ভারত: ‘যোগব্যায়াম চুরি’ রোধে ব্যবস্থা

ভারত একদল গবেষক আর বিজ্ঞানীর দলকে নিয়োগ করেছে যারা সে দেশের সকল প্রাচীন যোগব্যায়ামের আসন খুঁজে নথীভুক্ত করবে যাতে অন্য দেশের লোক এই জ্ঞান নিজেদের আবিস্কার হিসেবে পেটেন্ট না করে নেয়।

ভারতের প্রাচীন গ্রন্থে লেখা এই সব যোগব্যায়ামের আসন আর নিয়মের পেটেন্টকে নিজের দাবী করে কপিরাইট বা পেটেন্ট করাকে কেউ কেউ যোগব্যায়ামের চুরি বলছে। উদাহরণস্বরুপ, দ্যা টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদন অনুসারে শুধুমাত্র আমেরিকাতে আছে ১৩০টির বেশী যোগব্যায়াম সম্পর্কিত পেটেন্ট, ১৫০টি কপিরাইট আর ২৩০০টি ট্রেডমার্ক।

এর উত্তরে, ভারতীয় সরকার প্রাচীন গ্রন্থ দেখা শুরু করেছে আর সমস্ত যোগব্যায়ামের আসন নথীভুক্ত করছে। এইসব ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের তথ্য একটি ডিজিটাল লাইব্রেরিতে রাখা হচ্ছে। এটি ভারতের ঐতিহ্যবাহী ঔষধের একটি ইলেক্ট্রোনিক এন্সাইক্লোপিডিয়া যা বিশ্বব্যাপী পেটেন্ট অফিস দেখতে পাবে। অমিত আগারওয়াল ব্যাখ্যা করেছেন:

“পশ্চিমের যোগব্যায়াম গুরুরা যে হারে প্রাচীন আসনের কপিরাইট দাবী করছে তাতে আতঙ্কিত হয়ে ভারত সরকার প্রতিকারে নেমেছে।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য মন্ত্রানলয় বৈজ্ঞানিক ও বানিজ্যিক গবেষণা কাউন্সিল থেকে (সিএসআইআর) ২০০জন গবেষকের একটি দল ঠিক করেছে যাতে তারা সকল জানা যোগব্যায়াম এর আসন আর নিয়ম বিশাল একটা ডাটাবেইজে নথীভুক্ত করতে পারে। এই ডাটাবেইজের নাম ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের ডিজিটাল লাইব্রেরি (টিকেডিএল)।

ভারত সরকার আশা করছে যে ভবিষ্যৎে যোগব্যায়াম পেটেন্ট এর জন্য আবেদন করলে তা টিকেডিএল এ প্রাপ্ত ‘পূর্বের শিল্প‘ এর তথ্যের ভিত্তিতে নাকচ করে দেয়া হবে।”

এই পর্যন্ত ৬০০টি আসন ডাটাবেইজে সন্নিবেশিত করা হয়েছে, আর এই দল পরিকল্পণা করছে অন্তত ১৫০০টি যোগব্যায়াম এর আসন এই বছরের শেষের মধ্যে নথীভুক্ত করতে। অনেকে এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। যেমন, মারাঠি ভেদিক টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটা প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন:

“ আমি এই পদক্ষেপকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি…আমাদেরকে আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে যা পশ্চিমাদের হামলার শিকার শুধুমাত্র পেটেন্ট কাজেই না বরং ধর্মপ্রচারকদের কাজেও… জেগে ওঠেন ভেদরা!!! এটা আমাদের দেশ !!! আমাদের সংস্কৃতি আমরা না করলে কে রক্ষা করবে???”

স্বামী পারাম, ইয়োগাডার্ক এর একটা পোস্টের উপরে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন:

“অনেক হিন্দু এখন বুঝতে শুরু করেছেন যে তারা হিন্দু/ যোগব্যায়াম যাদের শেখাচ্ছিল তারা এই উপহার পেয়ে, আসলে সেটা চুরি করবে। বর্তমান সমগ্র নকল যোগব্যায়াম এর আন্দোলন হচ্ছে যোগব্যায়ামের সাথে হিন্দুদের সম্পর্ককে মুছে ফেলার সম্মিলিত চেষ্টা। অবশ্য সামান্য জ্ঞান থাকা যে কেউ বুঝতে পারবে যে সকল আসল যোগব্যায়াম হিন্দুবাদ থেকে এসেছে। এখন সময় হয়েছে এই চুরি, অপব্যাখ্যা আর ‘যোগব্যায়াম’ এর বানিজ্যিকরণ বন্ধ করা।

যোগব্যায়াম ব্যবসা হিসাবে ধারণাটি সামনে এসেছিল যখন বিক্রম চৌধুরীকে একটা কপিরাইট আর ট্রেডমার্ক দেয়া হয় আর তিনি পেটেন্ট এর জন্য আবেদন করেন তার প্রতিষ্ঠিত একটা যোগব্যায়ামের ধরনের জন্য। বিক্রম যোগব্যায়াম (বা গরম যোগব্যায়াম) নামে এতে ২৬টা আসন আছে যা একটা স্টিম কামরায় করা হয়। গোপিকা কাউল, স্পট-অন এ ব্যাখ্যা করেছেন চৌধুরির অনুপ্রেরণার ব্যাপারে:

