শীতকাল বাংলাদেশে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময়। তাই বেশিরভাগ পর্যটকই ভ্রমণের জন্য এই সময়কেই বেছে নেন। ভ্রমণের তালিকায় তাদের প্রথম পছন্দের দিকে থাকে সুন্দরবন। বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাস সুন্দরবন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপ-সহ অসংখ্য প্রাণির আবাস সুন্দরবন।
কিন্তু পর্যটকদের উৎপাতে বিপন্ন দশা এই সুন্দরবনের। সৌন্দর্য দেখতে আসা পর্যটকদের দেখে বনের প্রাণীরা যেমন বিরক্ত হচ্ছে, তেমনি পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যম এবং অনলাইনে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সুন্দরবনে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ পর্যটক বেড়াতে আসেন। পর্যটকদের সংখ্যা প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ করে বাড়ছে। আর এদের বেশিরভাগই বনের পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই ‘পিকনিক’ আনন্দে মেতে ওঠেন।
প্রথম আলোর সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ সুন্দরবন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন:
বেলা গড়িয়ে সকাল ১০টা বাজতেই লঞ্চ আর ছোট জালি নৌকায় পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে গেল। মাইকে বিকট শব্দে হিন্দি গান বাজতে বাজতে একটার পর একটা লঞ্চ বনের ভেতরে হানা দিতে লাগল। পর্যটকদের লঞ্চ চলে যাওয়ার সময় সুন্দরবনের পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক চিপসের প্যাকেট ও পলিথিন নদীতে ভাসতে দেখা গেল।
তারেক অণু সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে সেখান থেকে তার ফেসবুকে পোস্ট করেন:
কিছু অসভ্য মানুষ দেখলাম যারা বনের ভিতরে, নদীর জলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল নির্বিকারে নিক্ষেপ করে এবং তারস্বরে মাইক বাজিয়ে গান শোনে। এরা কেন আসে সুন্দরবনে!
সুন্দরবন ভ্রমণ করতে আসা এইসব পর্যটকদের অশিক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ আরিফুর রহমান চৌধুরী:
আমরা এখনো অশিক্ষিত পর্যটক, আমার এখনো জানিনা কোন এলাকাতে কি ভাবে ভ্রমণ করতে হয়। বনের সোন্দর্য বিকট শব্দে গান বাজিয়ে হই হুল্লোড় করে উপভোগ করা যায় না।
সুন্দরবনে অনেকগুলো নদী রয়েছে। এই নদীপথে ২০১১ সালে জাহাজ ও কার্গো চলত ২৫টি। ২০১২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩০-এ। এই জাহাজগুলোও প্রতিদিন হর্ন বাজিয়ে, দূষিত ধোঁয়া উড়িয়ে ও বর্জ্য তেল ফেলে বনের পরিবেশ নষ্ট করছে।
আবার মাছ ও পোনা ধরতে গিয়ে জেলেরাও বনের অনেক ক্ষতি করছেন। সামহোয়ারইনব্লগে স্বপ্নবালক আমি লিখেছেন:
মাছ বা কাঁকড়া ধরতে কিংবা শামুক-ঝিনুকের খোঁজেও যারা যান তারা যে স্রেফ মাছ-কাঁকড়া-ঝিনুক নিয়ে ফেরেন তা নয়। পথে গাছ কেটে নৌকায় তুলে কিংবা নৌকার সঙ্গে বেধে ভাসিয়ে নিয়ে আসেন।
আশার কথা, পরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে সুন্দরবন ভ্রমণের খসড়া নীতিমালা তৈরি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য বা প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনো শব্দযন্ত্র যেমন—মাইক, মাইক্রোফোন, রাসায়নিক দ্রব্য, পটকা, বাজি ইত্যাদি পর্যটকবাহী জলযানে রাখা যাবে না। পর্যটকদের ব্যবহৃত যেকোনো পরিবেশ দূষণকারী দ্রব্য যেমন—পলিথিন, প্লাস্টিক, কৌটা ইত্যাদি বা খাবারের উচ্ছিষ্ট নদীতে ফেলা যাবে না। এ জন্য জলযানেই বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে।