মাইস্কয়ারঃ মিয়ানমারের প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

সকল বার্মিজ নাগরিককে প্রবেশযোগ্য একটি সামাজিক যোগাযোগ মঞ্চের সাথে সংযুক্ত করাই হচ্ছে মাইস্কয়ারের স্বপ্ন। এটির উদ্দেশ্য এমন একটি মাধ্যম তৈরি করা, যেখানে বার্মিজ নাগরিকেরা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করতে, যোগাযোগ করতে এবং কোন সীমানা অথবা বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই নিজেদের ভাবনাগুলো শেয়ার করতে পারবেন।

এটা হল দ্রুতহারে জনপ্রিয় হতে থাকা বার্মিজ ভাষার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাইস্কয়ারের লক্ষ্য। রিটা গুয়েন গত বছর এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। গত কয়েক মাসের মাঝে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির ব্যবহার আকাশচুম্বী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।   

মাইস্কয়ার সামাজিক নেটওয়ার্ক মিয়ানমারের জন্য তৈরি হয়েছে।  

গুয়েন একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই প্রকল্পটি শুরু করার সময় তাঁর প্রত্যাশা বেশ কম ছিল। তিনি ভেবেছিলেন, হয়তোবা কম যোগাযোগ সম্পন্ন কিছু সংখ্যক অনভিজ্ঞ লোক অপ্রত্যাশিতভাবে এই যোগাযোগ মাধ্যমটিতে নিজেদের দেখা পেয়ে যাবেন। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের (অথবা বার্মার) শতকরা ১ ভাগেরও কম লোক ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই ইন্টারনেট ক্যাফে ব্যবহার করে।

তথাপি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত এত স্বল্প সংখ্যক জনগোষ্ঠী এতোটা কারিগরি-কাণ্ডজ্ঞান সম্পন্ন হবে, তা গুয়েন একেবারেই আশা করেননি। যেহেতু তরুণ প্রজন্মের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ খুব কম, তাই তিনি তাদেরকে “মূলত: হ্যাকার” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাইলে তাদের হ্যাকার হতেই হবে।

ভোক্তাদের প্রযুক্তি দুনিয়ায় প্রবেশের ক্ষেত্রে গুয়েন প্রধানত তিনটি বাঁধা চিহ্নিত করেছেনঃ সেগুলো হচ্ছে, বাক স্বাধীনতার উপর সরকারের বাধা-নিষেধ, সংযোগ বা প্রযুক্তির মতো প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রবেশের উপর বাধা-নিষেধ এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য যেমন ভাষার উপর বাধা-নিষেধ।

রাজনীতি এবং পরিচয়

গুয়েনকে সরকারের কাছ থেকে সেন্সরশিপ নিয়ে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। তিনি বলেছেন, তথ্য শেয়ার করা নিয়ে তরুণ প্রজন্ম খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয়। সেলফি (নিজেই নিজের ছবি) তোলা এবং শেয়ার করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি ধারা প্রচলিত হয়েছে। সেলফি তোলা ও শেয়ার করে তারা নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে আগ্রহী।  

গত জুন মাসে যখন মাইস্কয়ার যাত্রা শুরু করে, তখন প্রতিষ্ঠাকারী দলটি সিদ্ধান্ত নেয় যে এটি ব্যবহার করতে ব্যবহারকারীর প্রকৃত নামের পরিবর্তে ইউজারনেম ব্যবহার করতে হবে। যেমন, ফেসবুক একাউন্ট পরিচালনার জন্য ইউজারনেম দরকার হয়। কেননা এর ফলে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিরাপত্তা এবং বেনামীতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। তবে সাইটটি চালু করার পর তাদের কাছে এই আবশ্যকতা পরিবর্তনের জন্য এ পর্যন্ত অনেক অনুরোধ এসেছে। যেসব ব্যবহারকারী তাদের প্রকৃত নাম প্রকাশ করতে চান তারা এই আবশ্যকতা পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছেন। 

