পারমাণবিক শক্তির ঝুঁকি এবং তার সুবিধা নিয়ে সারা বিশ্বে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে শুক্রবার, ১১ মার্চে যখন ৮.৯ মাত্রার এক ভূমিকম্প জাপানে আঘাত হানে, যা সারা বিশ্বে এক আতঙ্ক সৃষ্টি করে, কারণ সে সময় ভূমিকম্প আঘাত হানা এলাকা ফুকুশিমার অন্তত দুটি পারমাণবিক চুল্লি গলে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জাপানের উত্তর পূর্ব এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হবার হুমকির মুখে পড়ে যায়, এবং প্রচণ্ড খারাপ কিছু ঘটার শঙ্কায়, সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া শুরু হয়। শনিবার, ১২ মার্চে, ফুকুশিমায় পারমানবিক চুল্লিতে এক বিস্ফোরণ ঘটে।
সেদিন সারাদিন ধরে, জাপানী নাগরিকরা টুইটারে তাদের চিন্তা ব্যক্ত করতে থাকে। কেউ কেউ ভয় ছাড়ানোর কারণে টুইটারের বিরুদ্ধে তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছে, যা থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে, এবং অনেকে নিরপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছে।
টাকুইয়া কাউই (@হিমানাইনু_কাউই) একজন শিক্ষক এবং জাপানের অন্যতম সোশাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, যিনি আগের পরবর্তী অংশে অবস্থান করেন।
হিমানাইনু_কাওয়াই: যে সমস্ত লোক পারমাণবিক চুল্লিতে কাজ করছে তাদের তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হবার ভয় রয়েছে। আসুন আমরা এখন কৃতজ্ঞ থাকি এবং পারমাণবিক চুল্লির সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকি।
স্যাটেলাইটের ছবি প্রদর্শন করছে, ফুকুশিমার ডাই-নি পরমাণবিক চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবির কৃতিত্ব ডিজিটালগ্লোবাল-এর। www.digitalglobe.com (সিসি বাই-এনসি-এনডি ২.০)
জাপানের মত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় পরমাণবিক চুল্লি তৈরি করার মত বিষয়ে অন্যরা প্রশ্ন করছে:
সল্টফিশ_এনএসকে: ইলেকট্রিক কোম্পানিগুলো ভালোভাবেই জানত যে ভূমিকম্প পারমাণবিক চুল্লির প্রচণ্ড ক্ষতি করতে পারে। প্রথমত এবং সবসময় এটি ছিল মূল বিবেচনার বিষয়: জাপান এক ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। তাহলে আমাদের পারমাণবিক চুল্লির প্রয়োজন কেন? এখানে এই ধরনের যে কোন দূর্ঘটনা একটি এ-বম্ব (আনবিক বোমা) এর মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। এখানে এই বিষয়টি একজনকে বিস্মিত করতে পারে যে, তাহলে সরকার অতীত থেকে কি শিক্ষা নিয়েছে।
একজন ব্লগার যিনি নিজেকে প্যাসিফস্টি (শান্তিকামী) হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তিনি জাপানের প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা (@ বিএনডি৭) , যিনি এই বিষয়ে আর তেমন একটা বিতর্কের জায়গা রাখেননি:
@গোসিসিআই০৫১৫: সাধারণ একটি দিনে জনগণ যতটা চায় ততটাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং তারপর তারা পরমাণবিক বিদ্যুতের বিষয়ে তাদের অপছন্দের কথা বলতে করা শুরু করে, বিশেষ করে যখন এই রকম কোন ঘটনা ঘটে, এমনকি যদিও বেশির ভাগ লোক বিষয়টি তেমন ভালোভাবে বোঝে না। তাহলে আমাদের এক বিকল্প জ্বালানির উপায় বলে দিন!যদি আপনি বলেন যে, আপনারা টিকে থাকে একটি প্রয়োজনীয় বিষয়, তাহলে ভাবুন, ব্যক্তিগত অনুভূতি দিয়ে কি ভাবে ব্যাপারটি অনুভব করা হয়ে থাকে। তারাই হচ্ছে সেই সব ব্যক্তি, যারা সবচেয়ে বেশী বিকল্প হিসেবে পারমাণবিক শক্তিকে চায়।
কার প্রতি অভিযোগ?
