আলোকচিত্রঃ তিউনিসিয়ার জন্য একটি অশান্ত বছর ২০১৩ সাল

তিউনিসিয়ার জন্য ২০১৩ সাল ছিল একটি অশান্ত বছর। দু’টি রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা, প্রতিবাদের পর প্রতিবাদ, সশস্ত্র দল কর্তৃক সামরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা এবং অবিরাম চলতে থাকা রাজনৈতিক সংকটে দেশটি ছিল সংকটাপন্ন।

বিরোধী দলের নেতৃত্ব স্থানীয় সদস্য এবং ইসলামপন্থীদের একনিষ্ঠ সমালোচক চকরি বেলাইদকে ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাসার বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার জন্য তাঁর পরিবার ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী দলের এন্নাহধা আন্দোলনকে দায়ী করেছে। একই সময়ে সরকার এই হত্যার দায় আনসার আল-শরিয়ার ওপর চাপিয়েছে।    

৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে তিউনিসে বেলিয়াদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হাজারও মানুষের সমাগম। ছবিঃ এলিস জাজিরি [অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত]। 

বেলিয়াদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রতিবাদকারীদের তিউনিসিয়ার পতাকা ওড়ানো। ছবিঃ এলিস জাজিরি [অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত]  

বেলাইদকে গুপ্তহত্যার খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে প্রতিবাদকারীরা তিউনিসিয়ার রাজপথে অবস্থান নেয়। তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং এন্নাহধার দপ্তরে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে একটি সরকার বিরোধী প্রতিবাদকে দমন করতে পুলিশের টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ। ছবিঃ আমিন ঘারিব। 

ছয় মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় গুপ্তহত্যার পর সরকার বিরোধী প্রতিবাদকারীরা প্রজাতন্ত্র দিবসে [২৫ জুলাই] আবারো প্রতিবাদ জানিয়ে সারা দেশে আন্দোলন সৃষ্টি করে। জাতীয় সংসদের নির্বাচকমন্ডলীর (এনসিএ) বিরোধী দলীয় সদস্য মোহামেদ ব্রাহ্মীকে তাঁর বাড়ির বাইরে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ব্রাহ্মীর পরিবার এবং বিরোধী দলও এই হত্যার জন্য এন্নাহধাকে দায়ী করেছে। এন্নাহধাও এ ঘটনায় যেকোন ধরণের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। 

২৭ শে জুলাই মোহাম্মদ ব্রাম্মি অন্তিম শয্যায় শায়িত হন। ছবিঃ লিলা ব্লাইস।  

ব্রাহ্মীর গুপ্তহত্যার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এতে করে তিউনিসিয়া এমন একটি রাজনৈতিক সংকটে ডুবে গেছে, যা কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে।  

আগস্টের ৬ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর ভবনের সামনে সরকার বিরোধীদের সমাবেশ। ছবিঃ এন্নাধার ফেসবুক পাতা। 

আগস্টের ৩১ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং এনসিএ'র হেডকোয়ার্টারের মাঝে সরকারের পতন এবং গণপরিষদ ভেঙ্গে দেবার দাবিতে মানব বন্ধন। ছবিঃ আমিনে ঘারিবী।  

২০১৩ সালে তিউনিসিয়াতে সশস্ত্র এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বিপুল পরিমাণে সশস্ত্র জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছে। তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ ছাম্বির পাহাড়ি এলাকাতে সারা বছর জুড়ে সশস্ত্র জঙ্গি দলের সন্ধানে অভিযান চালিয়েছে। রাজধানী তিউনিস থেকে এই এলাকাটি প্রায় ২৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে শক্তিশালী বিস্ফোরক দ্রব্যের আধানে বিস্ফোরণের কারণে ব্যাপক সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং পুলিশ সদস্য মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন।

৩০ জুলাই তারিখে ছাম্বিতে একটি অতর্কিত আক্রমণে আটজন সৈন্য মারা যায়। এ ঘটনায় সমগ্র জাতি শোকাতুর হয়ে পড়ে। 

চামাবিতে নিহিত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধায় মোমবাতি প্রজ্বলন। ছবিঃ সেইফ আলাহ বউনেব।  

তিউনিসিয়ার সরকার আগস্ট মাসের শেষে আনসার আল-শরিয়া তিউনিসিয়াকে (এএসটি) বেলাইদ এবং ব্রাহ্মীকে গুপ্তহত্যা ও ছাম্বি পর্বতে একটি সশস্ত্র জঙ্গি হামলার সাথে সম্পৃক্ততার দায়ে একটি “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। মৌলিক কাঠামোগত দিক থেকে এএসটি একটি ইসলামপন্থী দল। এই দলটি তিউনিসিয়াতে ইসলামিক আইন বাস্তবায়ণের দাবি জানিয়ে আসছে। 

১৯ মে তারিখে কাইরুনে পুলিশ এএসটি কংগ্রেসের উপর সরকারি নিশেদাজ্ঞার প্রয়োগ করছে। ছবিঃ নাওয়াত  

সিদি আলি বেন (সিদি বোউজিদের প্রদেশ) এবং জিবোউলাতে (বেজার প্রদেশ) বন্দুকধারীর সাথে সংঘর্ষে অক্টোবর মাসে আটজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মারা যায়। সৌসের ভ্রমণস্থল শহরের একটি সমুদ্রতীরে একই মাসে একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছে। এই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ছাড়া এই ঘটনায় আর কেউ নিহত বা আহত হয়নি।

যেহেতু ২০১৩ সাল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তাই বর্তমানে ক্ষমতাসীন তিন দলীয় জোট সরকারের শিল্প মন্ত্রী মেহেদি জোম্মাকে নুতন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বিরোধীদল এবং সরকারের মধ্যে আলোচনার পরেই তাকে মনোনীত করা হয়।

অতঃপর, একটি সংবিধানকে নিজেদের বলে গ্রহণ ও ব্যবহার করতে এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি নির্বাচন বোর্ড গঠন করতে জাতীয় সংসদের নির্বাচকমন্ডলীর (এনসিএ) একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই নির্বাচন বোর্ড আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে। ২০১৪ সালে কি তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক সংকটের সমাপ্তি ঘটবে? সেখানে কি ২০১৪ সালে একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তিন বছরের জন্য কোন গণতান্ত্রিক ক্রান্তিকাল বিজয়মাল্য পড়তে পারবে? একমাত্র সময়ই তা বলে দেবে। 

লা বুল ডি ডলগের আঁকা এই কার্টুনটিতে ২০১৩ সাল ২০১৪ সালকে স্বাগত জানাচ্ছে।  

Exit mobile version