মায়ানমারের এক সুন্দর ১৩ শুক্রবার নামক দিবস

মায়ানমারের রাষ্ট্রপতি থিন সিয়েন, আজ দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্ত করে প্রমাণ করেছেন যে দেশটির নতুন সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করছে। সরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের এক সংবাদ অনুসারে জানা গেছে, সব মিলিয়ে ৬৫১ জন ভিন্নমতাবলম্বীকে কারাগার থেকে মুক্তি প্রদান করা হয়েছে।

প্রখ্যাত সব রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি প্রদান করার বিষয়টিকে মায়ানমারের গণতন্ত্রের পথে যাত্রার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসাবে দেখা হচ্ছে। যে সমস্ত ৮৮ জন একটিভিস্ট নাগরিক প্রজন্ম মুক্তি লাভ করেছে, তারা হচ্ছে মিন কো নিয়াং, কো কো গি, মায়া আয়ে, জিমি, এবং নি লার থিয়েন, যে সমস্ত একটিভিস্ট সন্ন্যাসী মুক্তি লাভ করেছে তার মধ্যে আশিন গাম্বিরা অন্যতম, এ ছাড়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খিন নিয়ুন্ত এবং তার পুত্রেরা ও ব্লগার নায় ফোন লাটও মুক্তি লাভ করেছে। স্থানীয় এবং নির্বাসিত নাগরিকদের পত্রিকা, উভয়ে মুক্তি লাভের পর এই সমস্ত প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সাক্ষৎকার গ্রহণ করেছে।

এক সুন্দর ১৩ শুক্রবার নামক দিনটিতে মায়ানমারের শত শত রাজবন্দীকে মুক্তি প্রদান করা হয়েছে।

খিন নিয়ুন্ত মায়ানমারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তিনিও মায়ানমারের নেত্রী এবং বিশ্ব গণতন্ত্রের প্রতীক অং সান সূকির সাথে একমত যে, সাম্প্রতি দেশটির সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছে। ইলেভেন মিডিয়া গ্রুপের সংবাদটি এখানে প্রদান করা হল:

বর্তমান সরকার দারুন। কারণ তারা দাও অং সান সুকির সাথে সাক্ষাৎ করেছে। দাও অং সান সুকি এবং রাষ্ট্রপতি যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে আমার ধারনা, তাদের উভয়ের প্রচেষ্টায় দেশটি এক সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।

দি ডেমোক্রেটিক ভয়েস অফ বার্মা, মিন কো নিয়াং এবং নি লার থিনের বক্তব্য পোস্ট করেছে। মুক্তি লাভের পর মিন কো নিয়াং-কে হাজার খানেক জনতা স্বাগত জানায়:

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে বন্দী। কিন্তু তারপরেও, যেমনটা আপনার দেখতে পাচ্ছে, আমার স্বাস্থ্য বেশ ভালো রয়েছে, যার কারণ জনতার ভালোবাসা। গণতন্ত্রের জন্য, জনতা যার আশায় রয়েছে, তার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতি প্রদান করছি যে লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।

কিন্তু লি লার থিয়েন নামক ভদ্রমহিলা একই সাথে নিশ্চিত করেছেন যে, কারাগার থেকে মুক্তির জন্য তিনি কোন কাগজে স্বাক্ষর করেননি।

যখন এই মুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়, তখন সারা দেশ জুড়ে অজস্র মানুষ সামাজিক নেটওয়ার্কে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ব্রাউনবয় ইলেভেন মিডিয়া গ্রুপের তাজা সংবাদ প্রদান করার জায়গায় মন্তব্য করেছে:

এখন নাগরিক অন্তরে এবং বাহিরে সুখী। আমাদের সরকারের প্রশংসা করছে…… এটা এমন এক দৃশ্যমান ফলাফল যা সকলেই দেখতে পাচ্ছে। …?
তাহলে আপনারা কেন প্রথম থেকে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি…..?
যাইহোক, এটা হচ্ছে সেই মুহূর্তে, যা আমরা উদযাপন করব……
আমাদের স্বদেশ এবং জনতা দীর্ঘজীবী হোক!!!

কেএইচজেড ১৯৯৪ নামক আরেকজন মন্তব্যকারী, তার [বার্মীজ ভাষায়] উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে :

এমনকি আমি আমার দুপুরের খাবারও খেতে পারিনি। কারণ আমি এই সমস্ত খবর এবং মন্তব্য গোগ্রাসে গিলছিলাম। আজকের দিনটায় জনগনের চোখে এক খুশীর আনন্দ অশ্রু ঝরে পড়ছে।

মায়ানমারের নেট নাগরিক এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এই সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় তাদের স্ট্যাটাস তাজা মন্তব্যে ভরে ফেলেছে যেমন “সুন্দর এক ১৩ শুক্রবার”, “আমরা মুক্ত”, “ধন্যবাদ জনাব রাষ্ট্রপতি” এবং “আজকের দিনটা যেন এক রূপকথার দিন”। এমন কি কয়েকজন নেট নাগরিক মন্তব্য করেছেন যে এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দ্রুতই মায়ানমারের অদূর ভবিষ্যৎ নির্ধারন করবে।

মাইয়ুং মাইয়ুং সান, রাষ্ট্রপতির একটি চিত্রকর্ম পোস্ট করেছে এবং বলছে:

জনাব থিয়েন সিয়েন, এটা আপনার এক সাহসী সিদ্ধান্ত। খুব শীঘ্রই আমি মায়ানমারের উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখতে পাচ্ছি। এক মঙ্গলময় ১৩ই শুক্রবার।

তেজা হালিং তার বিশ্বাস নিজের ফেসবুকের পাতায় পোস্ট করেছে [ বার্মীজ ভাষায়]:

২০১২ সালে হয়ত পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু মায়ানমারের জন্য এই বছরটি হবে, তার সামনে এগিয়ে যাবার শুরুর বছর।

এসজি_লিওন, দেশের ভবিষ্যৎ-এর ব্যাপারে তার ভাবনাকে উল্লেখ করেছে [বার্মীজ ভাষায়]:

আসুন আমরা অতীত ভুলে চেষ্টা করে যাই যেন আমাদের এই দেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। আগামীতে দেশটির অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র আর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ মায়ানমারের উন্নতি ঘটাবে। হয়ত আমরা শীঘ্রই সেই দিন দেখতে পাব যে দিন “আমি মায়ানমার” নামক পণ্য গর্বের সাথে বিদেশের মাটিতে পা রাখব।

মায়ানমার টাইমস অনুসারে, অং সান সুকি, যুক্তরাষ্ট্রের এক সংসদ সদস্যর সাথে সাক্ষাৎ-এর পর একটা মন্তব্য করেছে [বার্মীজ ভাষায়:

আমি উল্লেখ করেছিলাম, তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হবে। এখন তারা মুক্ত।

Exit mobile version