বুলগেরিয়া: ইসলামের উপর এক বিতর্ক

২৬ ফেব্রুয়ারি, প্রায় ৪০ জন লোক একটি বিতর্কে অংশ নেয় যার শিরোনাম ছিল “ ইসলাম এক হুমকি-যা আবার তার স্বরূপে দেখা দিচ্ছে?” এই অনুষ্ঠানটি সেন্টার ফর কালচার এন্ড ডিবেট (সংস্কৃতি এবং বিতর্ক কেন্দ্র) এর “রেড হাউস”-এ অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশটির রাজধানী সোফিয়ায় অবস্থিত।

অনুষ্ঠানে বক্তাদের মধ্য ছিলেন সালেহ ব্রেহ, যিনি দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোবিজ্ঞানী। আরও আছেন ভ্লাদিমির চুকভ, যিনি ইসলাম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং নাদাল হালইয়াফ, যিনি এক চলচ্চিত্র নির্দেশনা বিভাগের এক ছাত্র।

বুলগেরিয়ায় প্রায় ১০ লক্ষ মুসলমান বাস করে (যার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষ)। এখানে অনেকের ইসলাম সম্বন্ধে ধারণা রয়েছে, কারণ এই দেশটিতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলমানরা বাস করে আসছে। তবে এখানে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে, যার মুসলমান ও খ্রীস্টানদের মধ্যে সমস্যা তৈরি করে: সম্প্রতি জাতীয়তাবাদ অনেক বেশি শক্তিশালী এবং আক্রমণাত্মক রুপ ধারণ করেছে এবং এখানে অনেক লোক বিশ্বাস করে যে ইসলাম বিপজ্জনক এক ধর্ম। এ কারণেই সোফিয়ায় এ ধরনের এক বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছে (বুলগেরিয়ান ভাষায়), যা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এর উদ্দেশ্য ছিল, ইসলাম কি ইউরোপের জন্য বিপদ বয়ে আনছে কি না তা নিয়ে আলোচনা করা। অন্যদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী বুলগেরিয়ান ন্যাশনাল মুভমেন্ট পার্টি (বিএনএম) এই বিতর্কে অংশ নেয়; দলটির মতে ইসলাম বিপজ্জনক এবং এটি তুরস্কের আগ্রহের এক উপাদান (এখানে ভ্লাদিমির চুকভের প্রবন্ধের সংযোগ রয়েছে. যার শিরোনাম “ বুলগেরিয়ার জাতিগত চিত্র”)

এই বিতর্কটি মুসলমান ও আমেরিকান চলচ্চিত্র নামক ব্লগের এক লেখায় দৃশ্যমান হয় (এইচটিটিপি://মুসলিম-সিনেমা.ব্লগপোস্ট.কম)। এটি বুলগেরিয়ান ভাষার একটি ব্লগ, যেখানে চলচ্চিত্রে মুসলমানদের যে ভাবে উপস্থান করা হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই ব্লগের পরিচালক হালইয়াফ নিদাল, যিনি সোফিয়ায় চলচ্চিত্র নির্দেশনার উপর একটি গবেষণা করছেন। নিচে এই পোস্টের সারাংশ তুলে ধরা হল (বুলগেরিয়ান ভাষায়):

[…] আলোচনায় উপস্থিত দর্শকদের বেশিরভাগই ছিল বুলগেরিয়ার নাগরিক, এদের মধ্যে কিছু ছিল বয়স্ক ব্যক্তি, তবে কয়েকজন তরুণও সেখানে উপস্থিত ছিল […]

অধ্যাপক চুকভ দুই ধরনের প্রধান অভিবাসন ধারা চিহ্নিত করেন-অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সান (ব্রিটেন -জার্মান) ধারা, যারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক উদারনৈতিক মনোভাবাপন্ন এবং ফরাসী ধারা- ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতি যাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সীমাবদ্ধ […]। আমাদের কাছে এক বিস্ময়কর বিষয়, মনে হচ্ছে ডেনমার্ক সেদেশে একটি ইসলামিক দল গঠন করার অনুমতি প্রদান করেছে [ ইউরোপে ইসলাম নামক ব্লগে এই পোস্টটি দেখুন]। […]

