বাংলাদেশ: ইউটিউব আর ফাইল শেয়ারিং সাইটগুলো ব্লক করা হয়েছে

শুক্রবার (মার্চ ৬, ২০০৯) সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ইউটিউব সাইটটিতে ঢুকতে পারছেন না। তারপরেই দেখা গেল যে অন্যান্য সামাজিক মিডিয়া আর ফাইল শেয়ারিং সাইট যেমন ইস্নিপ্স, মিডিয়াফায়ার ইত্যাদিও দেখা যাচ্ছে না। বোঝা যাচ্ছে এগুলো আইআইজিতে (আর্ন্তজাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে) ব্লক করা হয়েছে ফায়ারওয়াল দিয়ে কারন দেখা যাচ্ছে এগুলোতে প্রক্সির মাধ্যমে ঢোকা যায়।

তর্পন বাংলাদেশ সরকারের কাছে ইন্টারনেটের স্বাধীনতা না কেড়ে নেয়ার আবেদন করেছেন। তিনি ফিল্টারিং এর কিছু প্রমান দিয়েছেন:

ঢাকায় ইউটিউবে ঢুকতে গিয়ে টাইম আউট হয়ে যাচ্ছিল দেখে অনেকে ভাবছিলেন যে ইউটিউবের সার্ভারের সমস্যা । এরপর দেখা যাচ্ছিল যে ইস্নিপস্ এও ঢোকা যাচ্ছে না । তখন সন্দেহ করা হলো যে সমস্যাটি অন্য কোন খানে । কোথাও ডেটা ব্লক হয়ে যাচ্ছে । প্রমাণ ছাড়া সরকার কে দোষ দেয়াটা অযৌক্তিক । কিন্তু অল্প কিছু সময়ের মধ্যে অভিজ্ঞ বাংলাদেশী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন জায়গা থেকে জানালেন সরকারী কোন সার্ভারের ফায়ারওয়ালে ইউটিউব সহ অনেক গুলো সাইট ব্লক করা হয়েছে।


স্ক্রীনশট তর্পনের সৌজন্যে

বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার গ্রুপের সার্ভার থেকে গুগল, ইউটিউব এবং ইস্নিপসের সাইটে ট্রেসরাউট কমান্ড দিয়ে দেখা গেছে, গুগল ঠিকই পৌছে যাচ্ছে গুগলের সার্ভারে কিন্তু বাকি দুটো আটকে গেছে বিটিটিবির ফায়ার ওয়ালে।

ম্যাঙ্গো আর বিটিসিএল (পূর্বের বিটিটিবি) হচ্ছে বাংলাদেশের অফিসিয়াল আইআইজি (আর্ন্তজাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে)। গত এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে, নিয়ম অনুসারে, সকল বাংলাদেশী আইএসপি তাদের আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট এক্সেস পথ ঠিক করবে ম্যাঙ্গো বা বিটিসিএল এর মাধ্যমে, যারা ট্রাফিক পাঠায় ভিস্যাট বা সাবমেরিন কেবল এর মাধ্যমে।

ইউটিউবের নিষেধাজ্ঞার খবর সমর্থন করেছে বাংলা সংবাদপত্র প্রথম আলো। টুইটার ব্যবহারকারী মাহে আলম খানও অন্যান্য সাইটের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানিয়েছেন:

মাহেআলমখান: ইউটিউব, ইস্নিপ্স, মিডিয়াফায়ার, ফাইলফ্রিক, আপ্লোড- এম্পি৩ নিষিদ্ধ বা ব্লক করা হয়েছে বাংলাদেশে। দয়া করে রি-টুইট করেন।

রাসেল জন চিন্তা করছেন কেন এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে:

সরকার কেন এটা করলো? এটা একটা অডিও রেকর্ডিং এর জন্য যা আমাদের মহান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তিকে হয়ত খর্ব করতে পারে। এখনের মতো তারা ইউটিউব আর ইস্নিপ্স ব্লক করেছে, কিন্তু ভবিষতে আরো সাইটও করতে পারে। হয়তো ফেসবুক? মানুষ তো ওখানে অনেক কিছু প্রচার করে।

