“কাপড় তোল, জীবন বাঁচাও” জরায়ু ক্যান্সারের বিজ্ঞাপন নিয়ে সিঙ্গাপুর বিভক্ত

চলতি মাসে সিঙ্গাপুরবাসীকে জরায়ু মুখ ক্যান্সারের বিনামূল্যে প্যাপ স্মেয়ার পরীক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে সিঙ্গাপুর ক্যান্সার সোসাইটি “কাপড় তোল, জীবন বাঁচাও” নামে একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে। বিজ্ঞাপনটি প্রচার করার পরেই এর সৃজনশীল দিক, কার্যকারিতা এবং বিরোধীতা করে ব্যাপক আলোচনা হয়।

এই বিজ্ঞাপনী প্রচারণার একটি বিশেষ দিক হলো, এতে সিঙ্গাপুরের সেলিব্রেটি তারকারা মেরিলিন মনরোর সিনেমা দ্য সেভেন ইয়ার ইচ-এর আইকনিক পোজের মতো করে পোজ দেন। বিজ্ঞাপনী প্রচারণার পোস্টার যাত্রী ছাউনি এবং রেল স্টেশনে দেখা যাচ্ছে।

সিঙ্গাপুর ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, জরায়ু ক্যান্সার সিঙ্গাপুরের সবচে’ বড়ো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর একটি:

সিঙ্গাপুরে নারীদের যেসব ক্যান্সার ধরা পড়ে তার মধ্যে নবম অবস্থানে আছে জরায়ু ক্যান্সার। প্রতি বছর ২০০ জন নারীর পরীক্ষায় এই রোগ ধরা পড়ে, এর মধ্যে ৭০ জন মারা যান। এই রোগ খুব সহজে প্রতিরোধ ও নিরাময় করা যায়।
২০১৩ সালের ১-৩১ মে তারিখের মধ্যে সকল সিঙ্গাপুরী নারী যাদের বয়স ২৫ থেকে ৬৯ বছর, তারা দ্বীপজুড়ে অংশগ্রহণকারী ক্লিনিকগুলোতে বিনামূল্যে প্যাপ স্মেয়ার স্ক্রিনিং করাতে পারবেন।

এ মাসে ১৭৮টি ক্লিনিক বিনামূল্যে প্যাপ স্মেয়ার স্ক্রিনিং দিচ্ছে। এই বিজ্ঞাপন নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আকর্ষণীয় বলে অনেকে বিজ্ঞাপনটির প্রশংসা করছেন। আবার অনেকে একে ফ্যাশন অথবা শরীর স্লিম রাখার বিজ্ঞাপন ঠাওরেছেন। অনেকে আবার যৌনাবেদনময়ী বলে এর সমালোচনা করেছেন।

“কাপড় তোল, জীবন বাঁচাও” বিজ্ঞাপনটি জরায়ু ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে চালানো হচ্ছে। ছবিটি সিঙ্গাপুর ক্যান্সার সোসাইটি'র ফেসবুক পাতার সৌজন্যে নেয়া।

অভিযোগ করার সাথে সাথে তারা এও বিশ্বাস করে যে, খুব সহজে মনে করিয়ে দিলেই যথেষ্ট হতো বিনামূল্যে স্মেয়ার স্ক্রিনিং করা যাবে :

সিঙ্গাপুরের নারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য বিতর্কিত শিরোনামের দরকার নেই। চারটি অক্ষরের ফ্রি শব্দটিই একটি কৌশল হতে পারতো। এই জাদুকরী শব্দটির কারণে সিঙ্গাপুরের নারীরা পরীক্ষা করানোর জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতো। তাদেরকে ছোট অক্ষরে আটকে রাখার কোনো দরকার ছিল না।

অ্যা মুসলিমিনাহ ইন এনএল বিষয়টি নিয়ে একই লাইনে চিন্তা করেছেন:

এই আইডিয়ার পিছনে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি যা নারীর নিরাবরণ দেহভঙ্গিমা, যৌনাবেদনময়ীতা খোঁজে। কপিরাইটার হয়তো ভেবেছেন বিজ্ঞাপনটি কাজ করবে, অন্য এক ব্যঞ্জনা দিবে। কিন্তু অন্যরা ভাবছে তার উল্টো- গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়ার জন্য যৌনাবেদনময়ী বিজ্ঞাপন মোটেও ভালো আইডিয়া নয়।

তাহলে কী ধরনের শব্দ ব্যবহার করলে সিঙ্গাপুরবাসীর মনোযোগ পেত? পরের বিজ্ঞাপনের জন্য আমি নিচের শিরোনম ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি:
বিনামূল্যে প্যাপ স্মেয়ার!
মনোযোগ আর্কষণের জন্য এটা হবে জুতসই লাইন এবং আশা করি নারীরা বিনামূল্যে চেকআপ করানোর জন্য নিবন্ধন করবেন। 🙂

জনাব ব্রাউন নামের একজন বিজ্ঞাপনের বার্তাটিকে সমর্থন দিলেও বিজ্ঞাপনের থিম নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন:

আমি কী সত্যি সত্যি জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য সবকিছু করতে পারি? “কাপড় তোল, জীবন বাঁচাও”?
আপনি যদি এটা করতে পারেন, তাহলে “পা খুলুন, জীবন বাঁচান” কেন নয়?
অথবা “অন্তর্বাস ফেলে দাও, জীবন বাঁচাও”?
অথবা “নিচের কাপড় তুলুন, জীবন বাঁচান”?
যাই হোক, এতসব হট্টগোল সত্ত্বেও, জরায়ু ক্যান্সার একটি জটিল রোগ। এবং মে মাসজুড়ে আমি বিনামূল্যে স্মেয়ার স্ক্রিনিং নিয়ে তথ্য সরবরাহ করবো।

ব্রেকফাস্ট নেটওয়ার্কের একটি লেখায় ওয়েসলি গুন্টার বিজ্ঞাপনটির পক্ষে কথা বলেছেন:

… যদি বিজ্ঞাপনটি পছন্দ করি, তার একটাই কারণ এটি অনেক নারীকে প্যাপ স্মেয়ার পরীক্ষার জন্য নিয়ে যেতে পারবে। কারণ এটা সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং এটা তাদের জীবন রক্ষা করবে। এটা কী বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য পূরণ করে না?
পুরো ব্যাপারটির একটি “দু:জনক” দিক হলো এটি কীভাবে কাজ করে, তা দেখার সুযোগ না দেখেই বিজ্ঞাপনের ক্রিয়েটিভকে আঘাত করা হয়েছে।

লিন্ডা ব্ল্যাক নামের একজন মডেল এই বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন। বিজ্ঞাপনচিত্রের সফলতায় তিনি গর্বিত:

এই বিজ্ঞাপন প্রচারণা নিয়ে আমি গর্বিত। আমার ধারণা এটা খুব সুন্দর একটা প্লট। নারীর স্বাস্থ্য'র বিষয়টি দারুণভাবে সম্পাদিত হয়েছে, যা সবার হৃদয় ছুঁয়েছ। আমি এটার পক্ষে। আমি সবসময় এটাকে সমর্থন জুগিয়ে যাবো। আমি এটার অংশ হয়ে থাকবো, এই আমার সিদ্ধান্ত।

বলা হচ্ছে, বিজ্ঞাপন প্রচারণা ব্যাপক সফল হয়েছে- বিপুল সংখ্যক মানুষ এটা নিয়ে কথা বলছেন, অথবা এ বিষয়ে কিছু শুনেছেন, এবং এর মূলে সত্যটাই রয়েছে: নারী হিসেবে আপনি শেষ কবে এই পরীক্ষার কথা শুনেছেন? এই দেশে এটা অবিশ্বাস্য নয় যে, বিনামূল্যে পরীক্ষা যা তুমি পেতে চাও, ক্ষমতা তার থোড়াইকেয়ার করে?

Exit mobile version