“পাঁচ হাজার বছর আগে হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থে প্রথম ব্যাখ্যা করা হয়েছে যোগব্যায়াম এর অভ্যাসের কথা আর হিন্দু সাধুরা এই শিল্প কয়েক শতক ধরে অভ্যাস করছেন…গুরুবৃন্দ, সঙ্গত কারনে যোগব্যায়ামকে ভারতীয় ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে দেখেন যা জনপ্রিয় করা হয়েছে এবং কিছুটা দূর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব দ্বারা। বিক্রম এত চিন্তিত কেন তার দাবী প্রতিষ্ঠা করায়? যোগব্যায়ামের ভাবমূর্তি পরিবর্তিত হয়েছে- আংশিক ধর্মীয় জিনিশ- এখন মাল্টিবিলিয়ন ডলার এর শিল্পে পরিণত হয়েছে।”

ইয়োগা জার্নাল অনুসারে আমেরিকায় যোগব্যায়াম শিল্প থেকে বছরে ৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়, যার মধ্যে যোগব্যায়ামের ক্লাস আর অনুশীলনে ব্যবহৃত জিনিষ আছে। কিছু মানুষ অবশ্য যোগব্যায়াম থেকে টাকা উপার্জনের ধারণা নিয়েই প্রশ্ন করেন, যদিও গেরিলা মামা মেডিসিন বলেছেন:

“আমি প্রায় প্রশ্ন করেছি যোগব্যায়াম শিক্ষা দিয়ে পয়সা উপার্জনের সাংস্কৃতিক সহযোগীতার ব্যাপারে। এই বাস্তবতা যে আমরা কলা আর বিজ্ঞান শিক্ষা দেই যার ছাড় আমাদের কাছে আছে আমাদের আমেরিকার অর্থনৈতিক ও সামরিক অবিশ্বাস্য সুবিধার কারনে।

এইসব যোগব্যায়াম শিক্ষকের বিবেক কোথায়? কেমন করে আপনি এটাকে যোগব্যায়াম বলবেন আর দাবী করবেন যে আপনি এই বিশেষভাবে বেঁকে দাঁড়িয়ে আপনার পায়ের পাতা ছোঁয়ার কথা চিন্তা করেছেন? আপনি যদি এটাকে যোগব্যায়াম বলেন (যেটা সস্কৃত শব্দ) আপনি যে কোন ধরনের পেটেন্টের অধিকার হারিয়েছেন। ভারতের কেউ যে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করেনি তাদের সাংস্কৃতিক জ্ঞান যোগব্যায়াম চুরি করার জন্য তার কারন এটা সম্মিলিত জ্ঞান। সব থেকে ভালো আমরা যা করছি তা হলো স্বল্প সময়ের জন্য এই জ্ঞানকে ধার নেয়া। আর পরে তা ফেরত নেয়া।”

তবে ইয়োমাম্মা, গুরুফিলিয়াক এর একটি পোস্টের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন যে শুধুমাত্র পশ্চিমের মানুষ যে যোগব্যায়াম থেকে লাভবান হচ্ছে তা না:

“শুধু পশ্চিমাদের ব্যাপারে অভিযোগ করার এই পুরো ব্যাপারটি বিরক্তিকর, কতো ভারতীয় এখানে এসেছে কারন তাদের যা আছে তা আমরা কিনবো, তাদের শিল্প আর আধ্যাতিকতাকে সমর্থন করবো, চাকরি দেব, ইত্যাদি… তাই আমার মনে হয় পুর্ব আর পশ্চিমের খারাপ দিকের থেকে ভালো দিক অনেক বেশী …

আমি যতো যোগব্যায়ামের শিক্ষক চিনি তারা তাদের শিক্ষক আর পুর্বসূরীদের স্বীকার করে, তারা ভান করেনা যে তারা কিছু আবিষ্কার করেছে, কিছু ক্ষেত্রে তারা ভালোভাবে আছে, কিন্তু সেটা মূলত: কঠর পরিশ্রম আর একনিষ্ঠতার কারনে। জনপ্রিয় করা শুরু হয় পশ্চিমে, অনেক এমন শিল্প না হলে লুপ্ত হয়ে যেত বা তারা এখন যে পরিমানে কদর পায় তা হতো না। এটা সত্ত্বেও আমি এই আন্দোলনের বিরোধীতা করছি না। সঠিক ইতিহাস খুঁজে নিয়ে রক্ষা করা সম্ভবত ভালো চিন্তা।”

সুর্যাস্তের সময় যোগাসন চিত্রটি মহেশ খান্নার, ফ্লিকার থেকে নেয়া।

Exit mobile version