জাপানে এইচআইভি ও এইডসের বিস্তারের ব্যাপারে এক সতর্ক পরিসংখ্যান রয়েছে। ইউএনএইডসের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, যেখানে উন্নত বিশ্বে এই রোগে আক্রান্তদের পরিমাণ কমে আসছে, সেখানে জাপান একমাত্র দেশে যেখানে এইচআইভি পজিটিভ ও এইডস আক্রান্ত লোকের সংখ্যা বাড়ছে [জাপানী ভাষায়]।
এইডসের ধারা অনুসরণ করা কমিটির সূত্র অনুসারে, ২০০৮ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নতুন এইডস রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে: ৪৩২ জনকে এইডস রোগাক্রান্ত এবং ১১১৩ জনকে এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০০৯ সালের পরিসংখ্যান এখনো নিশ্চিত করা হয় নি: এ বছরের জুন পর্যন্ত পরীক্ষা করে ২৪৯ জন ব্যক্তির দেহে এইচআইভি+ এবং ১২৪ জন এইডস রোগী পাওয়া গেছে।
এই রোগে আক্রান্তদের বেশীর ভাগই পুরুষ। তারা সমকামী এবং তাদের বেশীর ভাগের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে। বেশীর ভাগ সময় এই রোগে আক্রান্ত হবার ঘটনা ঘটে সঠিক তথ্যের অভাবে। এই সমস্যার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা দরকার, বিশেষ করে পুরুষ সমকামী সম্প্রদায়ের মধ্যে।
যখন ডাব্লিউএডিএস [জাপানী ভাষায়], জেএফএপি [জাপানী ভাষায়] এর মতো সংগঠন এই বিষয়ে জন সচেতনতা বাড়ানো জন্য কাজ করে যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ এবং প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণদের মধ্যে, সেখানে যত দুর দেখা যাচ্ছে সরকারের নীতি তেমন একটা কার্যকর বলে মনে হচ্ছে না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সাধারণ নির্বাচন এবং নতুন নির্বাচিত দল ডিপিজের ক্ষেত্রে এক আশা রয়েছে যে তারা এইচআইভি/এইডস নীতি আরো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে, যদিও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কোন দলই তাদের প্রচারপত্রে এই বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ করেনি। এইডস এন্ড সোসাইটি এসোসিয়েশন ব্লগে নামহীন এক ব্যক্তি এই বিষয়ের উপর মনোযোগ প্রদান করে এক মন্তব্য করেছে।
নির্বাচনী বির্তক থেকে এইডস পরিমাপকের মতো বিষয় হারিয়ে গেছে. হুমম, কাজেই এটাই কি জাপানী সরকারের ইচ্ছে, আমি বিস্মিত? বিশ্বের সব খানে এইডস নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এবং সেখানে যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়, তা হল এ ব্যাপারে “সরকারের নেতৃত্ব”। কিন্তু যদিও জাপানে প্রত্যেক সরকার ঘোষণা অথবা বিবৃতি দিচ্ছে যে, জাপানী সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার আভ্যন্তরীণ নীতির বিষয়ে, তবে তার সামান্যই পালন করা হয়েছে!
এটি কি ঠিক হচ্ছে? না, এটা সঠিক কাজ নয় এবং যখন আমি এই সমস্ত প্রশ্ন উত্তরের অপেক্ষা না করেই করি এবং এই সকল বিষয় সম্বন্ধে চিন্তা করি, পাগল হয়ে যাই। এরপর আমি শান্ত হই এবং বলি যে, জাপানে এইচআইভি পজিটিভ নেটওয়ার্ক জেএএনপি+, এইডস এন্ড সোসাইটি এসোসিয়েশন এবং চারটি এনপিওস নেটওয়ার্ক এইডস বিষয়ে কাজ করছে। দেশটির প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে সরাসরি তাদের এইডস নীতি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করা হয়েছে কি।
(追加)各党からの回答はJaNP+の公式サイトに掲載されています。
(নোট) এই প্রশ্নে বিভিন্ন দলের উত্তর প্রকাশ করা হয়েছে [জাপান, পিডিএফ], জেএএনপি+ এর নিজস্ব ওয়েব সাইটে।
অর্থনীতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশটির এক বৈপরীত্য রয়েছে, এইডস মোকাবিলায় সে অনেক নিচের সারিতে পড়ে রয়েছে, এখানে জগৎের অন্য অংশ যারা এইচআইভি পজিটিভ এবং এইডস রোগাক্রান্ত লোকজন, তাদের প্রতিদিনের অনুভূতি, উদ্বিগ্ন অবস্থা এবং তাদের প্রতিদিনের সুখ অথবা বেদনাদায়ক মুহূর্ত অনলাইন ডাইরীতে প্রকাশ করা হচ্ছে।
যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন রাইয়ুটাকে বলা হয় যে, সে এইচআইভি পজেটিভ, তখন সে এর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য কয়েক ঘণ্টা পরেই তার ব্লগ লিখতে শুরু করে। এই পোস্টে সে স্মরণ করেছে সেই সময়কার কথা, যখন সে তার এইচআইভি সংক্রমণ সম্বন্ধে প্রথম জানতে পারে।
গত শনিবার আমি আমার বাসার কাছে এক এইচআইভি পরীক্ষা কেন্দ্রে আমার এইচআইভি পরীক্ষা করলাম।
আজকে আমি এক কামরায় শুয়ে আছি, সেখানে আমার সামনে এক ডাক্তার দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং সে আমাকে বলল যে, আমি এক এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি।
“আপনার নম্বরটি পরীক্ষা করে দেখি”, ঠিক আছে? ২৯৫৬৫৭। এটাই তো আপনার, তাই না?
