পাকিস্তান: নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিদ্রুপ

পাকিস্তানের ক্ষমতাশীন দল, পিপিপির রাজনীতিবিদ রাজা পারভেজ আশরাফ গত শুক্রবার ২২ জুন, ২০১২ তারিখে পাকিস্তানের ২৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন।

তিনি শপথ নেবার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে সংসদে ভোট অনুষ্ঠিত হয় যেখানে তিনি ২১১ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী, বিরোধী দল পিএমএল-এন এর মেহতাব আব্বাসী পান ৮৯ ভোট।

আশরাফ বুধবার ২০ জুন শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন সামাজিক প্রচার মাধ্যমগুলো তার প্রতি বিদ্রুপ করে।

আশরাফ, পিপিপির আস্থা ভাজন ও দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারির ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পাকিস্তানের ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় পানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

আব্বাস নাসির, পাকিস্তানের প্রবীণ সাংবাদিক সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলেছেন:

@আব্বাসনাসির৫৯: দুঃখিত পিপিপি। লোডশেডিং বিশৃঙ্খলার জন্য অযোগ্যতার কারণেও তাকে শাস্তি দেয়া যেতো। রাজা নয়।

জাতীয় সংসদে রাজা পারভেজ আশরাফ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম বক্তৃতা করেন। ছবি ডমিনিক্স।

 

পাকিস্তানে গুরুতর বিদ্যুৎ সমস্যা রয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ২০০৮ সালে যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখন থেকেই নির্মম বিদ্যুৎ কর্তন বা লোড শেডিং আছে। ধারণা করা হয়েছিল, বিতর্কিত ভাড়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্প পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে, বর্তমানে তা সমস্যার মূলে রয়েছে এবং সাম্প্রতিককালে সর্বোচ্চ আদালত তা বাতিল করেছে।

অনেক পাকিস্তানী বন্ধ এই প্রকল্পগুলো নিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে টুইটারে ‘রাজা রেন্টাল’ নামে অভিহিত করছে:

@মাহামালি০৫:রাজা রেন্টাল পাকিস্তানের প্রধান(দুর্নীতি)মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন।

@শাকিরহুসাইন: হামিদ মীর রাজা রেন্টালের ক্লীপ দেখাচ্ছেন ২০০৮ থেকে তিনি বলছেন ২০০৯ সালে লোড শেডিং দূর হবে।

@ইরফানাম:@শাকিরহুসাইন কারণ প্রকৃতপক্ষে তিনি সঠিক, আগে বিদ্যুৎ যেতো, এখন কিছুক্ষণের জন্য আসে।

@তামিহক: হাঁ তিনি জানেন কিভাবে আমাদের অন্ধকারে রাখতে হবে “@জেহক_: আমার মনে হয়, রাজা পারভেজ আশরাফ পাকিস্তানের উপযুক্ত প্রধানমন্ত্রী”

কিছু শহরাঞ্চলে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না এবং কিছু গ্রামাঞ্চলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে না। পাকিস্তানের কিছু অংশে তাপমাত্রা ১১৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, অধিকাংশ পাকিস্তানির জন্য বিদ্যুৎ সংকট সর্বোচ্চ দুর্দশা।

এই সপ্তাহের শুরুর দিকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির ন্যায়ের যুদ্ধে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানী অযোগ্য হওয়ার কারণে পিপিপির সভাপতি রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারির সামনে খুব সামান্য পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা ছিল।

@খালিদখান৭৮৭:#সুন্দরজাতি যা নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে #রাজারেন্টাল কে নির্বাচিত করেছে কিন্তু রাষ্ট্রপতি জারদারি পেছন থেকে সুতা নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

রাষ্ট্রপতি জারদারির অবৈধ সুবিধা সংক্রান্ত মামলাগুলি পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুসরণ করে সুইস সরকারের কাছে অনুরোধপত্র পাঠাতে অস্বীকার করায় গিলানী অযোগ্য হন। যদি তিনি ক্ষমতাচ্যুত না হতেন, তবে তিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পাকিস্তানের একমাত্র পূর্ণ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হতেন।

রাষ্ট্রপতি জারদারি প্রথম মাখদুম সাহাবুদ্দিনকে প্রথম মনোনয়ন দেন, যিনি এই পদের জন্য পিপিপির বিতর্কিত রাজনীতিবিদ। যখন তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন, তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। শাহাবুদ্দিন, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পাকিস্তানের ঔষধ প্রস্তুত সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্তের মূলে ছিলেন।

অনেকে বিশ্বাস করেন যে সর্বোচ্চ আদালত শীঘ্রই আশরাফকেও অযোগ্য ঘোষণা করবেন, যখন তিনি আদালতের রায় মেনে নিতে অস্বীকার করবেন, তখন দেশের বিচার বিভাগের কর্মী ও ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যে আরেকদফা সংঘর্ষের স্ফুলিঙ্গ দেখা দেবে। ইসলামাবাদ ভিত্তিক সাংবাদিক ওমর ওয়ারিস, যিনি দি ইনডিপেনডেন্ট ও টাইম এ লেখেন, সংক্ষিপ্ত বার্তায় জানাচ্ছেন:

@ওমরওয়ারিস: কবে রাজা রেন্টালের প্রধানমন্ত্রীত্বের ইজারা শেষ হবে?

অন্যান্য মন্তব্যকারী বলেছেন:

@সহিদসাঈদ: সকলেই রাজাকে ৯-১৫-৩০ দিন দিয়েছে, পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে আপনাদের মতামত বাস্তবসম্মত হতে পারে, কিন্তু সবাই জারদারিকে ৩০-৬০-৯০ দিন সময়ও দিয়েছে!!

@মেজরলিপ্রফাউন্ড: পাকিস্তানের গণতন্ত্রের একটি সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে অনেক অনেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রকে সেবা দিয়েছেন। শততম হওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভবত প্রথম হবে।

পাকিস্তানের বিশৃঙ্খল গণতন্ত্রের ইতিহাস আছে। সৃষ্টি পরবর্তী অর্ধেক সময় সামরিক শাসনের আওতায় ছিল। ৬৪ বছরে, ৪জন সামরিক শাসক এবং ২৫জন প্রধানমন্ত্রী ছিল, যার অধিকাংশ দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত।

পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রায়শ:ই দায়ী করা হয়, এই সময় বিচার বিভাগকে সেই ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। মোহাম্মদ হানিফ, পাকিস্তানী সুপরিচিত সাংবাদিক ও লেখক, দি গার্ডিয়ানে লিখছেন:

সেনাবাহিনী প্রকৃতপক্ষে, দেশে ও বিদেশে ধারাবাহিকভাবে মানবতার অবমাননার কারণে মুখভার করে পার্শ্ব রেখা থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। কেউ কেউ আত্মতৃপ্তিতে বলছেন সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরকে সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে কার্যাদি। পাকিস্তানে একটা সময় ছিল, যখন মানুষ কৌতুক করে বলত: কেন আপনি আইনজীবী নিয়োগ করবেন, যখন আপনি বিচারককে কিনতে পারছেন? এখন আপনি তাদের কিনতে পারবেন না, কারণ তারা এখন ইতিহাসে জায়গা কিনতে ব্যস্ত।

Exit mobile version