[রুসলান ট্রাড] আরব ও ইসলামি বিশ্বের কয়েকটি ব্লগের তালিকা সহ একটি স্লাইড প্রজেক্ট বা ধারাবাহিক তালিকা উপস্থাপন করেছেন, যার মধ্যে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে, এ সব হচ্ছে নিষিদ্ধ হওয়া কিছু ঘটনা, যেমন মিশরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিচার [আরো তথ্যের জন্য গ্লোবাল ভয়েসেসের এই পোস্টটি দেখুন], বন্দি ব্লগাররা [ এর উদাহরণ, করিমকে মুক্ত কর এবং বশির এল হাজেমকে মুক্ত করা নামক প্রচারণা), মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের ব্লগ, যারা তাদের আরো অধিকারের জন্য লড়াই করছে [যেমন, ডাব্লিউডাব্লিউডাব্লিউ. ফেমিনিস্টকালকেটিভ.কম]। এর উদ্দেশ্য জনসাধারণকে প্রদর্শন করা ইসলামি বিশ্ব কেবল অসাড় কোন এক জনতা নয়, তার বদলে তারা সচেতন, তাদের বিষয়ে কি ঘটছে এবং বিশ্বে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের বেলায় […]

নিদাল হালইয়াফ চলচ্চিত্রের গতানুগতিক ধারার বিষয়ে কথা বলেছেন। […] [ চলচ্চিত্রে যে সমস্ত বিষয় অনুশীলন করা হয়], এখানে ইসলামি বিশ্বের তুলনা করে দেখা হয়, যে তা পশ্চিমা বিশ্বের কত বিপরীত, এই বিষয়টি পশ্চিমের ভেতরে এত গভীরভাবে গেঁথে রয়েছে যে, গতানুগতিক ধারণা বাইরে যাওয়া অসম্ভব […][…], একটি বিতর্ক এখন উত্থাপিত হয়েছে, কেন আরব এবং মুসলমানদের চরিত্র এতটা সুনির্দিষ্ট […]। কারণ প্রথমত, এখনো ইসলামের সাথে পশ্চিমের যে সংঘর্ষ, তা বেদনাদায়ক অতীতের এক স্মৃতি থেকে আসা, বিষয়টি সামরিক এবং সংস্কৃতিক উভয় ভাবে এসেছে; দ্বিতীয়ত: যুক্তরাষ্ট্র প্রাচ্যের কল্পনায় ইসলাম সম্বন্ধে ধারণা লাভ করেছে, এবং এই ধারণা তৈরি হয়েছে ১৯ শতকের শেষদিকে ইউরোপ থেকে আসা বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে; ইসলামি বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের মিশনারিদের কর্মকাণ্ড ক্রমশঃ বাড়ছে।

দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড: সালেহ ব্রিক, উপেক্ষা করার কারণে “অন্য” ধর্মকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যে কঠিন অবস্থা বিরাজ করে, সে সম্বন্ধে বলেছেন [এর এক উদাহরণ হচ্ছে সুইটজারল্যান্ড কর্তৃক মিনার তৈরির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা]: […] মিনার মুসলমানদের ধর্মীয় উপাসনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয় এবং তা মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান কোন সমস্যা নয়।

মায়া টেসনোভা একজন আরব, যিনি সেন্টার ফর ইস্টার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার (পূর্বের ভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে)-এ কাজ করেন। তিনি এর যোগ করেন “ একজন এমন এক বিষয়ে ভীতি, যে বিষয় সম্বন্ধে সে জানে না” এবং বলা যায় “পশ্চিমের সমাজ ইসলামের সাথে পরিচিত হবার আগে থেকে মুসলমানদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে”, যেমনটা এক আরব প্রবাদ রয়েছে, যে মানুষটা অজ্ঞ, “সে আমাদের এবং অন্যদের, সবার এক শত্রু”।

এই অনুষ্ঠানের উপর আমার ব্লগ পোস্টে কিছু মন্তব্য করা হযেছে (বুলগেরিয়ান ভাষায়)। একজন পাঠক বলকান এলাকার অন্য সব রাষ্ট্রে ইসলাম এবং সন্ত্রাসবাদ সম্বন্ধে লিখেছে :

আমাদের দেশ ছাড়া [বুলগেরিয়া], বসনিয়া এবং কসোভোর কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়, যারা বলকানে এই একই চিন্তার এক অনুরূপ প্রয়োগের স্থান।

কসোভোর পরিস্থিতি বুলগেরিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক লোক শঙ্কিত যে বসনিয়ায় যা ঘটেছে তা বুলগেরিয়াতেও ঘটতে পারে।

Exit mobile version