মিশরীয়'রা বলছে: “এটা অভ্যুত্থান নয়”

এই পোস্ট আমাদের মিশরীয়'রা মুরসিকে ছুঁড়ে ফেলেছে বিশেষ কভারেজের অংশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিশরীয় ঘটনাবলিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে। এমনকি সংবাদ প্রদানের ক্ষেত্রেও। বিশেষ করে সিএনএন-এর রাজনৈতিক সংবাদের ক্ষেত্রে যা গত রাতের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির পর শুরু হয়েছে। দায়িত্ব পালনের এক বছরের মাথায় প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মোহাম্মদ মুরসিকে সরিয়ে দেয়ায় দেশজুড়ে উত্সব শুরু হয়। যদিও মুরসি সমর্থক ও বিরোধীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।

মুরসি'র সমর্থকরা বলছেন, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু মুরসি বিরোধীরা বলছে, জনগণের ইচ্ছায় সামরিক বাহিনী এই কাজ করেছে। ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী সমর্থন দিয়েছে বলেই তাকে অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে।

মিশরের ঘটনাবলিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করায় অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষিপ্ত। তারা বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার “উস্কানিমূলক বিবৃতি“তে মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে যে জনগণ পুনরায় রাস্তায় নেমে এসেছে, তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। ওবামা জুলাইয়ের তিন তারিখে এই বিবৃতি দেন:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিশরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, মিশরের ভবিষ্যত্ কি হবে, তা মিশরের জনগণই ঠিক করবেন। সামরিক বাহিনী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে অপসারণ এবং সংবিধান স্থগিত করায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমি মিশরীয় সামরিক বাহিনীকে আহবান জানাবো অতি দ্রুত স্বচ্ছতার সাথে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে। প্রেসিডেন্ট মুরসি এবং তার সমর্থকদের নির্বিচারে গ্রেফতার পরিহার করার আহবান জানাবো। আজকের অগ্রগতি হলো, আমি আমার সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছি মার্কিন আইন অনুযায়ী মিশরীয় সরকারকে সহায়তা করার।

মার্কিন সরকারের এই প্রতিক্রিয়ার পর সিএনএনের সরাসরি সম্প্রচার কার্যক্রমকে অনেক নেটিজেন অপসারিত ব্রাদারহুড প্রেসিডেন্টের প্রতি নিষ্প্রাণ সমর্থন হিসেবে অভিহিত করে। এমনকি মুরসি সমর্থকদের শান্তিপ্রিয় বলে প্রচার, জনপ্রিয় দাবি হলো “অভ্যুত্থান”, মুসলিম ব্রাদারহুডের “শান্তিপ্রিয়” সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর আক্রমণ ইত্যাদি প্রচারের অভিযোগও আনেন নেটিজেনরা:

@:CNN অভ্যুত্থানের অভিযোগে মুরসি সমর্থকরা সহিংসতায় মেতে ওঠে। http://on.cnn.com/11nnpPL

সিএনএন-এর নতুন লোগো। ছবি পোস্ট করেছেন ‏@aelsadek

সিএনএন-এর জন্য সাদেক নতুন লোগো তৈরি করেছেন। এতে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিকও রয়েছে। আরবিতে তাদের নীতিবাক্যটাও লেখা আছে: নিজেকে প্রসারিত করো।
সিএনএন-এর ঘটনা টুইস্টেড করার প্রতিবাদে ওয়ায়েল টুইটারে ছবিসহ পোস্ট করেছেন:

@Waelucination শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদ? মিথ্যাচার থামান। @সিএনএন pic.twitter.com/y9AamNfKXF

মুসলিম ব্রাদারহুডের “শান্তিপ্রিয়” বিক্ষোভ। @Waelucination যুক্তি দেখিয়ে বলেন, মুরসি সমর্থক বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে সিএনএন মিথ্যা বলছে। এই ছবিতে মুরসি সমর্থকদের মধ্যে সশস্ত্র সমর্থকদেরও দেখা যাচ্ছে।

মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের উস্কানিতে সহিংসতার সময় সিএনএন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার কৌশল কি হয়, তা তুলে ধরেছেন মে কামেল:

@MayKamel এখন #মুসলিম ব্রাদারহুডের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে #তাহরির স্কয়ারের জনতার ওপর আক্রমণ করছে। কিন্তু সিএনএন তা সরাসরি প্রচার করছে না। মিশর নিয়ে মিথ্যা প্রচার বন্ধ করো সিএনএন।

মার্কিন প্রশাসন এবং মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখে অবস্থার আরো অবনতি হয়। নেটিজেনরা টুইটারে #এটাকোনোঅভ্যুত্থাননয় এবং #আমেরিকানিজেরচরকায়নিজেতেলদাও হ্যাশট্যাগ শুরু করে।

ওয়ালিদ লিখেছে:

@WilloEgy #মুরসির পদত্যাগের দাবিতে ৩৩ মিলিয়ন সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আপনি এখনও একে সামরিক অভ্যুত্থান বলছেন? আপনি ঘটনার ভুল উপস্থাপন করছেন।

যদিও আহমেদ সাব্রি লিখেছে:

@A_M_Sabry #মিশরকে পরিচালনার জন্য আমরা #ওবামাকে কখনোই নির্বাচিত করিনি… আমি মনে করি #আমেরিকানিজেরচরকায়নিজেতেলদাও।

বাহিয়া আরো যোগ করেন:

@Baheyah: #মিশরেরজনগণেরবিপ্লবকোনোসামরিকঅভ্যুত্থাননয়। #মুরসিকে উত্খাতের জন্য মিশরের সাধারণ জনগণ গণবিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে তাদের কণ্ঠস্বরকে ব্যবহার করেছে।

জুন ৩০: দ্য রিয়েল ডিল শিরোনামের পোস্টে ইয়াশরা বদ্রু বলেছেন, মুসলিম ব্রাদারহুডের এক বছরের শাসনে মিশরীয় জাতি বঞ্চনার শিকার হয়েছে। এটা আমাদের দীর্ঘ অপেক্ষার উদযাপনের প্রহর নিয়ে এসেছে। আর তাদেরকে দিয়েছে শেষকৃত্যের নীরবতা। তিনি আরো লিখেন:

আমি রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট নই। কোনো সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি নই। এমনকি কোনো বিশেষজ্ঞও নই। আমি হাজারো মিশরীয়দের একজন যে প্রেসিডেন্টের ভবন থেকে মুরসির অপসারণ চায়। আমি হাজারো মন ভেঙ্গে যাওয়া সেই মিশরীয়দের একজন যারা ৩০ জুনের বিজয় এনেও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। সত্যের বিকৃত সাধন করা হয়েছে। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিশ্বের সামনে আমাদের নতজানু করা হয়েছে।

পরে তিনি সমাপ্তি টেনে লিখেন:

আমার এই লেখায় আপনি সেটা পাবেন। আমি মাঝরাতে এই লেখা লিখেছি। খুব সাদামাটাভাবে লেখা। কোনো তথ্যসূত্রও এতে ব্যবহার করা হয়নি। যদিও আমার কাছে তথ্যসূত্র অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে হয়। কেননা, আমি গত এক বছর ধরে দু:স্বপ্নের মধ্যে বসবাস করছি। ৩০ জুনে আমরা যা করেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত। এমনকি সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেয়া নিয়েও।

এটাই প্রকৃত সুবিচার। এটা কোনো সামরিক অভ্যুত্থান নয়। প্রথাবিরোধী আচরণের মধ্যে দিয়েই জনগণের জীবনে নতুন ভোর আসবে।

এই পোস্ট আমাদের মিশরীয়'রা মুরসিকে ছুঁড়ে ফেলেছে বিশেষ কভারেজের অংশ।

Exit mobile version