পাকিস্তান: আক্রমণের কবলে করাচি

করাচির আকাশ। ছবি ফ্লিকার থেকে - কাশিফের সৌজন্যে। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত।

করাচির আকাশ। ছবি ফ্লিকার থেকে কাশিফের সৌজন্যে। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত।

গত ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১০ তারিখে করাচি শহরে দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হয় যাতে ১৫ জন নিহত এবং ৭০ জন আহত হন। প্রথম আক্রমণটি কিছু শিয়া শোককারীদের লক্ষ্য করে করা হয় যারা মুহাররমের শোক মিছিলে যোগদানের জন্য যাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় বিষ্ফোরণনটি হয় জিন্নাহ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বাইরে, যেখানে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এই আক্রমণ আশুরার বোমা হামলার ৪০ দিন পরে হল যেটাতে ৪০ জনের বেশী নিহত হয়েছিলেন। এটা দূর্ভাগ্যজনক যে করাচির জাতিগত আর উপদলীয় সংঘর্ষের আরও ইতিহাস আছে।

আমার নিজের ব্লগে আমি করাচিতে সংঘাত ফিরে আসাকে তিরস্কার করেছি:

গত সোমবারের আত্মঘাতী বোমা হামলার পরে রায়ট আর অগ্নিসংযোগ ছড়িয়ে পড়া – এই সবই গোত্রীয় আক্রমণের পরের প্রতিক্রিয়া আর মারামারির প্রতিফলন। বিষ্ফোরণের পরেই, শহরের বিভিন্ন অংশে রায়ট শুরু হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল সেই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী কোন ধরনের ক্ষতি রোধ করতে পারেনি। এর ফলে শত শত দোকানে আগুন লাগানো হয়, আর সোমবার গভীর রাত্রে কোন এক সময়ে, মনে হচ্ছিল পুরো ব্যবসা কেন্দ্র বিপদের মুখে আছে। এর ধরনের আক্রমণের পরে প্রায় সব সময়ে উত্তেজনা ছড়ানো থাকে। রায়ট যখন চলতে থাকে, নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ততো প্রশ্ন উত্থাপিত হয় আর তাদের অনুপস্থিতি নিয়ে যখন অরাজকতা ছড়াতে থাকে। এটা পরিষ্কার যে নির্দিষ্ট কোন গোত্রকে লক্ষ্য করে হামলা হয়না। এটা করাচির মানুষকে আতঙ্কিত করা আক্রমণ আর তাদেরকে গন্ডগোলে জড়িয়ে ফেলার আক্রমণ। এর ফলে দেশের এই অর্থনৈতিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চুপ- চেঞ্জিং আপ পাকিস্তান ব্লগের কালসুম লাখানি শিয়া মুসলমানদের উপরে লাগাতার আক্রমণকে তিরস্কার করেছেন, আর দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন:

আমরা হয়ত পুরোপুরি নিশ্চিত নাও হতে পারি যে আজকের আক্রমণের জন্য দায়ী কে, কিন্তু তার পরেও এটা বীভৎস যে এমন কিছু হতে পারে। যদি গতকাল তিনটি শহরকেই সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় রাখা হতো, তাহলে আজকের মৃত্যু রোধে কি আরো বেশি কিছু করা যেত না? শিয়া তীর্থযাত্রী আর হাসপাতালে আক্রমণের ব্যাপারটি কেবল দু:খজনক না, বরং ঘৃণ্য। পাকিস্তানের কোন জায়গা কি নিরাপদ বা ধরা ছোঁয়ার বাইরে নেই আর?

তার ব্লগে এর আগে বিষদ একটা পোস্টে, করাচীর সংঘাতের ইতিহাস সম্পর্কে কালসুম লিখেছিলেনডন পত্রিকা অনুসারে গত বছরের এপ্রিলে শহরের বিভিন্ন স্থানের জাতিগত দাঙ্গায় ৩৫ জন তাদের জীবন হারিয়েছিলেন। মানুষ ছড়িয়ে পড়া সংঘাতে আর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে ব্যর্থতায় ভীত।

ফারহিন আলি নামক আর একজন ব্লগার শহরের ক্রম খারাপ হওয়া পরিস্থিতি নিয়ে তার চিন্তা জানিয়েছেন আর কর্তৃপক্ষের চুপ করে থাকা নিয়ে মন্তব্য করেছেন ‘করাচিতে লক্ষ্যভিত্তিক মানুষ খুন করা বেড়ে গেছে’ শীর্ষক পোস্টে:

সংঘাতের পরে, ওরাঙ্গি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আর এই ধারা জারি করে সরকার সব ধরনের দায় আর দোষ থেকে মনে হয় নিজেকে মুক্ত মনে করছে।

অল থিঙ্গস পাকিস্তানআদিল নাজাম দাবি করেছেন যে করাচিকে অস্ত্র মুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হোক:

যখন দেশে সব ধরনের সংঘাত চলছে, আর এখনো সম্প্রতি সংঘাতের ফলে, সব দলের রাজনীতিবিদরা করাচিকে যখন ‘অস্ত্রমুক্ত এলাকা’ হিসাবে দাবি করছেন (ঠিক!), দেখা যাচ্ছে যে অন্য দিক দিয়ে সব দলের রাজনীতিবিদ আর সাংসদরা ব্যস্ত সব ধরনের নিষিদ্ধ অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়াতে যেন এগুলো বাচ্চাদের খেলনা।

করাচির সাম্প্রতিক অশান্তির নিরিখে, সরকারের দরকার এইসব হামলা থামানোর জন্যে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া। তবে বিভিন্ন সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে যে কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ ঝামেলা মেটাতে ব্যস্ত মূল বিষয়ে মনোযোগ দেবার বদলে।

Exit mobile version