পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গত মাসে চীনা সরকার তিব্বতে ৩ হাজার কোটি রেনমিনবির (৩লক্ষ ৮৫হাজার ১৬৫ কোটি টাকা) একটি থিম পার্ক প্রকল্প শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। প্রথমে পার্কটিতে একজন তিব্বতী রাজা কর্তৃক তাঙ-রাজবংশের সম্রাটের ভাইঝিকে বিয়ে করার কাহিনী নিয়ে রাজকুমারী ওয়েনচেঙ নামের একটি সিনেমার চিত্রধারণ করা হবে।
এটি লাসা শহরের প্রান্তে ৮০০ হেক্টর (১৯৭৬.৮৪ একর) জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিব্বতী ভিন্নমতাবলম্বীরা প্রকল্পটিকে সত্যিকারের তিব্বতী সংস্কৃতির ভাগাভাগি এবং সংরক্ষণের পরিবর্তে বরং “তিব্বতের ডিজনীকরণ” হিসেবে বর্ণনা করেছে।
রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বিতর্ক বাদ দিলেও এমনকি হান চীনা বৃত্তের মধ্যেও উন্নয়ন প্রকল্পটি অত্যন্ত বিতর্কিত। সিনা ওয়েইবো ব্যবহারকারী @১৬৯০৭৩৭৫৮০ মনোনীত থিম পার্ক নির্মাণ এলাকার কিছু ছবি পোস্ট করেছেন [চীনা ভাষায়] এবং স্বীকার করেছেন এই উন্নয়নটির জন্যে এমন একটি পরিবেশের ক্ষতিতে তিনি বিরাট দু:খ পেয়েছেন:
সিজিয়াওলিন গ্রাম। ছবি তুলেছেন সিনা ব্যবহারকারী @১৬৯০৭৩৭৫৮০
সিজিয়াওলিন গ্রাম লাসা শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে। কিংবদন্তী মতে এখানেই রাজকুমারী ওয়েনচেঙ এবং তার ভৃত্য বসতি স্থাপন করেছিলেন। এটি তিব্বতীদের সময় কাটানোর জন্যে একটি বিস্ময়কর স্থান। এটি একটি বিশাল এক টুকরা তৃণভূমি আর পর্বত ও নদী পরিবেষ্টিত। আপনি সেখান থেকে পোটালা প্রাসাদ [দালাই লামার সাবেক প্রধান বাসভবন] দেখতে পাবেন। তিন বছরের মধ্যে একটি চার তারকা হোটেলসহ একটি তথাকথিত সাংস্কৃতিক পার্ক – প্রিন্সেস ওয়েনচেঙ থিম পার্ক – এই দৃশ্যগুলোকে প্রতিস্থাপিত করবে। অবশ্যই পর্যটনের উন্নয়নের কিছু সুবিধা আছে। তবে আমি সত্যিই সত্যি আশা করি সবকিছু আগের মতোই থাকুক।
নেটইজ মাইক্রো ব্লগে বিষয়টি নিয়ে নেটাগরিকদের মতামত সংগ্রহের জন্যে একটি ফোরাম [চীনা ভাষায়] স্থাপন করা হয়েছে। এর সমর্থনে (বলেছেন):
@০১৪৭৭৩৯২৪১: আমি লাসার জন্যে আমার সমর্থন প্রকাশ করতে চাই। এটি অবশ্যই একটি ভালো প্রকল্প। সুবিধা প্রদানকারী হিসেবে সরকার সমস্ত টাকা বিনিয়োগ করতে পারে না। এটা বিনিয়োগের একটি আহবান। এটি শুধু স্থানীয় পর্যটন উন্নয়নে সাহায্য করবে না বরং এতে অনেক সড়ক ও সেতুর মতো নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে। এটা জনগণের জন্যে ভাল। লাসা একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন স্থানে উন্নীত হবে।
@বেনিডাব্লিউএফএফজি: ঐতিহ্যকে কিছু প্রদান করা ভাল। শুধু নিশ্চিত নই তহবিল সত্যিকারভাবেই ভাল জায়গায় যাবে নাকি আপচয় হবে। এখনো আমাদের অনেক ক্ষুধার্ত শিশু আছে যাদের শিক্ষা নেওয়ার সামর্থ নেই।
নিচে প্রকল্পটির বিরোধী নেটাগরিকদের কিছু মতামত দেওয়া হলো:
@এক্সএসসিসিএলডি১৮৭: আমাদের থিম পার্ক নির্মাণ করা উচিৎ নয়। লাসা প্রাকৃতিক সম্পদ, জাতিগত চরিত্র এবং সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্যে কোন থিম পার্ক ব্যবহার এবং কৃত্রিম নির্মাণের দরকার নেই। প্রকল্পটি ব্যর্থ হলে এটি লাসা সম্পর্কে জনগণের ইতিবাচক চিত্র বিনষ্ট করবে এবং পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাবে। অবশেষে এটা অপচয়ে পর্যবসিত হবে।
乌云遮不住太阳 :做正事一分钱都没有,到处哭穷,乱七八糟的事,哪都不差钱
@৪১০৭৫৩২৩৭: আমাদের যখন সঠিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যে টাকার দরকার তখন আপনি নিজেকে খুব গরিব বলে কান্নাকাটি করেন। (অথচ এরকম) একটি অগোছালো প্রকল্পের জন্যে আপনার রয়েছ যত সব টাকা।
@ক্ষুদ্রইঁদুর: আমাদের তিব্বত ভ্রমণের কারণ স্বর্গ এবং আধ্যাত্মিক দুনিয়া কাছাকাছি যাওয়া, পর্বত ও নদী পরিবেষ্টিত বিশ্বাসের শুদ্ধতার অভিজ্ঞতা নেয়া। আমরা বাস্তবের জীবন্ত তিব্বত দেখতে চাই, শিল্প-সংস্কৃতির শ্রুতিমধূরতার আাড়ালে কৃত্রিম এবং কুরুচিপূর্ণ নির্মাণ দেখতে চাই না। ৩০হাজার কোটি রেনমিনবি? এটি জনগণ এবং তাদের জীবিকা উন্নত করার জন্যে ব্যয় করুন।