নাইজার: সংক্ষিপ্ত মোবাইল বার্তার মাধ্যমে জীবন রক্ষা করা

নাইজার নামক দেশটি, সম্প্রতি এক খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, যা দেশটির ১ কোটি ৪০ লক্ষ জনসংখ্যার অর্ধেককে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। জাতি সংঘ এই ব্যাপারে জরুরী মানবিক ত্রাণ কর্মসূচি গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেকনসার্ন ইউএস ব্লগের একজন ব্লগার অ্যামান্ডা ম্যাকক্লেল্যান্ড মোবাইল ফোন-এর সংক্ষিপ্ত বার্তার (টেক্সট মেসেজ বা এসএমএস) মাধ্যমে জরুরি অর্থ সাহায্যে বিতরণ কর্মসূচির এক সংবাদ জানাচ্ছেন। এই কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে দেশটির ১৬০ টি গ্রামের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা মহিলাদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।

এর খানিকটা পেছনের তথ্য:

নাইজার এখন এক খাদের কিনারা দাঁড়িয়ে, যদি পৃথিবী এখনই তার এই সমস্যায় সাড়া না দেয়, তা হলে তা এক মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে। কনসার্নের জরুরি সাড়া প্রদানকারী দলের একজন হিসেবে, এই ধরনের সমস্যা আমার একেবারে অপরিচিত নয়: এ কারণে জানুয়ারির ১০ তারিখে আমাকে নাইজারে প্রেরণ করা হয়, হাইতির ভূমিকম্পের ঠিক দুদিন আগে।

বজরা (মিলেট) এ দেশের প্রধান শস্য, যা এখানকার বেশিরভাগ মানুষকে জীবিত রাখে। দেশটির মোট ১ কোটি ৫২ লক্ষ জনসংখ্যার বেশিরভাগই কৃষিকাজ বা গবাদি পশু চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে- বৃষ্টি ছাড়া এখানকার লোকজন সেই পরিমাণ টাকা উপার্জন করতে পারে না, যা দিয়ে তারা যথেষ্ট খাবার কিনে খেতে পারে বা বৃষ্টি ছাড়া তারা দুমুঠো খাবার গ্রহণ করার মত যথেষ্ট পরিমাণ শস্য উৎপাদন করতে পারে না।

গত বছর দেশটিতে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে তা সারা দেশে শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে এবং দেশটির ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখন অনাহারের মুখোমুখি। যদি দ্রুত কোন ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তা হলে এখানকার ৩৭৮,০০০ টি শিশু বেশ কয়েক ধরনের অপুষ্টির শিকার হতে যাচ্ছে।

মোবাইলের মাধ্যমে নগদ টাকা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সঙ্কেত ব্যবহার করা হয়, যা এক সংক্ষিপ্ত বার্তার মাধ্যমে প্রত্যেক গ্রহীতার কাছে পাঠানো হয়। সঙ্কেত গ্রহীতা, মোবাইল ফোন পরিচালনা কোম্পানী জাইন-এর স্থানীয় বিতরণকারী বা এজেন্টের মাধ্যমে এই টাকা গ্রহণ করতে পারে। ফরাসী-ভাষী কোন আফ্রিকান দেশে এই প্রথমবারের মত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর করার কাজটি করা হচ্ছে:

এ ব্যাপারে কনসার্ন ইতোমধ্যে এক উদ্যোগ চালু করেছে, যার মধ্যে এক উদ্ভাবনী কর্মসূচি রয়েছে, যে কাজে ১৬০ টি গ্রামের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা মহিলাদের জরুরি নগদ অর্থ সাহায্য প্রদানের জন্য মোবাইল ফোন প্রযুক্তি এবং সংক্ষিপ্ত বার্তা (টেক্সট মেসেজ) ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও কনসার্ন তাদের প্রাথমিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাতে হাতে নগদ টাকা প্রদান করেছে, তারা প্রতিটি কর্মপদ্ধতির কার্যকারিতা গবেষণার মাধ্যমে নথিবদ্ধ করছে, এগুলোর প্রভাব কতখানি তা দেখার জন্য।

