মধ্যপ্রাচ্যে কার্টার কি করছেন?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার মিশরের রাজধানী কায়রোতে ফিলিস্তিনের হামাস নেতার সাথে কথোপকথন সবেমাত্র শেষ করলেন। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী এই সাক্ষাৎকে হালকা প্রতিপন্ন করার জন্য আলোচনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করলেও এই অঞ্চলের ব্লগাররা তা প্রত্যাখান করেছে।

কাবাবফেস্ট
ব্লগের উইল বিদ্রূপ করে লিখেছেনঃ

বহু বছর যাবত উত্থাপিত ফিলিস্তীনের নির্বাচনের দাবী অস্বীকার করার যুক্তরাষ্ট্রীয়/ইসরাইলী নীতির বিরুদ্ধাচারণ হিসাবে পরিগণিত করা যায় এই সাক্ষাৎকে। গাজার নিয়ন্ত্রণাধীণ অর্ধেক ফিলিস্তীনীদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে শান্তি-প্রচেষ্টা এগিয়ে নেবার উজ্জ্বল দৃষ্টিভঙ্গিতে ছোট একটা ফাটল ধরিয়েছে।

উইল বলেনঃ

এই উন্মত্ত সাবেক নোবেল বিজয়ী এর পরে কি পরামর্শ দেবেন? আমরা সিরিয়া ও ইরানকে আঞ্চলিক শান্তি আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করবো? হা!

মধ্যপ্রাচ্যে কার্টারের ভ্রমণ নিয়ে দি সুদানিজ থিঙ্কার লিখেছেঃ

….ভাল অভিপ্রায়ে শুরু হলেও তিনি যাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন তাদের “অতি ধার্মিক ও সমঝোতাহীন” মানসিকতার জন্য তা অর্জিত হয়নি। এই ভাল অভিপ্রায়ের দিকে জোড় দিতে হচ্ছে যেহেতু আমি মনে করি জিমিকে একজন মন্দ বা এন্টি-সেমেটিক রূপে চিত্রিত করা যায় না। তার কুখ্যাত বইয়ের শিরোনামটি ক্ষুব্ধ করে বোঝা যায়, কিন্তু সেজন্য তার বিরুদ্ধে যা বলা হয় তা সত্যি প্রমানিত হয় না। সর্বোপরি কার্টার হচ্ছেন মিশর ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি চুক্তির সমঝোতাকারী।

তিনি আরো যোগ করেনঃ

আমি মনে করি না হামাসকে কার্টার আল-কায়েদা তুল্য শক্র মনে করে। হামাস একটি ডানপন্থী ধর্মীয় উগ্রবাদী দল যারা “ইসলামের ভূমি” পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত। তবে কমপক্ষে চেষ্টা চালাবার জন্য জিমিকে কৃতিত্ব দেওয়া যায়। সে হয়তো গিলাদ সালিটকে ছেড়ে দিতে হামাসকে রাজী করাতে সমর্থ হবে।

ইসরাইল থেকে অসি ডেব লিখেছেনঃ

বোকার হদ্দ ও জরাজীর্ণ জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিও বটে। ফলে ইসরাইলের ধ্বংসের জন্য নিবেদিত একটা সন্ত্রাসী দলের সাথে সে যখন সাক্ষাৎ-এর সিদ্ধান্ত নেয়, উদ্দিষ্ট দলটি নিজেদের কার্যক্রমের বৈধতা অর্জন মনে করে।

তিনি এই বলে শেষ করেনঃ

সিমোন পেরেসের সাথে এ বিষয়ে আমি একমত। কার্টার ইসরাইল এবং শান্তি প্রচেষ্টার মস্ত ক্ষতি করেছেন এবং অব্যাহতভাবে করেই যাচ্ছেন।


রাব্বি ইয়োহানা
অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে পরীক্ষা করে দেখছেন তিব্বত ও দারফুরের ব্যাপারে কার্টারের সঠিক অবস্থান। মধ্যপ্রাচ্যের তার আগ্রহের দিকে আলোকপাত করে ব্যাখ্যা করছেনঃ

আজ কার্টার ইসরাইলে ঘোরাঘুরি করছেন, দেরট পরিদর্শন করেছেন কিন্তু ইসরাইলী নেতারা তাকে অবজ্ঞা করছে, সিন বেট তাকে উপেক্ষা করছে। প্রায় ত্রিশ বছর আগে মিশরের সাথে শান্তিচুক্তির সময় যে সুনাম তৈরী হয়েছিল তা মুছে গেছে। ইসরাইলীদের একটা মাত্র পরামর্শ আমার দেয়ার আছে – কিছু দক্ষিণা দাও। মাত্র পঞ্চাশ লাখে এ বিষয়ে কার্টার হয়তো তার দৃষ্টিভঙ্গি পুনবিবেচনা করতে রাজি হবেন। এতে তার নতুন একটা উপলব্ধি সংগঠিত হতে পারে এবং হয়তো তিনি ইসরাইলের জন্য একজন মৈত্রীর চেয়েও বেশী কিছু হয়ে যাবেন। শালেম সেন্টার থেকে একজন ভুতুরে লেখকও মিলতে পারে একত্রে একটা নতুন বই লেখার জন্য।

পিরকেই আভোট-এ যেমন বলা হয়েছে “নিজের জন্য একজন্য বন্ধু অর্জন করো”। জিমি কার্টারকে অবজ্ঞা না করে কিছু বখশীশ দিয়ে সহায়তা করলে তা ইসরাইলের জন্য অনেক মঙ্গল বয়ে আনবে।

এরপরে ইসরাইল থেকে বাতওয়া কার্টারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন এবং বলেছেনঃ

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকৃত লেন্সের ভেতর দিয়ে বিশ্ব দেখেন। হ্যা, তার সন্বন্ধে খুব ভালভাবে আমি এই বলতে পারি। সবকিছুর জন্য সে ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে।

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কার্টার এরপরেও তাকে সমর্থন দেয়ার জন্য একজন নতুন ভক্ত সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছেন। মিশরীয় ব্লগার জেইনোবিয়া জানান কার্টারকে তিনি কি পরিমাণ ভালবাসেনঃ

সত্যিই আমি একই মানুষটিক অনেক বেশী পছন্দ করি। শান্তি আলোচনার সঠিক অর্থ জানে তেমন গুটিকতেক মানুষের মধ্যে তিনি পড়েন। নিরীহ দৃষ্টিভঙ্গীতে শান্তি আলোচনার আসল অর্থ যা বুঝি তা হলো যুদ্ধ বা বিরোধে জড়িত সবগুলো পক্ষ এমনকি ভয়ংকর হলেও তাদের সাথে বসা এবং সমাঝোতায় পৌছানোর জন্য সবপক্ষের কথা শোনা।

আমেরিকা, ইসরাইল অথবা মিশরীয় প্রচারমাধ্যম যা বলে থাকে তা উপেক্ষা করে মধ্যপ্রাচ্যের বিরোধের প্রথমসাড়ির দলগুলি যেমন হামাস বা সিরিয়ার সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের মত সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য তাকে আমি সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধা করি। যদি মধ্যপ্রাচ্যে সবার মঙ্গলের জন্য সত্যিই পক্ষপাতহীন শান্তি চাই আমরা তবে তাই করা উচিত।

** এই নিবন্ধটি ভয়েসেস উইদাউট ভোটসেও প্রকাশিত হয়েছে।

Exit mobile version