পেরুঃ কোন বিষয়টি ডলফিনদের মেরে ফেলছে

[উল্লেখ ছাড়া সকল লিঙ্ক স্প্যানিশ ভাষার]

ডলফিন [ইংরেজী ভাষায়] হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম এক বুদ্ধিমান প্রাণী, যা পৃথিবীর প্রায় সকল মহাসাগরে পাওয়া যায় এবং এবং তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রাকৃতিকভাবে ঘাতক প্রকৃতির। পেরুর বিভিন্ন উপকূলে এই সমস্ত ডলফিনদের তাদের দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে তারা সার্ফারদের সাথে সাঁতার কাটে। পারাকাশ-এর জাতীয় সংরক্ষিত উপকূলীয় এলাকা, অথবা উত্তর পেরুর পিউরার সমুদ্র উপকূলে তারা চলাফেরা করে, যা কিনা হ্যাম্পব্যাক নামক তিমির জন্য সংরক্ষিত এক অঞ্চল

এই সংবাদ সৃষ্টি হয়েছে এই কারণ যে [ইংরেজী ভাষায়] বছরের প্রথম দিকে দেশের উত্তর অঞ্চলের উপকূলে ৩০০০ ডলফিনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা কিনা এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছ। কার্লোস ইয়াইপেন লিয়ানোস, পেরুর সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক প্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা অরকার [সায়েন্টিফিক অর্গানাইজেশন ফর কনজারভেশন ফর একুইটিক এ্যানিমাল] প্রধান, যিনি জানাচ্ছেন যে গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস এবং খনিজ পদার্থ অনুসন্ধানের কার্যক্রমের কারণে এই সমস্ত প্রাণীর মৃত্যু ঘটেছে।


পেরুর পিস্কোর ডলফিনসমূহ, ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী অ্যালিসিয় ০৯২৮-এর, এট্রিবিউশন ২.০ জেনেরিক ( সিসি বাই ২.০)।

অরকার প্রধান উন্মোচন করেছেন যে মৃত ডলফিনের ময়না তদন্ত করে জানা গেছে যে এই সমস্ত ডলফিনসমুহ একুইট ডিকম্প্রেস সিন্ড্রোম নামক রোগে ভুগছিল। এবং তাদের পেরিস্টোরিয়াল হাড়ে (সাধারণ হাড়ের মাঝের অংশ) ক্ষত এবং এবং তাদের কানের মাঝের অংশ রক্তক্ষরণ দেখা গেছে, এগুলোর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন লিভার, কিডনি এবং রক্ত সরবরাহ শিরায় বুদবুদ পাওয়া গেছে।

সংবাদপত্রগুলো এর পরে সংবাদ প্রদান করে যে, খনিজ পদার্থ অনুসন্ধানে সিসমিক থ্রিডি ( সিসমিক টমোগ্রাফি) নামক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে, যা কিনা ধ্বনি বিষয়ক প্রভাব সৃষ্টি করে। এর সেগুলোর প্রভার ডলফিনের উপর পড়েছে। সমুদ্রে তেল এবং গ্যাস-এর মজুত বিষয়ক তথ্য জানার জন্য টামোবস (পিউরার উত্তরে) নামক এলাকায় বিপিজেড নামক কোম্পানী এই অনুসন্ধান কার্য চালিয়েছে,। উক্ত কোম্পানী এই বিষয়টি অস্বীকার করেছে যে তাদের অনুসন্ধানের কারণে সামুদ্রিক এই সব প্রাণীর মৃত্যু ঘটেছে, কিন্তু এর ফলে পরিবেশের প্রভাব বিষয়ক যে রিপোর্ট এসেছে, তা নির্দেশ করছে যে এই ঘটনায় এই প্রযুক্তির প্রভাব রয়েছে।

সংসদের সভাপতি ড্যানিয়েল আবুগাট্টাস এই আশার কথা ব্যাক্ত করেছেন যে পরিবেশ, উৎপাদন, জ্বালানী এবং খনি বিষয়ক মন্ত্রীরা পেরুর সংসদকে এই ঘটনা সম্বন্ধে তথ্য প্রদান করবে। আরেকটি সূত্র ধারণা দিচ্ছে যে পেরুর সমুদ্রবিজ্ঞান ইনষ্টিটিউট বা আইএমএআরপিই-এর (ইনিস্টিটিউটো ডেল মার ডেল পেরু) এই বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট প্রকাশ করা উচিত।