এটা কেবল কাজের শুরু- নাইজারে এই প্রথম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ ধরনের জরুরি অর্থ সাহায্য হস্তান্তর শুরু হল, এবং এবারই প্রথম কোন ফরাসী-ভাষী আফ্রিকার দেশে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হল। সংক্ষিপ্ত বার্তার মাধ্যমে প্রত্যেক গ্রহীতার কাছে একটি বিশেষ সঙ্কেত পাঠানো হয়, যা তারা মোবাইল সেবা প্রদানকারী কোম্পানী জাইন-এর প্রতিনিধির (এজেন্ট) কাছে এই সঙ্কেত দেখিয়ে নগদ অর্থ গ্রহণ করবে। এ কাজের জন্য জাইন তাদের নতুন টাকা হস্তান্তর প্রযুক্তি জ্যাপ চালু করেছে।

এই কর্মসূচিতে প্রত্যেক মহিলার জন্য এক বিশেষ চিহ্নিতকরণ পরিচয়পত্রের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে, যাতে তাকে শনাক্ত করা যায়:

আজ আমরা ১৩,০০০ জন মহিলার প্রত্যেকের মাঝে বিশেষ শনাক্তকরণ পরিচয় বিতরণ করেছি, যারা আমাদের এই নগদ টাকা বিতরণ কর্মসূচির মাধ্যমে সুবিধা লাভ করবে- তাদের আর অন্য কোন নির্দিষ্ট সনাক্তকরণ পরিচয়পত্র নেই। (কি ভাবে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১৩,০০০ জন মহিলার ছবি তুলেছি, সেই গল্পটি আমার পরবর্তী ব্লগের জন্য তুলে রেখেছি)। প্রত্যেকটি মহিলা ২০,০০০ সিএফএ (নাইজারের মুদ্রা, ২০,০০০ সিএফএ = ৪২ ডলার {সমান প্রায়}) পেয়েছে, যা সেখানকার একটি গড় পরিবারের এক মাসের খাবার কেনার জন্য যথেষ্ট।

মহিলারা হাসিমুখে এই অর্থ এবং পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে এবং এর জন্য কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দিয়েছে- কিন্তু তাদেরকে দেখে মনে হয় তারা কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পরবর্তী মাসে খাওয়া পাওয়া বা না খাওয়ার মধ্যে এটাই সম্ভবত পার্থক্য গড়ে দেবে। আমার মন এই ঘটনার সাথে দৌড়াচ্ছে: হয়ত বা টাকা প্রদানই এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, এ ক্ষেত্রে আমরা হয়ত ভুল মানুষদের এই সাহায্যের জন্য বাছাই করেছি, আমরা যে সমস্ত পরিকল্পনা করেছি এবং দিনের শেষে কর্মক্ষেত্রে যা পেয়েছি তা হয়ত ভুল?

নাইজারে যে খাদ্য সমস্যা চলছে এবং আইআরআইএন এর যে বিশ্লেষণ করেছে, এখানে আপনারা তার চিত্র দেখতে পাবেন। আইআরআইএন জাতি সংঘের একটি প্রকল্প যা মানবিক ত্রাণ কর্মকাণ্ডের তত্ত্বাবধান করে। এখানে “দুর্ভিক্ষ” নামের পদটি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং নাইজারে যে খাদ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে তা আসলে এক দুর্ভিক্ষ। যদি আপনি বিস্মিত হন যে, সমস্যা থাকা সত্বেও কেন নাইজার কোন সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে স্থান করে নিতে পারছে না, তা হলে আমাদের পোস্ট করা “ নাইজার প্রজাতন্ত্র এতটা আকর্ষণীয় নয় যে, সে কোন সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হতে পারে” এই শিরোনাম যুক্ত লেখাটি পাঠ করুন।

Exit mobile version