে আমার লেখালেখি বন্ধ করাতে আমাকে ভয় দেখাতে চাইছিল। এ কারণে আমি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। আমার নিজের ভাবনাগুলোকে আমি স্বাধীনভাবে লেখার অধিকার চাই।      

* এই লেখাটির সাথে সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গণমাধ্যম জোটের ওয়েবসাইটের ঠিকানাটিও নিচে দেয়া হল। এই গ্রুপটি সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে এই লিংকটি দেখুন।  

Exit mobile version