বাংলাদেশ: হরতাল আবার ফিরে এসেছে

ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল। ছবি ফ্লিকার থেকে ভাইপেজের তোলা। লাইসেন্স সিসি বাই-এনসি-এনডি

ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল। ছবি ফ্লিকার থেকে ভাইপেজের তোলা। লাইসেন্স সিসি বাই-এনসি-এনডি

তিন বছরের বিরতির পর দক্ষিণ এশীয় প্রতিবাদের হাতিয়ার হরতাল আবার ফিরে এসেছে বাংলাদেশে। দেশের বিরোধী দলীয় জোট গত রোববার (২৭শে জুন, ২০১০) একটি হরতাল ডেকেছিলেন তাদের ১১ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে। এই সকল দাবীর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের সমস্যা, টেন্ডার সন্ত্রাস, বিরোধীদলীয় কর্মী ও নেতাদের উপর নির্যাতন ইত্যাদি।

হরতালের পূর্বের রাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যায় যখন খবর আসে যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অংশে গাড়ি ও বাস জ্বালিয়ে দেয়া হয় যার ফলে কয়েকজন যাত্রীরা বীভৎস ভাবে পুড়ে যান।

প্রথম আলো ব্লগে নাজমুল হাসান বাবু দেশের হরতাল সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন:

গুজরাটী শব্দ “হরতাল” কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা বোধ হয় বিশ্বের কোন দেশই করতে পারেন নি। [..] আর হরতালের আভিধানিক অর্থ যা ই থাকুক না কেন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হরতালের সংজ্ঞা হচ্ছে- এদেশ আমার বাপ-দাদার, চাইলেই বন্ধ করে দেব সবকিছু।

বাংলাদেশের মানুষেরও আত্মার সাথে মিশে গেছে হরতাল। হরতাল আমাদের সংস্কৃতির ও একটা অংশ। হরতালের তারিখ নির্ধারণ মানেই হচ্ছে- আজকে আমার দোকানটা বন্ধ থাকবে, না হয় লুট হবে। আজকে আমার কষ্টার্জিত উপার্জনে কেনা শখের গাড়িটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হবে। হরতাল মানেই হচ্ছে আজকে আমার কাজে যাওয়া হবে না। বড় কর্তার বকুনি। নয়তো ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকা।

এসবই পুরনো কথা। দীর্ঘ প্রায় আড়াই তিন বছর পর আবার শুরু হচ্ছে হরতাল। এ আড়াই তিন বছরে বাংলাদেশের জনগন বোধহয় ভুলেই গিয়েছিলেন হরতাল শব্দটি। এরই ফলে তারা হয়তো আর হরতাল চায় না। কিন্তু তারা না চাইলেই কি হবে, নেতারা তো চান! [..]

মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী কি ভেবে দেখেছেন, হরতাল হলে দেশের একদিনে ক্ষতি কত হবে? কত মানুষের ভোগান্তি হবে? অবশ্য এসব আপনাদের ভাববার কথা নয়, কারণ আপনারা জনগন দিয়ে রাজনীতি করেন জনগণের জন্য নয়। তাই জনগনের কি ক্ষতি হলো তা ভাববার মতো সময় আপনার কোথায়?

আমার ব্লগে হাবিব লিখেছেন:

হরতাল বললেই প্রথমে তা সম্পর্কে মনে আসে যে হরতাল করলে দেশের ক্ষতি। এবং রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধীদলে থাকলে হরতাল জায়েজ, আর সরকারী দলে থাকলে নাজায়েজ ।”

দেশে অরাজকতা তৈরী করে সরকারকে বিপদে ফেলার একটা কায়দা হল – হরতাল।

প্রথম আলো ব্লগে আমিনুল হক বাচ্চু হরতালকে একটি ছড়ার মাধ্যমে ব্যক্ত করছেন:

লাঠি হাতে মাঠে চল
এলো ঐ বিপক্ষ দল
হরতাল হরতাল ।

গরীব মারার নয়া কল
রাজনীতির এক মাত্র বল
হরতাল হরতাল ।

মানুষ ক্ষ্যাপানোর কৌশল
ক্ষমতায় যাওয়ার ছল
হরতাল হরতাল ।

পকেটে পিস্তল, হাতে মশাল
গাড়ী ভাঙ্গতে রাস্তায় চল
হরতাল হরতাল ।

তবে কিছু নেট নাগরিক হরতালকে সমর্থন করছেন। সামহোয়্যারইন ব্লগে ধীবর এই হরতালের পেছনে যুক্তি দিচ্ছেন

আগামীকাল আঃ লিগে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যে হরতালের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানেও কঠোর অবস্থানের কোন বিকল্প নেই। কেননা আওয়ামী লিগ ভদ্র ভাষা বোঝে না। তারা যেমন নীতিতে কর্মে সন্ত্রাসী, সেরকম শক্ত প্রতিরোধ না গড়তে পারলে, ওরা পুলিশকে সাথে নিয়ে পেটুয়া বাহিনি লেলিয়ে দেবেই। ইতিমধ্যে কিছু কিছু আলামত স্পস্ট হয়েছে।

তাই মার খেয়ে পালানোর কোন সুযোগ নেই। যে কাজ অনেক অনেক দিন আগেই করা উচিত ছিল, (যদিও ইস্যুর তো কোন অভাবই ছিল না), সেটা এতদিন পরে হলেও যে করা হচ্ছে, সেজন্য মৃদু ধন্যবাদ বিরোধী দল পেতে পারে।

উপরের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির সংঘাতময় পরিস্থিতি তুলে ধরছে।

টুইটার ব্যবহারকারীরাও তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন:

তারুণ্য: প্রিয় হরতাল, আপনার সাথে অনেকদিন দেখা নেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমরা আপনার অনুপস্থিতি একটুও অনুভব করিনি।

অভিলাস এন: বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় হরতাল। কাল বেশ খাওয়া দাওয়া, ঘুম আর টিভি দেখে কাটানো যাবে।

সামহোয়্যারইন ব্লগে বাংলার মানচিত্র জিজ্ঞাসা করছেন:

বিরোধীদলতো হরতাল বাদে অন্য যেকোন কর্মসূচি দিতে পারতো। তারা লংমার্চ, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন করতে পারতো। তাহলে তারা কেন এই ক্ষতিকর হরতাল দিল।

আমাদের দেশের জন্য আমরা কি এই হরতাল সর্মথন করি?????

Exit mobile version