জ্বালানী মূল্য বৃদ্ধিতে ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিবাদ

এটি ইন্দোনেশিয়ার জন্য খুব কঠিন একটি সপ্তাহ, কেননা অবশেষে জ্বালানী মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত নতুন শক্তি নীতিটি বিপুল বিতর্ক ও আলোচনার ঝড় তুলেছে। বিশেষকরে কয়েক মাস পরেই যেহেতু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সরকার জোর দিয়ে বলছে, অর্থনীতিকে বাঁচাতে মূল্য বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরী। এ বিষয়ে শক্তি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী জেরো ওয়াকিক বিতর্ক করেছেনঃ

অর্থনীতিকে বাঁচাতে জ্বালানির উচ্চ মূল্য আগামীতে প্রভাব ফেলবে (শনিবার, ২২ জুন)

তিনি পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন যে, জ্বালানির জন্য নতুন মূল্য ৬,৫০০ রুপাইয়া (৬৬ মার্কিন সেন্ট) প্রতি লিটার, যা ৪,৫০০ রুপাইয়া প্রতি লিটার থেকে শুরু হবে এবং সৌর ডিজেলের মূল্য পরবে প্রতি লিটার ৫,৫০০ রুপাইয়া, এটাও শুরু হবে প্রতি লিটার ৪,৫০০ রুপাইয়া থেকে।

সরকার বহু বছর ধরে জ্বালানী মূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছিল। ইন্দোনেশিয়ার প্রধান প্রধান শহরগুলোতে গত এপ্রিল, ২০১২ সালে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে জ্বালানী মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনাটি নস্যাৎ হয়ে যায়।

প্রচার মাধ্যমগুলোর রিপোর্টের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ ধরে পাওয়া ভবিষ্যৎ বাণী, অনিশ্চয়তা ও উদ্বিগ্নতার পর অবশেষে ইন্দোনেশিয়ার জনগণ মূল্য বৃদ্ধির তিক্ত স্বাদ পেতে যাচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার হাউজ অব রিপ্রেসেনটিটিভের সদস্য দিওয়ান পারওয়াকিলান রাকায়াত খসড়া বিল ২০১৩ অনুমোদন দেয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করা হয়। রাজধানীতে মঙ্গলবার (১৭ জুন) পূর্ণ অধিবেশন চলাকালে রাষ্ট্রীয় বাজেট সংশোধন করে আইনে রুপান্তরিত করা হয়, যা খসড়াটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। একটি উচ্চ জ্বালানী মূল্য নকশার জন্য ইন্দোনেশিয়ার সরকারের প্রস্তাবনাও এই খসড়াতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জ্বালানী মূল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আশানুরূপ প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছে। নতুন জ্বালানী মূল্য নীতিটির অনুমোদনের প্রকাশ্য নিন্দা জানাতে  ছাত্র এবং কর্মজীবীরা দলে দলে রাস্তায় জড়ো হয়েছে।

জাকার্তার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের র‍্যালি। ছবিঃ নাগ্রাতা ফেব্রুয়ানা, কপিরাইট @ডেমোটিক্স (6/17/2013)

পার্লামেন্ট ভবনের সামনে ইন্দোনেশিয়ান মেটাল ওয়ার্ক ইউনিয়ন ফেডারেশনের হাজার হাজার লোক বিক্ষোভ করছে। ছবিঃ নাগ্রাত ফেব্রুয়ানা , কপিরাইট @ডেমোটিক্স (6/17/2013)

উচ্চ জ্বালানী মূল্যের সাথে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করতে সরকার নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে সরাসরি নগদ সহযোগীতা প্রদান করার অঙ্গীকার করেছে। ১৪ টি শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোতে যাদের সামাজিক সুরক্ষা কার্ড ( কেপিএস – কার্টু পারলিনডুনগান সোসিয়াল ) আছে শুধুমাত্র তাঁদেরকে স্বল্পমেয়াদী সাহায্যটি প্রদান করা হবে। এই ১৪ টি শহর হল জাকার্তা, পালেম্বাং, বোগর, সেমারাং, ইয়োগিয়াকার্তা, সুরাবায়া, ডেনপাসার, বানজারমাসিন, সোলো, মাকাসার দান এবং আম্বোন।

সরকার যে এই প্রথম জোরপূর্বক জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধি করলো তা নয়। মারদেকা ডট কম অনুসারে, সবচেয়ে বেশী মূল্য বৃদ্ধি অনুমোদন করা হয়েছিল মার্চ ২০০৫ সালে। প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইউধোয়োনো সর্বোচ্চ প্রতি লিটারের ২,১০০ রুপাইয়া পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছিলেন। দাম বাড়ানোর পরও জ্বালানী মূল্য ছিল মাত্র ২,৪০০ রুপাইয়া।

কিছু ইন্দোনেশিয়ার জনগণ নগদ সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারন তাঁদের মতে জনগণকে জ্বালানী মূল্য বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে যা প্রয়োজন, এটা তা নয়। নাগরিক রিপোর্টার ইবনু দাওয়াম আজিজ লিখেছেনঃ

সরাসরি নগদ সহযোগিতাটুকু তৃণমূলকে আরো একবার বোকা বানাবে।

অন্যরা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দলটি জনসমর্থন টিকিয়ে রাখতে এবং আরো জনসমর্থন অর্জনের জন্য এই খসড়াটি তৈরী করেছে। জেফরি হিদায়াত তাঁদের মধ্যে একজন, যিনি বিশ্বাস করেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেট পার্টি ভোটারদের সামনে তাঁদের নষ্ট হয়ে যাওয়া ইমেজ পুনরুদ্ধারের জন্য এই পরিকল্পনাটি হাতে নিয়েছে।

যদিও ইন্দোনেশিয়ার সকল জনগণ মূল্য বৃদ্ধিতে ভাবগাম্ভীর্যের সাথে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। দাম বাড়ার সাথে সাথে তাঁরা জ্বালানী মূল্য নিয়ে কৌতুক ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাহিনী তৈরি করে জনপ্রিয় অনলাইন বিচারালয় কাসকুসে পোস্ট করেছেন। যেমন, সিটাপাল্লো একটি হাসির ছড়া লিখেছেন।

Exit mobile version