ভারতীয় নির্বাচন ২০০৯: অপরাধী আর ভোট

যদি নির্বাচনকে এমন প্রক্রিয়া হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে এর মাধ্যমে দেশের জন্য ভালো নেতা নির্বাচিত করা হয়, তাহলে ভারতে চলতে থাকা নির্বাচন একটু আলাদা ধরনের।

বেশ কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী, গ্যাং সদস্য যাদের দীর্ঘ অপরাধের তালিকা আছে আর দূর্ধর্ষ অপরাধের অভিযোগ থাকা নেতা (হত্যা, হত্যার চেষ্টা, সশস্ত্র ডাকাতি)- সকল দিক থেকেই দুর্বৃত্ত এমন প্রার্থীরা মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাচ্ছে।

আব্দুল্লাহ খান বলেছেন, ”মহান ভারতীয় গনতন্ত্রের জন্য এই রাজনীতিবিদ আর অপরাধীদের সংঘ অশুভ।” তিনি অপরাধী থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া লোকের একটা তালিকা দিয়েছেন, যাদের বেশীরভাগ উত্তর প্রদেশ আর বিহারের ঝামেলাপূর্ণ এলাকা থেকে এসেছেন:

“কেবলমাত্র ইউপিতে, অপরাধী রেকর্ডসহ বিএসপির প্রার্থী হলেন ধনঞ্জয় সিংহ (জাওনপুর), অরুনা কুমার শুক্লা ‘আন্না’ (উন্নাও), ডি পি ইয়াদভ (বাদাউন), কাদির রানা ( মুজাফফরনগর), রাকেশ পান্ডে (আম্বেদকর নগর), রিজোয়ান জহির (শ্রাবস্তি), ইত্যাদি।

সমাজবাদী দলের প্রার্থীর মধ্যে আছেন গোন্ডা থেকে ব্রিজ ভুশান সিংহ, ফতেহপুর থেকে রাকেশ সাচ্চান, ও পি গুপ্তা ডাউরহারা থেকে, ফাইজাবাদ থেকে মিত্রা সেন ইয়াদভ, ঐতিহাসিক মুখতার আন্সারী (ভারানসী) আর বাল কুমার (দাদুয়া ডাকাতে ভাই)। মির্জাপুর থেকে উদিত রাজের ভারতীয় জাস্টিস পার্টির টিকিটে লড়ছেন ভূতপূর্ব ডাকাত সীমা পারিহার।

মহারাষ্ট্রতে, গুন্ডা থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া অরুন গাওলি লোক সভা নির্বাচনে উত্তর মধ্য মুম্বাই সংসদের এলাকা থেকে প্রতিদন্ধিতা করছেন। পশ্চিম বঙ্গে, ‘বহুবলি’ অধির রঙ্গন চৌধুরি প্রতিদন্দ্বীতায় আছেন বেহরাম্পুর থেকে কংগ্রেসের টিকিটে। বিহারে জেডি (ইউ) লোক সভা টিকিট দিয়েছে বিজয় কুমার শুক্লা বা মুন্নাকে (অপরাধী থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া)। লোক জনশক্তি দলও টিকিট দিয়েছে কথিত অপরাধী রামা সিংকে যিনি আরাতে অনেক অপরাধের কেসে অভিযুক্ত।”

অপরাধী থেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার তালিকা অনেক লম্বা, আর রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে গুরুতর অপরাধীকে গ্রহন করে উৎসাহিত করার। অভিনাশ নারুলা বলেছেন যে অপরাধী রাজনীতিবিদদের বাদ দেয়া সহজ না কারন তাদের আর ক্ষমতার চক্রের মধ্যে ‘সহযোগীতা'। তিনি বলেছেন যে টাইমস অফ ইন্ডিয়া দ্বারা চালিত ‘লিড ইন্ডিয়া’ প্রচারণা সফল হবে না কারন:

“বেশীরভাগ রাজনীতিবিদের কোন বিচার হবে না কয়েকটা কারনে। রাজনীতিবিদ, পুলিশ আর অপরাধীর একটা জোট আছে। এর উপরে আদালতের অনেক বছর লাগে সিদ্ধান্ত নিতে যার ফলে অপরাধীদের পক্ষে সম্ভব হয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গুন্ডাগিরি করে জেতা।

আপনার কি মনে হয় লিড ইন্ডিয়া প্রচারণা রাজনীতিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ফল দেবে? আমার মনে হয় না।

প্রথমত, কোন বড় রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বা ম্যানিফেস্টোতে অপরাধীদের রাজনীতি থেকে বের করার ব্যাপারটা নেই। তারা ভুলে যান রাজনীতি থেকে অপরাধীদের বের করার কথা, তারা দূর্নীতি নিয়েও কিছু বলছেন না।

দ্বিতীয়ত, আমাদের আইনের পরিবর্তন দরকার কিন্তু এটাও রাজনীতিবিদ ছাড়া করা যাবে না।

তৃতীয়ত, আমাদের আইনী প্রক্রিয়া আরো দ্রুত করা দরকার যেটাও আমরা করতে পারি না।”

হিন্দুদের পবিত্র শহর ভারানাসীতে নির্বাচনের প্রতিদন্দ্বীতা চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্টের মতো লাগছে। হত্যার জন্য দায়ী করা এক ব্যক্তিকে (যিনি মুসলমান) দলের প্রাচীন নেতার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে যিনি পরিচিত কট্টর হিন্দু হিসাবে। বিজেপির নেতা মুরলি মনোহার জোশী মুখতার আন্সারীর বিরুদ্ধে লড়বেন যিনি হত্যার জন্য অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে জেলে আছেন। আন্সারি বহুজন সমাজ দলের (বিএসপি) প্রার্থী।

নাগরিকরা কদমাক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে আতঙ্কিত বাণী পাঠাচ্ছেন কেবলমাত্র ব্লগ দিয়েই না বরং ভিডিও দিয়েও। ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও আছে নাগরিকদের অনুরোধ করে অপরাধীদের নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে না গ্রহন করতে।

নো ক্রিমিনালস (কোন অপরাধী না) নামক এই ভিডিওতে তরুণরা নাগরিকদের অনুরোধ করছেন অপরাধীদের ভোট না দেয়ার জন্য। হিন্দিতে এর কিছু অংশ আছে, যেখানে মানুষ রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলে, অপরাধীদের সাথে না। আরো মজার হলো স্লাইডে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দেখানো হচ্ছে।

নো ক্রিমিনালস হিন্দি নামে এই ভিডিও হিন্দিতে একই ধরনের বার্তা দিচ্ছে।

এই পোস্টটি ভারতের নির্বাচন (২০০৯) নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস বিশেষ কাভারেজ পাতার একটি অংশ

Exit mobile version