“হ্যাঁ, ২৯৫৬৫৭, এটাই”
“এই কাগজটির দিকে তাকান, এখানে যে সংখ্যা দেখাচ্ছে সেটি দিয়ে এইচআইভি ভাইরাসের পরিমাণ বোঝায়। সাধারণত এটি ১.০ অবস্থানে থাকে, কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে তা ১০৫.০০ এসে ঠেকেছে।
“আমি দেখতে পাচ্ছি”।
এটাই আপনার পরীক্ষার ফলাফল। এর মানে আপনি একজন এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি”
এটা শোনার পর, আমি সেই কাগজটি আবার পরীক্ষা করে দেখলাম।
এটা সত্যি, আমি স্বাভাবিক সংখ্যাটি দেখতে পাচ্ছি <১.০, এবং এর পরের সংখ্যাটি হচ্ছে ১০৫.০০
এমনকি আমি অনেক বার সেটার দিকে তাকালাম, ডান থেকে বামে এবং বাম থেকে ডানে, সংখ্যাটি একই থাকছে।
যতবারই আমি ছাপানো অক্ষরের দিকে তাকালাম, এটার কোন পরিবর্তন ঘটল না।
“তার মানে এই… আমি বুঝতে পারলাম”
এখন ঠিক পরের কক্ষটিতে, একজন সেবিকা আমাকে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করবে, এখন থেকে আমাকে কি করতে হবে, সেবিকা-আপনার কি আমাকে জিজ্ঞেস করার মতো অন্য কোন প্রশ্ন রয়েছে।
“না, ঠিক আছে”
“এটা একটা চিঠি, এতে আপনার কথা জানানো হয়েছে, দয়া করা এটি ভবিষ্যৎে যে হাসপাতালের ডাক্তার আপনার যত্ন নেবে তাকে দেবেন”।
“আপনাকে ধন্যবাদ”
“এরপর আমি সেবিকাটিকে ডাকলাম”
একজন ডাক্তার যার মুখের অভিব্যক্তি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটুও বদলালো না।
এটাকে আমরা বলি পেশাদারিত্ব….আমি জানি না কেন, কিন্তু এই বিচিত্র বিষয়টি আমার মনকে আকর্ষণ করল।
আমি দরজা খুললাম এবং সেখানে এক সেবিকা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। তার মুখে এক কমনীয় অভিব্যক্তি ছিল।
“আপনার ব্যাগটি নিয়ে দয়া করে ভেতরে আসুন”।
উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার এক কক্ষে আমার এলাম, টেবিলের এক কোণে এইচআইভি সম্বন্ধে তথ্যপুস্তিকা ও এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কাগজপত্র স্তূপ করা ছিল।
“দয়া করে বসুন”
“জ্বি হ্যাঁ, আপনাকে ধন্যবাদ… আপনি যা বলবেন আমি কি তা টুকে নিতে পারি”?