অনেক সমালোচক এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য রাজধানী টোকিওর মত বড় শহরের বিদ্যুৎ-এর চাহিদার প্রতি অভিযোগ করেছে।
মোক্কো০৩০৭: ফুকুশিমা এবং নিগাতা জেলার [অঞ্চলের] পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি থাকার কারণ হচ্ছে, টোকিও এবং অন্য সব বড় শহর। যদি লোকজন বিদ্যুৎ-এর অপচয় না করত, তাহলে এই সব চুল্লি বসাতে হত না এবং এই ধরনের ঘটনা ঘটত না….আমাদের অবশ্যই গুরুত্বের সাথে বিদ্যুৎ-এর অপচয় রোধ করতে হবে।
বিপর্যস্ত এবং আক্রান্ত এলাকার লোকদের প্রতি আগ্রহ না দেখানোর কারনে কয়েকজন তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে টোকিওর প্রতি। এই টুইটটি শনিবারে করা হয়েছে:
@কোবায়াসু: শিবুয়াইয়ার ক্ষেত্রে বলা যায় [টোকিয়ার কেন্দ্রীয় এলাকা], সেখানে অরোরা ভিশনের এক বিশাল প্রদর্শনী যথারীতি চলছে, দোকানগুলো ঠিক তেমনি আছে, পাচিনকো পারলাল [ বিনোদনমূলক জুয়ার আড্ডাখানা] খোলা রয়েছে, এবং এটি এমন ভাবে জনাকীর্ণ যেন অন্য সব শনিবারের মতই একটা দিন, যথারীতি এখানে সে সব দিনের মত ভিড় রয়েছে। শিবুয়াইয়া এলাকায় এমনভাবে দৈনন্দিন কাজ সমাধা হচ্ছে যেন, এর সাথে ফুকুশিমার পারমানবিক চুল্লী এবং সেখানকার ভূমিকম্প আক্রান্তদের কোন সম্পর্ক নেই। একতার অনুভূতি এবং টুইটারে যে সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তা এই এলাকায় দেখা যাচ্ছিল না।
১২ মার্চের রাতে কি ভাবে কয়েকটি কোম্পানী তাদের ইলেকট্রিক সাইন বন্ধ করে দিয়েছিল তার কথা উল্লেখ করে @মাসাকাওয়াকাকা টুইট করেছে:
জাপানী কোম্পানী গ্লিকো ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য বিজ্ঞাপন বিলবোর্ড বন্ধ করে রাখে। ছবি পোস্ট করেছে টুইটপিক ব্যবহারকারী @মাসাকাওয়াকাকা
@উইন্ডিএক্সলেডি: পারমাণবিক চুল্লির সেই [ভিডিও] দৃশ্য. যা ছিল খুবই ভয়াবহ! যেখানে ভূমিকম্প আঘাত করেছে বাতাস সেই দিকে বইছিল। এটি কি পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলতে পারে? আমাদের বিদেশী কিছু বিশেষজ্ঞের সাহায্যের প্রয়োজন, যাদের পারমাণবিক চুল্লিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে । এটি কি এতটাই ভয়াবহ যে, সরকার তার নাগরিকদের তা বলতে পারছে না?
ফুকুওকা এলাকার এক ওয়েব প্রোগ্রামার ভাগ্যের সহায়তা চাইছেন:
@সিনো১৯৪৫: ঠিক আছে….ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লি থেকে অনেক দুরে থাকা আমার মত একজনের ক্ষেত্রে, এই ঘটনা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। এমনকি যদি আমার কাছে এই বিষয়ে তথ্য থাকে, তারপরেও আমি এই ক্ষেত্রে কোন কিছু করতে পারব না, তাই না? আমি কেবল সেখানে বাস করা লোকদের নিরাপত্তা এবং কর্মীদের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে প্রার্থনা করতে পারি।