সাম্প্রতিক বিডিআর বিদ্রোহ আর সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পরে ঢাকাতে প্রধানমন্ত্রী শোকাহত সেনা কর্মকর্তাদের সাথে সেনাকুঞ্জে একটা গোপন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেন যেখানে সংবাদ মাধ্যম বা বাইরের কারো প্রবেশাধিকার ছিলনা। মিটিং এর কথপোকথন মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা হয় ও তা বাইরে বেরিয়ে যায়। একে ইউটিউব আর ইস্নিপ্স সহ বিভিন্ন ফাইল শেয়ারিং সাইট সাইটে আপলোড করে প্রকাশ করা হয়। আনহার্ড ভয়েস ব্লগ বেরিয়ে যাওয়া অডিও ফাইলের ব্যাপারটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। এটাকে কিছু লোক ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য আর সেনা ও প্রধানমন্ত্রীকে ছোট করার জন্য।

ডার্ক ওশান নিডস আ লাইটহাউস বলেছেন:

বাংলাদেশ সরকার যদি মনে করেন যে ইন্টারনেট সেবা মোবাইল ফোন সেবার মতো তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। অনেক ভাবে মানুষ ব্লক করা সাইট দেখতে পারে। এই ক্ষেত্রে যে কেউ অ্যানোনিমাস প্রক্সি ব্যবহার করে ফায়ারওয়াল ডিঙ্গাতে পারে!!

ইউটিউব, ইস্নিপ্স ইত্যাদি খুব সাধারণ আর দরকারী সার্ভিস। যদি বাংলাদেশ সরকার বিশেষ কোন অডিও বা ভিডিও আমাদের সমাজের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন তারা সরাসরি ইউটিউবকে অনুরোধ করতে পারে তা সরিয়ে দেওয়ার জন্য। এই ধরনের ব্লক করা বোকামিই শুধু না সরকারের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্নও ওঠে।

কিছু ব্লগার যেমন কায়েস মাহমুদ বিভিন্ন প্রক্সি লিঙ্ক দিচ্ছেন যাতে অন্যরা ব্লক করা সাইটগুলোতে ঢুকতে পারে। রাজন সান জানিয়েছেন যে সেনাকুঞ্জে বৈঠকের কথোপকথন এরই মধ্যে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তাই ইন্টারনেট ব্লক করার পিছনে আসলে কোন যুক্তি নেই। এখানে বলা ভালো যে বাংলাদেশের বাইরের বাংলাদেশীরা সহজেই এই জিনিষগুলো দেখতে পারছেন, যা ডাউনলোড করে ইমেইলের মাধ্যমে অনায়াসেই পাঠানো যায়।

সুশান্ত বলেছেন:

প্রচারণা বন্ধ করার আগে দেখেন কিভাবে এটা রেকর্ড হলো? প্রথমে কোন সাইটে এটা আপ্লোড হয়েছে। সেনাকুঞ্জের সভার ভিডিও টা দেখেন ভালো করে কোন সেনা কর্মকর্তা মোবাইল হাতে চুপেচাপে রেকর্ডিং করছে। এটা ধরা তেমন কঠিন কাজ না।

রাসেল তার অস্থিরতা প্রকাশ করেছেন:

যা অদ্ভুত তা হচ্ছে এই সরকারী “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর কথা বলে সবসময়ে। আমরা এখন জানি ডিজিটাল বাংলাদেশ কেমন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে ইউটিউব আর অন্যান্য ফাইল শেয়ারিং সাইটকে বাংলাদেশে আবার উন্মুক্ত করা যায়। আমরা আগেও দেখেছি যে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেন না যে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছিল আর দোষ চাপানো হয় কারিগরি ত্রুটির উপরে। ‘অবাধ তথ্য প্রবাহ অধিকার আইন’ এর অভাবে একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষে এটা কঠিন জিজ্ঞাসা করা যে কেন এমন করা হয়েছিল। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ সকল সাইট খুলে দেবেন সমালোচনা বন্ধ করতে আর সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধ করার জন্য।

Exit mobile version