মাইস্কয়ারে সৃজনশীল চিত্রকর্ম অথবা কবিতা পোস্ট করাটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গুয়েন অনুমান করছেন, এ কারনেই ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তাঁদের প্রকৃত নাম ব্যবহারের অনুরোধ আসতে শুরু করেছে। কেননা ব্যবহারকারীরা তাদের পোস্ট করা বিভিন্ন সৃজনশীল লেখালেখির লেখক হিসেবে নিজেদের প্রকৃত নাম প্রকাশ করতে চান। 

প্রযুক্তি এবং সংযুক্তি

ইতোমধ্যে সংযুক্তি অনেক বাড়ছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক মাসে আরও অনেকখানি বেড়ে যাবে। কেননা দুইটি প্রধান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি এ বছর মিয়ানমারে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেঃ একটি হচ্ছে নরওয়েজিয়ান টেলিনর গ্রুপ এবং অপরটি হচ্ছে কাতার ভিত্তিক উরেডু গ্রুপ।   

মিয়ানমারের প্রযুক্তি বিশ্বে গুয়েন একটি প্রধান উদ্বেগজনক বিষয় চিহ্নিত করেছেনঃ আর তা হচ্ছে বার্মিজ ভাষার ওয়েবসাইটগুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফন্ট জাওগি। আর এই ফন্টটি ইউনিকোডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এর ফলে একটি বড় সমস্যার সৃষ্টি হবে।

কাজে ব্যস্ত মাইস্কইয়ার দল (রিটা গুয়েন, মাঝে)

স্থানীয়করণ এবং প্রোগ্রামিং

স্থানীয় জনগনের কাজে আসতে হলে প্রযুক্তি বিষয়ক প্রকল্পগুলোর স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া খুব বেশি জরুরি। আর সে কারনে স্থানীয় জনগণ কি পছন্দ করে এবং কি চায় তা বোঝা দরকার।

মাইস্কয়ার শুধুমাত্র মিয়ানমারে রয়েছে। তাই গুয়েন জোর দিয়ে বলেছেন, কেবলমাত্র অনুবাদ করেই এটিকে পুরোপুরিভাবে স্থানীয়করণ থেকে রোধ করা সম্ভব।

মাইস্কয়ার দলটি তাদের গবেষণায় দেখেছেন, বার্মিজ তরুণদের মাঝে নোটবুক দিনলিপি (ডায়েরি) শেয়ার করার একটি ধারা বেশ জনপ্রিয়। এই দিনলিপিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ভাগ আছে, যেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি করা যায়। এই লেখাগুলো বন্ধুবান্ধবদের মাঝে আদান প্রদান করা যায়। যেমন বন্ধুরা দিনলিপির মালিক সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারে এবং জিজ্ঞাসা করতে পারে যে কীভাবে তারা একজন আরেকজনের সাথে পরিচিত হয়েছে। ডায়েরিটিকে বিভিন্ন ছবি এবং চিত্রকর্ম রাখার একটি স্ক্র্যাপবুক হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।  

এই প্রচলিত ধারার কথা মাথায় রেখে মাইস্কয়ার প্রতিষ্ঠাকারী দলটি এই সামাজিক যোগাযোগ মঞ্চে একই ধরনের কিছু ফিচার তৈরি করেছে। এই ফিচারগুলো আমাদের কাগজের তৈরি দিনলিপির কথা মনে করিয়ে দিবে।

মাইস্কয়ার ভবিষ্যতে গ্রামীণ এলাকাতেও তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করতে যাচ্ছে। যেসব বার্মিজ লোকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে তেমন আগ্রহী নন, তাদের সহযোগিতার জন্য এটি হবে একটি নতুন উপায় খুঁজে বের করা। এসব অনাগ্রহী লোকেরাও যেন তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিতে পারেন সে কথা মাথায় রেখেই মাইস্কয়ার দলটি এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

Exit mobile version