হার্ডি জোনস, ব্লুভয়েস.ওর্গ [ইংরেজী ভাষায়]-এর প্রতিষ্ঠাতা, যিনি সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং একটিভিস্ট। তিনি ২৫ মার্চে প্রকাশ করা ডাক্তার ইয়েপেন লিয়ানোসের প্রাথমিক রিপোর্টের বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভের জন্য পেরুতে এসে হাজির হন। পেরুর উত্তর উপকূলে হাজির হয়ে ২৭ মার্চে তিনি টুইট করেন [ইংরেজী ভাষায়]:

পেরুর উত্তরে উপকূলে সান জোসের ১৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকা জুড়ে ৬১৫টি #ডলফিন মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। এ এক বেদনাদায়ক ঘটনা, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দয়া করা এটি পুনরায় টুইট করুন। এই ঘটনার অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।

কি ভাবে তিনি ঘটনা সম্বন্ধে জানতে পারলেন, পেরু যাত্রা এবং সেখানে গিয়ে তিনি কি দেখলেন, এই বিষয়ে জোনস তার নিজস্ব ব্লগে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেছেন [ইংরেজী ভাষায়]:

কার্লোস এবং তার দল বেশ কয়েকটি ডলফিনের শব ব্যবচ্ছেদ করেছেন। তারা বেশ কিছু সদ্যজাত সাধারণ ডলফিনের নাড়ী শরীরে যুক্ত ছিল, সেগুলো ছিল দোমড়ানো অবস্থায়।
সার্ফলাইনে আমরা কঠিন বালির সাথে দৌড়িয়েছি আর একটি করে মৃত ডলফিন দেখে আর্তনাদ করে উঠেছি। প্রথমে কয়েক মিনিট পর পর তাদের দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু তারপর আমরা বিরতি নিতে বাধ্য হলাম, যখন অর্তনাদ চলতে থাকল, ডলফিন ডলফিন, অট্টোরা ডস মাস! দেখ দেখ ঐ কিনারে আরেকটা পড়ে আছে। ”

পরবর্তীতে তিনি ডঃ ইয়াইপেন-লিয়ানোসের আংশিক রিপোর্ট ব্লুভয়েস ব্লগে পোস্ট করেছেন [ ইংরেজি ভাষায়]:

যেমনটা এর আগের রিপোর্টে দেখা গেছে, দুটি প্রজাতি আক্রান্ত হয়েছেঃ লংব্যাকড কমন এবং বামিস্টার প্রোপোসিস নামক ডলফিন। আমরা গণনা করে দেখলাম ৬১৫টি সাধারণ ডলফিন মারা গেছে। এখানকার সকল বয়সের ডলফিন আক্রান্ত, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, মেয়ে, স্তন্যদাত্রী মা, যুবা, শিশু এবং সদ্যজাত ডলফিন। আমরা গুণে দেখলাম ১৯টি ছিল প্রোপসিস নামক ডলফিন, এর সবকটি ছিল মেয়ে এবং শিশু ডলফিন।

অরকা যা আবিষ্কার করেছে তার ছবি প্রতিষ্ঠানে ফেসবুকে প্রদান করেছে। সিএনএন স্প্যানিশ নামক টিভি চ্যানেল এই ঘটনায় ডঃ ইয়াইপেন লিয়ানোস-এর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। নীচের এই ভিডিওটি, উত্তর পেরুর সমুদ্র উপকূলে হার্ডি জোনস এবং কার্লোস ইয়াইপেন লিয়ানোসের যাত্রার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে::

এদিকে ১০ এপ্রিল, ডলফিনের মৃত্যু এবং তেল গ্যাসের অনুসন্ধানের মাঝে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য পরিবেশ এবং মৎস মন্ত্রী পরস্পরের সাথে মিলিত হয়। পরিবেশের কারণে সামুদ্রিক প্রাণীকুলের উপর তৈরী হওয়া জটিলতা এড়ানোর জন্য গ্রহণ করা পদক্ষেপসমূহের বিষয়েও তাদের রিপোর্ট প্রদান করার কথা। বর্তমানে এক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে ২০,০০০ ডলফিন এবং অন্যান্য প্রাণী মৃত্যুমুখে পতিত হবার মত বিপদের সম্মুখীন। পেরুর সমগ্র উপকূলে সিসমিকা থ্রিডি নামক যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে তদন্তের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

মূল লেখাটি হুয়ান আরেলানোর ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশ করা হয়েছে।
Exit mobile version