চিলি: বিয়োগান্ত ভূমিকম্পের পরে পুনর্জন্ম

সম্পাদকের কথা: নীচের পুন: প্রকাশিত হচ্ছে ওসিডি ইবেরোআমেরিকার সহযোগিতায় গ্লোবাল ভয়েসেস ব্লগিং প্রতিযোগিতায় মূল পুরষ্কার বিজয়ী ব্লগ পোস্টটি। চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচিত অন্যান্য পোস্টগুলো নিয়ে আমাদের আগের পোস্টটিও দেখুন

বিয়োগান্ত দুর্ঘটনার পরে পুনর্জন্ম” শিরোনামে মূল লেখাটি স্প্যানিশ ভাষায় লিখেছেন ইসিডোরা বাররোসো

গত ২৭শে ফেব্রুয়ারী চিলির জন্য এক বিশাল ধাক্কা ছিল যখন ভোরবেলা দেশটির বাসিন্দাদের জিম্মি করে ভূমি কেঁপে উঠেছিল যৌন কামনায় আলোড়িত করা এক স্পন্দনে যা তাদের জীবন ভীষণভাবে পাল্টিয়ে দিয়েছে।

এটা ছিল সেই ৮.৮ মাত্রা ভূমিকম্পের দুর্ভোগের কেবলমাত্র আরম্ভ যা ‘একটি তারা সহ পতাকা’ কে শোকে অর্ধনমিত করেছে।

ভূমির এইভাবে কামনা উদ্বেলিত আলোড়ণের পরে সর্বগ্রাসী সমুদ্রের ক্ষোভ সহ্য করতে হল জনগোষ্ঠীকে। এরপর আমরা অন্তত ৪৮ ঘন্টা ডুবে ছিলাম অন্ধকারে.. যা আমার মতে… সে সময়কার সব থেকে খারাপ আর বাজে দিক। কিভাবে একদল দৃর্বৃত্ত কন্সেপ্সিয়নের দুর্যোগের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে, তাদের আসে পাশে সব কিছু লুট করেছে, আর এর ফলে একটা সমগ্র দেশের সম্মান ধুলায় মিশিয়েছে।

আজকে ঘটনার ৩ মাস পরে, চিলি আবার জেগে উঠছে…এইবারে তারা মৃতদের স্মৃতি আলিঙ্গন করেছেন এই দৃঢ় বিশ্বাসসহ যে আমরা নিজেদের পায়ে আবার দাঁড়াবো। কারণ কোন সমস্যার সামনে আমরা কখনো ঝুকিনি, আর এবারেও তার ব্যত্যয় হবে না। যোদ্ধার রক্ত যা দেশের প্রত্যেক বাসিন্দার ভিতর দিয়ে বইছে – এটা চিলির শক্তি।

দাঁড়ানোর মানে কেবলমাত্র ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ না, বরং বাস্তব চিন্তা আর ভেঙ্গে পড়া বাড়ি পুন:র্নিমানের প্রকল্প নির্ভর চিন্তা করা – চিলিবাসীদের এমনই ধর্ম। এটা বোঝা দরকার যে এই বিশাল ভূমি অনেক ভূমিকম্প সামলেছে আর তার থেকেও খারাপ কয়েক ডজন ভৌগোলিক ত্রুটিকে (ভূমিকম্পের ঝুঁকি) ধরে রেখেছে। এটা ধরেই নিয়ে যে এই বাস্তবতা পুনর্গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক আর এইভাবে আমি ভাবি যে আমরা এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা আর করিনা, একই ভাবে বার বার ধাক্কা খাওয়ার পরে।

এটা জানা জরুরি যে চিলির যদি ৬,৫০০ কিলোমিটার সমুদ্রতীর থাকে, তাহলে সুনামি আর সমুদ্রের ক্ষোভের আমরা পরিষ্কার শিকার। তাই এখন সময় হয়েছে এমন আইন করার যা সমুদ্র তীরে এমন বাড়ি আর স্কুলের নির্মান নিষিদ্ধ করবে যেগুলো কোন ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের গ্রাসে চলে যেতে পারে। এছাড়াও বিপদজনক এলাকা আলাদা করা, নির্দিষ্ট রঙের সিগনাল দেয়া যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে তারা বিপদজনক এলাকাতে আছেন। আমি ওখানে যা শুনেছি – সমুদ্রের ধারের এলাকা পর্যটন আর বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা উচিত, তীরের কাছে রেস্টুরেন্ট, ক্যাসিনো, বার, ডিস্কো আর ব্যবসার স্থানসহ। এর সাথে সরকারের একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত মানুষকে শিক্ষা দেবে কিভাবে ভূমিকম্পের সময়ে সবাই ব্যবস্থা নেবেন।

স্কুল পুনর্নির্মাণের ব্যাপারে আমার মনে হয় সরকার চিন্তিত ‘নির্মাণ’ নিয়ে মানুষকে খুশি করতে আর এই জিনিষটি দেখাতে যে “আমাদের সরকার শিক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল আর তাই আমরা ৮০০টি স্কুল নির্মান করেছি।“ দূর্ভাগ্যজনক যে এখন আমরা মূল্য দিচ্ছি যারা এইসব ‘নির্মান’ করেছেন তাদের গর্ব আর নামের প্রদর্শনের প্রতিযোগীতার – যার ফলে হাজার হাজার ছাত্র গত এপ্রিল থেকে স্কুলে যেতে পারছে না। আমরা বোঝা দরকার যে চিলির জন্য আমাদের কাজ করা উচিত, শুধু পুনর্নির্বাচিত হওয়ার রাজনৈতিক লক্ষ্যের কারনে না। আমাদের যদি নির্মান করতে হয় সেটা গর্ব নিয়ে আর এমন জিনিষ দিয়ে তৈরি করা উচিৎ যা নিশ্চয়তা দেবে টিকে থাকার আর আমাদের বাচ্চা আর শিক্ষকদের নিরাপত্তা দেবে।

পরিশেষে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে যে আমাদের চিন্তিত হওয়া দরকার জনগণকে সামাজিক শিক্ষার ধারণা আর অপরকে সম্মান জানানোর বিষয় নিয়ে – কারন যোগ বিয়োগ করতে শেখার আগে যা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল সমাজে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটা শেখা।

ভূমিকম্পের ফলে আমার দেশের মানুষের কষ্টে আমি কাতর এবং তাদের দু:খের কথায় আমার মন দমে যাচ্ছে, কিন্তু সব থেকে বেশী কষ্ট হচ্ছে দেখে যে কিছু চিলিবাসী অন্যদের সম্মান খর্ব করছেন।

Exit mobile version