পাকিস্তান: টাইম স্কোয়ারের বোমা পাতার ঘটনার প্রতিক্রিয়া

নিউ ইয়র্ক শহরের টাইম স্কোয়ার, ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী রিডেইয়-এর, ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স-এর অধীনে তা ব্যবহার করা হয়েছে।

এ মাসের শুরুতে নিউ ইয়র্ক শহরের টাইমস স্কোয়ার নামক এলাকায় বোমা হামলার চেষ্টা সারা যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর এক সর্তক ঘন্টা বাজিয়ে দেয়। এই আক্রমণের ঘটনা অনুসরণ করে পুলিশ বোমা হামলার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অজুহাতে জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমান বন্দর থেকে ফয়সাল শাহজাদকে আটক করে। শাহজাদ একজন পাকিস্তানী-আমেরিকান। সংবাদ সূত্রানুসারে শাহজাদের গাড়ী টাইম স্কোয়ারের একেবারে কেন্দ্রে তেল, প্রোপেন (জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত বর্ণহীন গ্যাস), আতশবাজি (বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে তৈরি পটকা বা ফায়ারওয়ার্কস) এবং সার দিয়ে ভর্তি অবস্থায় পাওয়া যায়।

তার গ্রেফতারের পরপরই বেশ কিছু এলাকায় পুলিশি হামলা চলে, বেশ কিছু লোক গ্রেফতার হয় এবং আরো তদন্তের সূত্রপাত ঘটে, যা আরো অনেক ধারণার জন্ম দেয় এবং এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের উপর এক বিতর্কের সৃষ্টি করে। যখন প্রচার মাধ্যম এবং কর্তৃপক্ষ আরো সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনার প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, সেখানে অনেক পাকিস্তানী অনুভব করছে তারা এই প্রশ্নের লক্ষ্যবস্তু। ব্লগার আম্মার ইয়াসির এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি এবং সন্ত্রাসী হামলার প্রভাবের ফলে তা যুক্তরাষ্ট্র- পাকিস্তানের সম্পর্কের উপর যে প্রভাব তৈরি করবে তার সাথে যুক্ত করেছেন:

পাকিস্তানের জন্য বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে আমরা সকলে সেই অপরাধের জন্য চিহ্নিত হই যা আমরা কখনোই করিনি। পরিসংখ্যানগত ভাবে দেখা হলে দেখা যাবে, সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে, আমেরিকানদের চেয়ে অনেক বেশি পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদের শিকার। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনারা সম্মিলিতভাবে আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যতটা কার্যকর, আমাদের সেনার তাদের চেয়ে এখানকার তালেবানদের বিরুদ্ধে অনেক বেশি কার্যকর। পাকিস্তান সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে যতটা প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রয়েছে তা পাকিস্তানের ভোটারদেরও নেই, যারা তাদের নির্বাচিত করে। আমেরিকার মনুষ্যবিহীন বিমান ড্রোন পাকিস্তানের আকাশে উড়ে বেড়ায়, পাকিস্তানের বাড়িগুলোকে বোমা মেরে গুড়িয়ে দেয় এবং নিরাপদে পাকিস্তানের ঘাঁটিতে ফিরে যায়। তারপরেও এ বিষয়ে আমাদের মনোযোগের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমাদের বিশ্বস্ততার উপর অনুসন্ধান চালান হয় এবং আমাদের ভাগ্য হলিউডের কিছু চলচ্চিত্রের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।

চুপ ব্লগের কুলসুম লাখানি এর সম্ভাব্য সমাধান প্রদান করেছে:

ফয়সাল শাহজাদ হয়ত এক পাকিস্তানী-আমেরিকান, কিন্তু সে একাই কেবল “পাকিস্তানের তৈরি” নয়। হ্যাঁ, এখন পাকিস্তান অজস্র বিষয়ের মধ্যে জড়িয়ে গেছে। সন্ত্রাসবাদ নামক এমন এক সমস্যার সাথে আমরা জড়িয়ে পড়েছি, যা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু উভয় দেশের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সঠিক সমাধান হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান- উভয়ে তাদের নিজস্ব সমাজের ভেতরে তাকাবে এবং তাদের হাতে যে সমস্ত বিষয় রয়েছে তার দায়িত্ব নেবে।

অল থিংস পাকিস্তান-এ একটি ব্লগপোস্টে আদিল নাজাম শিরোনাম প্রদান করেছেন “কে এই ফয়সাল শাহজাদ”। তিনি শাহজাদের জীবনের উপর চোখ বুলিয়ে গতানুগতিক ঘটনার বাইরে এই বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান ও তাকে বোঝার দাবি জানিয়েছেন:

আমাদের নিজেদের যে সব কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন, তার ক্ষেত্রে লজ্জিত হওয়া উচিত নয়। তবে আমাদের যতটা প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি কঠিন হওয়া উচিত নয়। চলুন আমরা অনেক কঠোর পরিশ্রম করি এই বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করি যে, কি ভাবে আমাদের একজন এ রকম ভয়ঙ্কর কাজের চিন্তা করতে পারে। আসুন, আমরা এ রকম ভয়ঙ্কর চিন্তা, যা কিনা পুরো সম্প্রদায়ের জন্য নিন্দা বয়ে আনবে, তার প্রবেশ প্রতিরোধ করি। আসুন আমরা তাকে বুঝতে চেষ্টা করি, কিসের কারণে সে অভিযুক্ত: এক অপরাধী: আসুন আমরা তার নিন্দা জানাই, যে কাজ করার অভিযোগে সে অভিযুক্ত সেই: অপরাধের কারণে; কিন্তু তার উপর যে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাকে আমাদের নিজস্ব পরিচয়ের সাথে যুক্ত করতে না দিই।

শাহজাদের গ্রেফতার এবং এর পরবর্তী ঘটনা, বিদেশে বাস করে পাকিস্তানী এবং স্বদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানী কোন দলের সাথে তার সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা, প্রীতিপূর্ণ কোন বিষয় নয়। বলার প্রয়োজন নেই, এই ঘটনা উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে এবং পাকিস্তানকে আরো একবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। সম্ভবত যেমনটা লাখানি বলছে, এখন সময় দুটি দেশের একসাথে আলোচনায় বসা এবং গ্রহণযোগ্য এক সমাধান বের করার ব্যাপারে দায়িত্ব গ্রহন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য একক একটি পরিকল্পনা তৈরি করা।

Exit mobile version