ইন্দোনেশিয়া: বিখ্যাত অভিনেতার সংসদে প্রতিবাদ প্রদর্শন

ইন্দোনেশিয়ার সংসদ ভবন। এটি উইকিমিডিয়া কমন্সের একটি ছবি

“জুজুর, আদিল, তেগাস”। এই তিনটি ইন্দোনেশীয় শব্দ। ইংরেজিতে যার মানে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, এবং অনড় থাকা”। ইন্দোনেশিয়ার সংসদ ভবনের ছাদে লাল রঙ দিয়ে এই শব্দগুলো লিখেছে সে দেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা পঙ হারজাতমো। তিনি এক প্রতিবাদ হিসেবে তিনি এই শব্দগুলো লেখেন। তার বর্ণনা মতে দেশের অকার্যকর গণতান্ত্রিক এবং সংসদীয় পদ্ধতির বিরুদ্ধে তার এই প্রতিবাদ।

কয়েকদিন আগে ৬৮ বছর বয়স্ক এই অভিনেতা ১০০ মিটার লম্বা সংসদ ভবনের ছাদে চড়েন। সে সময় এক সংবাদ প্রকাশিত হয়, তাতে জানা যায় যে সংসদীয় সভায় সংসদ প্রতিনিধিদের উপস্থিতির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে, কেন অনেক নেটবাসী পঙ এর উদ্দেশ্য এবং কর্মের প্রতি সহানূভূতিশীল।

মাল্টিব্র্যান্ড আশা করছে, সংসদের অলস সদস্যরা এবার হয়ত উপলব্ধি করতে পারবে যে ইন্দোনেশিয়ার অনেক নেটবাসী ইতোমধ্যে তাদের দুর্বল কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের কারণে “পীড়িত এবং ক্লান্ত”

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আমি তার কোন কর্মকাণ্ডের কথা শুনিনি এবং আজ সংসদ ভবনের ছাদে চড়ে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ জানানোর সংবাদে আমি বিস্মিত।

আমি আশা করি পঙ আজ যা করেছে তাতে সংসদ সদস্যরা সতর্ক হবে এই কারণে যে লোকজন তাদের কর্মকাণ্ডে পীড়িত এবং ক্লান্ত, যে সব অলস সংসদ সদস্যদের অনেকেই সভায় উপস্থিত হন না, তারা সভা চলাকালীন সময়ে ঘুমাতে ভালোবাসেন, যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত, ইত্যাদি।

এখানে এই ঘটনার উপর ফেসবুকে করা কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হল:

রাইস গাই ডি: এ কাজের জন্য তার প্রশংসা করা উচিত নিন্দা নয়…
মিকো রয় সিসিওয়ান্তো: এটা এক ধরনের বর্বরোচিত কাজের নমুনা…
রাষ্ট্রপতি পদের জন্য আন্দ্রে পুরভান্সে পঙ!
আগুস জেমাত: আজ জনাব পঙ হারজাতমো যা করছে যদি তুমি তা কখনোই না কর, তাহলে তুমি বলো না যে তুমি সমসাময়িক এবং রাস্তায় চিত্র আঁকা শিল্পী।
এতোন শাহেরতিয়া: এটি আপনার একটি ভালো কাজ, জনাব পঙ। আপনি তাদের জাগিয়ে তুলেছেন 🙂

সাউন্ড অফ গিবারিশ জানাচ্ছে যে, পঙ তরুণদের দেখিয়ে দিল টুইটার বা ফেসবুকে আবেগ সর্বস্ব বুলি প্রদান না করে, কেমন করে কার্যকর ভাবে প্রতিবাদ করতে হয়।

পঙ, জাতীর তরুণদের মুখে চপেটাঘাত করেছে এবং দেখিয়েছে, কি ভাবে একটি বিষয়কে উপস্থাপন করত হয় (টুইটার বা ফেসবুকে অর্থহীন প্রতিবাদ বা লেখার বদলে)। পুরোনো সময়ের এই মানুষটি জানেন কি ভাবে আঘাত করতে হয় (এমনকি সময় যখন এই আঘাতের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত নন), এবং সত্যিকার অর্থে তিনি তার ভাবনার স্বপক্ষে দাঁড়িয়েছেন যা তিনি বিশ্বাস করেন (এমনকি পঙ এও বলেছেন, তিনি সরকারের অন্য ভবনগুলোতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন)।

আমাকে ভুল বুঝবেন না, এমনটা নয় যে আমি পঙ এর কর্মের সাথে পুরোপুরি একমত পোষণ করি (ঠিক আছে, আমি এটাকে ১০০০০০০০০০০% সমর্থন করি, আপনি এগিয়ে যাও প্রাচীন মানব! যদিও আমি মনে করি, রাস্তায় নৈরাজ্য সৃষ্টির আগে অন্য পদ্ধতি এখানে প্রয়োগ করা যেতে পারে)। আমি যা মনে করি তা হল, বেশির ভাগ লোক এই বিতর্কে যা উপলব্ধি করতে পারে নি, তা হল এর বার্তা, এর সারমর্ম এবং এই কান্ডের পেছনের যৌক্তিকতা।

জাকার্তা জুরনোস-এ আরমান্ডো সিয়াহান পঙ-এর প্রশংসা করেছেন:

ডিজিটাল বিশ্বের তথাকথিত ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে ধন্যবাদ। বাতাসে জন্ম নেওয়া ভাইরাসের মত এই সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংবাদ শোনার পর আমার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ছিল এই রকম এক বাক্যে “কি ভাবে ৬৮ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ একজন ব্যক্তি সেখানে চড়তে সক্ষম হল?

যদি আমরা এই সাহসী এবং ঠাট্টার কাজটিকে আরো খানিকটা বিশ্লেষণ করি, সবুজ গম্বুজে রঙ করার ব্যপারে পঙ-এর সিদ্ধান্ত যেন কাছিমের খোলস, যা অসাধারণ এক তাক লাগানো চমকে রূপান্তরিত হয়েছে।

ইচ্ছাকৃতভাবে করা হোক বা না হোক, এটা চোখ খুলে দেবার মত একটি বিষয়, প্রতীকী এক সমালোচনা, যা উচ্চকণ্ঠে বলে “তোমরা আইন প্রণেতারা, কচ্ছপের মত ধীর গতিতে কাজ কর”।

কয়েকজন সংসদ সদস্য ও নিরাপত্তা কমকর্তা পঙ এর মতামত প্রকাশ করার অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে, তবে তারা এই অভিনেতাকে তা “বিনয়ের সাথে” উপস্থাপন করার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, এবং তা এ ধরনের বর্বরোচিত কাজের মাধ্যমে নয়। পঙের বিরুদ্ধে আদলতে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, কিন্তু তাকে বলা হয়েছে সে যেন আর এ ধরনের কাজ না করে।

Exit mobile version