উগান্ডাঃ ওয়ার্ক টু ওয়ার্ক নামক বিক্ষোভে নারী সংগঠন ও আইনজীবীদের অংশগ্রহণ

২৮ এপ্রিল, ২০১১ -তে ওয়াক টু ওয়ার্ক নামক বিক্ষোভের সময় সরাসরি চোখে কাঁদুনে গ্যাস লাগায় উগান্ডার বিরোধীদলীয় নেতা কিজ্জা বেসিগিয়ের চিকিৎসার জন্য নাইরোবি চলে যান। তার সাময়িক অনুপস্থিতি নাগরিকদের আরো বেশি করে এই বিক্ষোভে টেনে এনেছে।

বিক্ষোভের দ্বিতীয় মাসে নারী সংগঠন ও আইনজীবীরা মূল বিরোধী দলে যোগদান করেছেন, যারা শুধু জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য নিয়ে নয়, একই সাথে বিক্ষোভের উপর সরকারের এমন বর্বর প্রতিক্রিয়া নিয়েও ক্ষুব্ধ।

ইকোয়ালিয়ু ফটোগ্রাফি ব্লগের এডওয়ার্ড তার ব্লগে নারীদের দাবি-দাওয়া বর্ণনা করেছেঃ

“সেই সব নারী, পুরুষ ও শিশুদের সাথে একাত্ম হওয়া যাওয়া, যারা খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে ভুগছে, গোলা-বারুদের ব্যবহার বন্ধ করা, নাগরিকদের ভেতরে বৈষম্য দূর করা, সংবিধানের ৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখা, খাদ্য নিরাপত্তা, বেকারত্ব, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া”।

এছাড়া এডওয়ার্ড নারী সংগঠনের বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবিও পাঠিয়েছে, যার মাঝে একটি ছবিতে এক পেট্রোল পাম্পের মূল্য তালিকার পাশে এক মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে, উক্ত তালিকায় দেখা যাচ্ছে প্রিমিয়াম ফুয়েল (অকটেন)-এর দাম এখন ৩৪৯০ উগান্ডান শিলিং বা প্রায় ৫.৫০ ডলার প্রায়।

উগান্ডার নারী সংগঠন সমূহ জ্বালানি তেল এবং খাবারের দাম বাড়ার ফলে যে বিক্ষোভ আন্দোলন তার সাথে যোগ দিয়েছে। ছবি ইকোয়ালিয়ু ফটোগ্রাফির।

আরা লিনুগাব্লগের টিমোথি হ্যাচার তার ব্লগে নারীদের বিক্ষোভকে একশ বছর আগে অনুষ্ঠিত ব্রিটিশ নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের সাথে তুলনা করেছেনঃ

“আমি আজ ইন্টারনেটে পড়েছি যে, বিংশ শতকের শুরুতে যুক্তরাজ্যে সংঘটিত আন্দোলনের মূলমন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছে। উগান্ডায় এখন যুক্তরাজ্য থেকে ভিন্ন এক সময় চলছে, কিন্তু এর ভাব বৈশ্বিক এবং স্থানের উপর নির্ভর করে না। আমি আশা করছি যে, সোমবারের নারীদের যে একাত্মতা প্রদর্শন, তা তাদের সমাজের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, এমনকি যেখানে সম্ভাব্য ব্যক্তিগত ক্ষতি/গ্রেফতার হয়েছে, সেখানে এটা মনোবল পুনরুদ্ধারের লক্ষণ”।

গত সপ্তাহে উগান্ডার আইনজীবীরা বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের উপর পুলিশের সহিংসতার প্রতিবাদে ধর্মঘট ডেকেছিল। কিজ্জা বেসিগিয়ে বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন এবং জেলে গিয়েছেন, তাঁর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকায় উগান্ডার আইনজীবীদের এটাই প্রথম বিক্ষোভ নয়। ব্লাক স্টার জার্নালের ব্লগার ব্রায়ান এর আগের এক ধর্মঘটের বর্ণনা প্রদান করেছেনঃ

“আজ উগান্ডার আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার দাবীতে একদিনের ধর্মঘটে গিয়েছে। আইনজীবীরা মনে করছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন।

তারা মূলত একটি ঘটনায় ক্রুদ্ধ হয়েছেন, যা আমি পূর্বেই লিখেছি। বিরোধীদলীয় নেতা ড. কিজ্জা বেসিগিয়ের বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে কোর্টের বাইরে ডজনখানেক সামরিক সেনাদের উপস্থিতি চোখে পড়ে।

ড. বেসিগিয়ে যদি সত্যিই শাসনব্যবস্থা অনুসারে অপরাধী হন, তাহলে অবশ্যই আদালতে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির প্রয়োজন নেই”।

যদিও বেসিগিয়ে এই বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে, তবুও ম্যাড এন্ড ক্রেজি-এর ইওয়ার-এর সতর্ক পর্যবেক্ষন মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের আসল উদ্দেশ্য বিরোধীদলকে সমর্থন নয়, বরং পুরো দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা।

যদিও ‘ওয়াক টু ওয়ার্ক’ নামক আন্দোলন ডঃ বেসিগিয়েকে নিয়ে নয়, তারপরেও সরকারি প্রচার যন্ত্র বেসিগিয়ে নামক ব্যক্তিটিকে দুর্বল করার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। যখন আজ সরকারের কারণে উগান্ডার এক অনিশ্চিত অর্থনীতির মাঝে উগান্ডাবাসীরা নিজেদের আবিষ্কার করে, তখন এই বিষয়ে সাড়া না দিয়ে সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকে এবং ঘোষণা দেয়, আপনাদের এই ভোগান্তি দূর করার ক্ষেত্রে, “আমাদের কিছুই করার নেই”। অথচ আপনি ঠিকই সময়মত কর দিয়ে যাচ্ছেন।

Exit mobile version