“নিশ্চয়ই”
আমি আমার ব্যাগ থেকে নোটবই বের করলাম এবং তা টেবিলের উপর রাখলাম
“দেখছি, আপনি প্রস্তুত হয়েই এসেছেন”? সেবিকাটি বলল।
“কম-বেশি… এক ছদ্ম হাসিতে আমি উত্তর দিলাম।
এরপর আমি তার সাথে আলোচনা করি, ভবিষ্যৎ চিকিৎসার জন্য বাড়ির কাছের এক হাসপাতাল পছন্দ করি।
যেহেতু আমার কোন গাড়ী ছিল না, আমি এমন একটা জায়গা পছন্দ করি, সাধারণ পরিবহণের মাধ্যমে সেখানে যাওয়া যাবে।
যেহেতু এখন থেকে সব সময় সেখানে যেতে হবে সেহেতু যাতায়াতের সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ।
কাজে আমি জেনে নিলাম কি ভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সাক্ষাৎ করতে হবে এবং ডাক্তারের নাম এবং এ সম্বন্ধে আরো কিছু।
যখন আমরা এই আলাপ করছিল সে সময় সেবিকাটি অষ্পষ্ট স্বরে বলে উঠল “আপনার কি এই ব্যাপারে কোন অনুভূতি আছে”।
আমি কিছুক্ষণ পরে উত্তর দিলাম
“অনুভূতি?… হুম, হ্যাঁ.. আমার তা ছিল, আমি মনের করি তা অবশ্যই ছিল”
যখন আমি বের হয়ে আসলাম, তখন বৃষ্টি পড়ছিল।
রানা ২৬ বছরের এক যুবতী, সে তার অনুভূতি ব্যক্ত করছে, যখন সে সিদ্ধান্ত নিল যে সে তার বন্ধু ও পরিবারকে তার অবস্থা সম্বন্ধে জানাবে।
আমি আমার পরিবারের সদস্যদের বললাম না যে আমি অসুস্থ।
আমি তাদের জন্য দু:খ অনুভব করলাম, তাই আমি তাদের জানালাম না।
আমি আসলেই পরিবারের এক অবাধ্য সন্তান।
আমি ভাবলাম এটাই সবচেয়ে ভালো হবে যদি তারা বিষয়টি সম্বন্ধে না জানে।
অবশ্যই, এটা এমন এক অসুখ যা আমার একার পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না, তাই আমি আমার সবচেয়ে সেরা বন্ধুটিদের বললাম।
যেহেতু আমি চাইছিলাম, তারা আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করুক এবং কারণ আমি তাদের বোঝাতে চাইছিলাম এইচআইভি পজিটিভ মানে কি।
যতদিন পর্যন্ত না আমি আক্রান্ত হয়েছিলাম তার আগ পর্যন্ত আমি আমার বন্ধুদের সাথে এইচআইভি নিয়ে কোন কথা বলি নি।
যদিও তারা আমার ভালো বন্ধু কিন্তু আমার ধারণা ছিল না তারা এইচআইভি সম্বন্ধে কি ধারণা পোষণ করে।
এ কারণে আমি তাদের এই বিষয়টি জানাতে ভয় পাচ্ছিলাম।
এরপর যদি তারা আমাকে উপেক্ষা করে তা হলে আমি কি করবো?
তারা কি এর পরও আমার বন্ধু থাকবে?
এই ভাবনা গুলোকে আমি এড়াতে পারি নি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেউ আমাকে বাতিল করে দেয় নি।
এটা ছিল অবিশ্বাস্য এক বিষয়
এই ঘটনার পর আমি বুঝতে পারলাম যে আমার বন্ধুরা ছিল সত্যিকারের বন্ধু।
এ ভাবেই, এ রকম ঘটনার সময় আপনি বুঝতে পারবেন যে বন্ধুত্ব সত্যিকারের কিনা!
প্রথম বার, যখন আমি এইচআইভির কথা বলি সে সময় এক ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।
একজন ইতোমধ্যে তার বাবামার সাথে এই পরীক্ষা করে এসেছিল, অন্য আরেকজন এই সমস্যা নিয়ে সচেতন ছিল না। আরেকজন পরীক্ষা করতে গিয়েছিল এবং এর ফলাফল পেয়েছিল, কিন্তু ভয় পেয়েছিল….
এখন আমি জানি আমি এইচআইভি পজেটিভ, তারা এখন এই সমস্যার ব্যাপারে অনেক সচেতন এবং তারা আমার স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন।
আমি বাজে অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হয়েছি।
এক পুরুষ জানত না যে আমি এইচআইভি পজেটিভ,
একবার যখন এইচআইভি নামক বিষয়টি আলোচনায় এলো, এক বিকৃত মুখে সে বললো, এমনকি, এই রোগে আক্রান্ত কেউ আমার পাশে বসে থাকলেও আমি নিজে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছি অনুভব করি।
আমি এতটাই ধাক্কা খেয়েছিলাম যে একটা কথাও বলতে পারলাম না।
পৃথিবীতে সম্ভবত এরকম অনেক লোক রয়েছে যারা এই ভাবে চিন্তা করে।
আমার সবচেয়ে বড় আশা যে একটা বিশাল সচেতনতা এই সমস্ত লোকগুলোর চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবে।
সম্ভবত এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রথম যে জাপানী ব্লগার অনলাইনে ডাইরী লিখেছিল, তার নাম এইজু, তার বয়স ছিল ২৩ বছর। সে এক পতিতা যে, ২০০৬ সালে কিছু লিখে রাখে, তার শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যাবার আগেই। তার এক বন্ধু তার পোষ্ট আপডেট বা সব সময় তাজা রাখত [জাপানী ভাষায়] এইজুর পাঠকদের জন্য, তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এবং সেই সমস্ত শব্দ ওয়েবে এখনো রয়ে গেছে।